স্পোর্টস ডেস্ক: বাংলাদেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের এক ফেসবুক পোস্টের সুবাদে সংগঠনটির পরিচয় এখন অনেকেরই অজানা থাকার কথা নয়। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা করার লক্ষ্যে অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে হাতে হাত রেখে কাজ করে যাওয়ার পাশাপাশি সম্প্রতি নিজেদের ফেসবুক পেজে ঢাকাবাসীদের করোনাকালীন গল্প প্রকাশ করছে তারা। আর এবারের পর্বে তাদের অতিথি হিসেবে ছিলেন টাইগার সুপারস্টার মুশফিকুর রহিম। নিজের দৈনন্দিন কাজের একফাঁকে সংস্থাটিকে একটি সাক্ষাতকার দিয়েছেন তিনি। পাঠকদের জন্য নিচে তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন : মহামা'রির মাঝে কেমন সময় কাটাচ্ছেন আর কোন কোন জিনিস মিস করছেন?
মুশফিক : প্রথমত যেকারোর জন্যই এভাবে একনাগাড়ে ঘরে বসে থাকাটা বির'ক্তিকর ও হ'তাশাজনক। অন্যদিকে আমি আমার পরিবারের সঙ্গে ভালো কিছু সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছি। সত্যি বলতে গেলে, ক্রিকেটার হিসেবে আমরা খুব কম ক্ষেত্রেই এরকম লম্বা ছুটি পাই। আমার ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে আমি এতসময় বাসায় কখনোই থাকিনি। আলহামদুলিল্লাহ, আমি এই বিরতিটা উপভোগ করছি, কিন্তু তাদের জন্যও দুঃখপ্রকাশ করছি যারা এই ভাইরাসে আক্রা'ন্ত হয়ে মা'রা গেছেন। আমি অবশ্যই ক্রিকেটকে খুব মিস করছি। এমনকি আমি তো অনুশীলনের জন্যও বাইরে বেরুতে পারছি না।
প্রশ্ন : আপনার সতীর্থ মাশরাফি বিন মর্তুজা সম্প্রতি করোনা টেস্টে পজেটিভ হয়েছেন। এই খবরটি শোনার পর আপনার অনুভূতি কেমন ছিল?
মুশফিক : এটা সত্যিই খুব পীড়াদায়ক ছিল। কিন্তু যেভাবে ভাইরাসটি আমাদের দেশে ছড়াচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে বেশিরভাগ মানুষই এতে আক্রান্ত হবেন। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের মানুষেরা পরিপূর্ণভাবে শিক্ষিত নয় এবং একইসঙ্গে তারা অসচেতনও বটে। এছাড়া তারা নূন্যতম স্বাস্থ্যবিধিও মানছেন না। মাশরাফি ভাইয়ের মতো মানুষেরা সত্যিকারের কিংবদন্তি এবং ইনশাল্লাহ তিনি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন। তবে এখবরটি শুনে আমি আরো চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, সরকারের পক্ষে পুরো বাংলাদেশের খেয়াল রাখাটা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সেজন্য সবাইকে কড়াকড়িভাবে নিজের এবং পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে যতদিন পর্যন্ত কোনো ভ্যাকসিন না আবিষ্কৃত হচ্ছে।
প্রশ্ন : একজন খেলোয়াড় হিসেবে কিভাবে কোভিড-১৯ এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছেন?
মুশফিক : সত্যি বলতে কি, একজন খেলোয়াড় হিসেবে এসময় নিজের ধৈর্য এবং লক্ষ্য ধরে রাখাটা খুবই কঠিন। কারণ আপনি জানেন না কবে আর কতদিনে এই মহামা'রির প্র'কোপ শেষ হবে। যেকারণে ঘরের মধ্যেই বেশিরভাগ সময় কাটানোটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমি আমার ফিটনেস লেভেল নিয়ে কাজ করছি, আদর্শ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করছি এবং নিয়মিতভাবে হাতও ধুচ্ছি। কোনো জরুরি প্রয়োজনে যদি আমাকে বাইরে যেতে হয়, তবে সবসময় আমি মুখে মাস্ক এবং হাতে গ্লাভস পরে নিচ্ছি। আবার বাইরে থেকে বাসায় আসার পর আমি আমার কাপড়গুলো ধুতে দিয়ে নিজেও গোসল করে নেওয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত করছি। একজন খেলোয়াড় এবং বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমার কিছু সামাজিক দায়িত্বও আছে। তাই আমি সরকারের সচেতনতামূলক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছি। পাশাপাশি নিজেও অসহায়দের যথাসাধ্য সাহায্য করছি।
প্রশ্ন : করোনা আপনার কাজে/অনুশীলনে কেমন প্রভাব ফেলেছে?
মুশফিক : কোভিড-১৯ শুধু আমার কাজে নয়, বরং গোটা বিশ্বের ওপর প্রভাব ফেলেছে। একজন খেলোয়াড় হয়েও আমি এখন বাইরে যেতে পারছি না। আমাকে ঘরে থেকেই সবধরনের শারীরিক কসরত করে নিজের ফিটনেস ধরে রাখতে হচ্ছে। এছাড়া আমি নিজের দক্ষতামূলক কাজগুলো করার জন্যও মাঠে যেতে পারছি না, যেটি হতাশাজনক। নামাজের জন্য আমি সাধারণভাবে মসজিদে যেতে পারছি না, আমি আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় বেড়াতে যেতে পারছি না, কেনাকাটা করতে যেতে পারছি না ইত্যাদি।
প্রশ্ন : ইদানিং আপনি কিভাবে একটি সাধারণ দিন কাটাচ্ছেন?
মুশফিক : ঘুম থেকে ওঠার পর আমি ট্রেন্ডমিলে দৌড়াই আর ভারোত্তলকগুলো দিয়ে শারীরিক কসরত করি, যেগুলো আমি আগে কিনে রেখেছিলাম। তারপর আমি আমার ছেলের সঙ্গে খেলাধুলা করি। মাঝেমধ্যে ওকে নিজ হাতে খাওয়াই। আবার কখনো কখনো আমি ওর সাথে শাওয়ারের নিচে খেলি। পবিত্র কোরআনের তেলওয়াত শোনা ইদানিং আমার একটি অন্যতম অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এছাড়া আমি আমার স্ত্রীকে ঘরের কাজে সাহায্য করছি। তার কাছ থেকে রান্নাবান্না শিখছি এবং সেগুলো নিজে নিজে রান্না করার চেষ্টাও করছি।
প্রশ্ন : মহামা'রির এই চরম দুর্দিনে ভক্তদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?
মুশফিক : আমার মনে হয়, যেহেতু এধরনের প'রিস্থিতির সম্মুখীন আমরা এর আগে কখনোই হইনি, তাই কিভাবে এরকম প'রিস্থিতি সামলাতে হবে এব্যাপারে আমরা কেউই ভালোভাবে জানি না। আমি বলবো, সবারই উচিত যতটা সম্ভব ঘরেই অবস্থান করা। যদি আপনি কোনো কাজে বাইরে যান, তবে কড়াকড়িভাবে স্বাস্থ্যবিধিগুলো পালন করুন। মহামা'রির এসময়ে গরিব-অসহায় মানুষদের সাহায্য করুন, আগের চেয়ে বেশি নামাজ (প্রার্থনা) আদায় করুন, আল্লাহর (সৃষ্টিকর্তার) কাছে ক্ষমা চান, ধৈয করুন এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যাতে তিনি আমাদের এই মহামা'রি থেকে শিফা (মুক্তি) দান করেন। কারণ একমাত্র তিনিই আমাদের এই চ'রম দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন।