স্পোর্টস ডেস্ক: তামিমের কাছে হেরে গেলেন বিরাট কোহলি! ঘটনাটি আসলে কী? তাহলে চলুন বিস্তারিত ব্যাপারটা একটু ঘেঁটে দেখি। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারনে সকল ধরনের ক্রিকেট আপাতত বন্ধ। আইসিসিও তাদের বিভিন্ন বাছাইপর্বের খেলা আগামী জুন মাস পর্যন্ত বন্ধ রেখেছে। লম্বা সময় ক্রিকেট ভক্তদের জন্য থাকছেনা কোনো ক্রিকেট। এই বিশাল ক্রিকেট বিরতিতে চলুন দেখে নেওয়া যাক বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের পুরনো কিছু সাফল্য ও ম্যাচের কথা। আজকে জেনে নেওয়া যাক এশিয়ার বাইরে গত দশকে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স কেমন ছিলো অন্য ব্যাটসম্যানদের তুলনায়।
এশিয়ার দলগুলোর জন্য টেস্টে এশিয়ার বাইরে সাফল্য পাওয়া যেনো হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো ব্যাপার। বেশিরভাগ সময় এশিয়ার দলের ব্যাটসম্যানরা এশিয়ার বাইরের বড় দেশ গুলোতে টেস্টে দাড়াতেই পারেনা। এশিয়ার বাইরে বলতে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকাতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ে এশিয়ার বাইরে হলেও এই দশকে সেই সব জায়গায় এশিয়ার ব্যাটসম্যানরা টেস্টে তেমন একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হননি। তাই এশিয়ার বাইরে মূলত চার বড় দলগুলোকে বিবেচনা করেই পরিসংখ্যান দেখা হয়।
বর্তমানে টেস্টের এক নম্বর দল ভারত। ঘরের মাটিতে রানের পাহাড় ও শতকের বন্যা বইয়ে দেওয়ার পরও কিছুদিন আগে নিউজিল্যান্ডে শেষ হওয়া টেস্ট সিরিজে রান খড়ায় ভুগেছেন ভারতের সকল ব্যাটসম্যান। একই দশা ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় সাফল্য পাওয়া বিরাট কোহলিরও। পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরাও এই সব জায়গায় খুব একটা ধারাবাহিক সফলতা পাননা। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। গত এক দশকে তাহলে এশিয়ার বাইরে টেস্ট খেলার জন্য এশিয়া একাদশ গড়লে কারা জায়গা পাবেন? কোন ব্যাটসম্যানদের রেকর্ড এই জায়গায় ভালো?
সেই উত্তর লুকিয়ে আছে পরিসংখ্যানে। গত এক দশকে অর্থাৎ ২০১০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে কিছুদিন আগে শেষ হওয়া ভারত নিউজিল্যান্ড টেস্ট সিরিজ পর্যন্ত এই চার দেশে টেস্টে কমপক্ষে ৫০০ রান করা খেলোয়াড়দের মাঝে সবচাইতে বেশি গড় কার? এই তালিকায় এগিয়ে থাকা প্রথম দুইজনের নাম দেখলে চমকে উঠার কথা অনেকের। প্রথম স্থানে আছেন সাকিব আল হাসান। গত দশ বছরে এই চার দেশে ৫ টেস্টে সাকিবের রান ৫২৩ ও গড় ৫২। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে নিষিদ্ধ থাকার কারণে তাকে এই র্যাংকের বাহিরে রাখা হয়েছে।
তাই এই র্যাংকে তামিম ইকবালকেই ১ম স্থানে রাখা হয়েছে। এই সময়ে তার রান ৭৭৭ ও গড় ৪৮। ইংল্যান্ডে লর্ডস ও ম্যানচেস্টারে টানা দুইটি শতক করেন তামিম। নিউজিল্যান্ডেও তামিমের ব্যাটে সকল সিরিজেই রান ছিলো। বিশেষ করে ২০১৯ সালের সিরিজটি নিউজিল্যান্ডে তামিমের সেরা সিরিজ ছিলেন। ওয়ানডে মেজাজে একটি শতক ছাড়াও ছিলো দুইটি অর্ধশতক। নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলার ফলে ৩য় টেস্টটি বাতিল না হলে আরো খেলতে পারেন ও আরো রানের সুযোগ ছিলো। তবে সাকিবের মতোই তামিমের হতাশা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোনো টেস্ট খেলতে না পারা। দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১৭তে একটি টেস্ট খেললেও ২য় টেস্ট ইনজুরির জন্য খেলতে পারেননি তামিম।
এই তালিকায় ২য় স্থানে রয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। তার রান ২৮১১ ও গড় ৪৬। কোহলি বেশ মিশ্র সময় কাটিয়েছেন এই দেশগুলোতে। অস্ট্রেলিয়ায় অসাধারণ পারফরম্যান্স তার, দক্ষিণ আফ্রিকায় ও দারুন। নিউজিল্যান্ডে রেকর্ড বেশ ভালো নয় তার। ইংল্যান্ডে এক সিরিজে ভালো করলেও অন্য সিরিজে ছিলেন ব্যর্থ। তবে কোহলি নিয়মিত সুযোগ পেয়েছেন এই সকল দেশে খেলার ও এক সফরে ভুল করলে পরবর্তীতে শুধরে নেওয়ার। যা বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের নিউজিল্যান্ড ছাড়া অন্য কোথাও হয়নি।
এই দুইজনই হয়তো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোন টেস্ট না খেলেই অবসরে যাবেন। কারন এফটিপিতে ২০২৩ পর্যন্ত কোন টেস্ট নেই বাংলাদেশের অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। তামিম কি কখনো ভেবেছিলেন ইংল্যান্ডে পর পর দুই টেস্টে শতকের পর ভবিষ্যতে কখনো ইংল্যান্ডে টেস্ট না খেলেই অবসর নিতে হতে পারে? কিন্তু তাই হয়তো হতে পারে, কারন ২০২৩ সাল পর্যন্ত এফটিপিতে বাংলাদেশের ইংল্যান্ডের মাটিতে কোন টেস্ট নেই। হয়তো এই দেশ গুলোতে নিয়মিত আরো সুযোগ পেলে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের নামও আরো বেশি সম্মানের সাথে উচ্চারিত হতো টেস্ট ক্রিকেটে।