শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০, ১০:৪৫:২২

সেদিন ঢাকা ছাড়ার সময় বাংলাদেশের জন্য হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন এডি বার্লো

সেদিন ঢাকা ছাড়ার সময় বাংলাদেশের জন্য হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন এডি বার্লো

স্পোর্টস ডেস্ক : ১৯৯৯ সালের শেষ দিক। ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তখন বাংলাদেশ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছে। বিশ্বকাপে গিয়েও হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। শ'ক্তিশা'লী পাকিস্তান আর তুলনামূলক দুর্বল দল স্কটল্যান্ডকে হা'রিয়ে দিয়েছে। টেস্ট স্ট্যাটাসের দাবি জো'রালো হয়েছে।

এমন এক মুহূর্তে বাংলাদেশ দলের 'ডিরেক্টর অব কোচিং' হয়ে এলেন এডি বার্লো। যার মাথাভর্তি ছিল পরিক'ল্পনা। আইসিসি ট্রফিতে দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে একটি দেশ যখন টেস্ট মুকুট পরার দ্বারপ্রান্তে, তখন বাংলাদেশে আগমন তার। ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশে এসে সেই অবিস্মরণীয় মুহূর্তের সাক্ষী হন কোচ এডি বার্লো। টেস্ট মর্যাদা পেতে যাওয়া একটা দলের কোচিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাকে।

বাংলাদেশকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছিলেন তিনি। সস্ত্রীক আসেন বাংলাদেশে। অবশেষে ২০০০ সালের ২৬ জুন টেস্ট মর্যাদা পেল বাংলাদেশ। গতকাল ২৬ জুন সেই টেস্ট মর্যাদাপ্রাপ্তির ২০তম বর্ষপূর্তি হলো। কিন্তু দু'র্ভা'গ্য বার্লোর। জীবন তার সঙ্গে ক'ঠিন উ'পহা'স করেছে। আমিনুল ইসলাম বুলবুলরা যখন ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন, তখন হুইলচেয়ারে বসে শিষ্যদের কীর্তি দেখতে হয়েছে বার্লোকে।

দেখেছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুলের দুর্দান্ত ১৪৫ রানের অভিষেক টেস্ট সেঞ্চুরি। কিন্তু হঠাৎ হুইলচেয়ার কেন? এই প্রজন্মের অনেকেই হয়তো জানেন না, বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের আগে তিনি মস্তিষ্কে র'ক্তক্ষ'রণের শি'কার হয়েছিলেন। আইসিইউতে রাখা হয়েছিল তাকে। এ কারণে তিনি চলাফেরার ক্ষমতা হা'রান। তাই বলে শিষ্যদের এমন ঐতিহাসিক মুহূর্ত মিস করবেন তিনি? 

তাই হুইলচেয়ারে করে সৌরভ গাঙ্গুলীর শ'ক্তিশা'লী ভারতের বিপক্ষে শিষ্যদের প'রা'ক্রম দেখতে মাঠে এসেছিলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ৪০০ করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৯১। ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হে'রে গেলেও তার চোখেমুখে ছিল তৃপ্তির হাসি। অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশ যা করে দেখিয়েছে, সেটাই তো অনেক! এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটে যতটা এগিয়ে গেছে, তার অনেক পরিক'ল্পনা এই বার্লো দিয়ে গেছেন।

২০০১ সালে বাংলাদেশকে বিদায় জানান তিনি। তিনি তখনো সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। চিকিৎসার জন্য অর্থসং'কটও ছিল। তার ইনস্যুরেন্স কম্পানি চিকিৎসা বীমা দিতে অস্বী'কৃতি জানায়। ওই পরি'স্থিতিতে তিনি তার ওয়াইন তৈরির ফার্মটি বিক্রয় করে দিতে বাধ্য হন। বাংলাদেশ ছাড়ার সময় বিসিবি ভবনে হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন তিনি। পাশে দাঁড়িয়ে তার স্ত্রী ক্যালি বার্লো চোখ মুছছিলেন।

এ দেশকে খুব ভালোবাসতেন তিনি। ভালোবাসতেন বাংলাদেশের মানুষকে। তাই ছেড়ে যেতে ক'ষ্ট হয়েছিল তার। অসুস্থতার সঙ্গে ল'ড়া'ই করে আরো পাঁচ বছর বেঁচে ছিলেন তিনি। সব সময় তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের খোঁ'জখবর রাখতেন। গণমাধ্যমে ইতিবাচক কথা বলতেন। সবাইকে কাঁ'দিয়ে অবশেষে ২০০৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর পৃথিবীর মায়া ত্যা'গ করে অনন্তলোকে যাত্রা করেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই অকৃ'ত্রিম বন্ধু। পেছনে পড়ে থাকে বাংলাদেশের প্রতি তার ভালোবাসার ইতিহাস আর, বিদায়কালের সেই কান্না...।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে