রবিবার, ১২ জুলাই, ২০২০, ০৯:০৫:১১

অবিশ্বাস্য এক কাজ করেছে ১৫ বছর বয়সী কিশোর রায়হান, ফেসবুক পেজে জানালেন ব্যারিস্টার সুমন

অবিশ্বাস্য এক কাজ করেছে ১৫ বছর বয়সী কিশোর রায়হান, ফেসবুক পেজে জানালেন ব্যারিস্টার সুমন

স্পোর্টস ডেস্ক : ছোট বেলা থেকে ভালো ফুটবল খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন ১৫ বছর বয়সী কিশোর রায়হানের। আর্থিক সমস্যার কারণে বিভিন্ন জেলায় সাইকেল চালিয়েই খেলতে যায় সে। তবে ফুটবলের নে'শায় এবার অবিশ্বাস্য এক কাজ করেছে সে। চারদিন প্রায় ৪০০ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে কাউকে না বলে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের ফুটবল একাডেমিতে খেলতে গেছে রায়হান।

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার সুমন তার নিজের ফেসবুক পেজে লাইভে এসে এ তথ্য দিয়ে রায়হানের পরিচয় প্রকাশ করেন। রায়হান যশোরের বাঘারপাড়ার রায়পুর ইউনিয়নের ভদ্রডাঙ্গা গ্রামের আব্দুর সাত্তারের ছেলে। তার বয়স ১৫ বছর। সে সিলুমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পাশ করে বাঘারপাড়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। রায়হানের বাবা বর্তমানে বাঘারপাড়া-কালীগঞ্জ সড়ক মেরামতের শ্রমিকের কাজ করছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রায়হান এর আগেও যশোর, নড়াইল, মাগুরা, সাতক্ষীরাসহ বেশ কয়েকটি জেলায় সাইকেল চালিয়ে খেলতে গিয়েছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবল খেলা বেশি পছন্দ তার। স্কুলের টিফিনের পর প্রতিদিন বাড়ি এসে সে সাইকেল চালিয়েই যশোর সদরের হামিদপুর এলাকার শামসুল হুদা ফুটবল একাডেমিতে প্রশিক্ষণ করতে যেত। উপজেলাভিত্তিক স্কুলের ফুটবল খেলায় অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করে কয়েকবার বিভাগীয় পর্যায়ে নিয়ে গেছে।

খেলায় টাকা পয়সার দরকার হলে প্রয়োজনে শ্রমিকেরও কাজ করে সে। বাঘারপাড়া-কালীগঞ্জ সড়কের সংস্কার কাজে কিছুদিন আগে পানির ট্রাকের সঙ্গে শ্রমিক হিসাবে কাজ করেছে। হবিগঞ্জ যাওয়ার দু’দিন আগে স্থানীয় এক কাঁকরোল ক্ষেতে শ্রমিকের কাজ করে রায়হান। এই টাকা নিয়েই সে ব্যারিস্টার সুমনের ক্লাবের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

রায়হানের মামা ফয়সাল আহমেদ জানিয়েছেন, গত ২০ জুন থেকে রায়হানের মা ও বাবা তার বোনকে নিয়ে হাসপাতালে ছিল। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাউকে না বলে গত ২৩ জুন বাড়ি থেকে চলে যায়। খোঁ'জাখুজির পর তাকে না পেয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে, রায়হান বলে আমাকে খোঁজাখুজির দরকার নেই মামা, আমি ভালো আছি বলে সংযোগ বিছিন্ন করে দেয়। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যারিস্টার সুমনের পেজে তার সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রকাশ করা হয়। সেখান থেকে জানতে পারি রায়হান হবিগঞ্জে ব্যারিস্টার সুমনের ফুটবল একাডেমিতে খেলছে। বর্তমান সে ওইখানেই থেকে খেলাধুলা করছে।

রায়হানের বাবা আব্দুর সাত্তার বলেন, ‘রায়হান ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলতে খুব ভালোবাসে। রায়হানকে ভালো ফুটবল খেলোয়াড় বানানোর মতো সামর্থ্য আমার নাই। এখন যদি সে নিজের প্রতিভা দিয়ে এগিয়ে যেতে পারে এতেই আমার শান্তি। রায়হানের মামার মাধ্যমে জানতে পেরেছি সে ব্যারিস্টার সুমনের ফুটবল ক্লাবে খেলছেন।’

এ বিষয়ে রায়হান বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যারিস্টার সুমনের ফুটবল একাডেমি খোলার একটি পোস্ট দেখতে পাই। সেখান থেকে স্বপ্ন জাগে তার একাডেমিতে খেলার। বাড়িতে বললে এখানে আসতে দেবে না, তাই কাউকে না বলেই চলে এসেছি। আমি একজন সৎ দক্ষ ফুটবলার হতে চাই।’

সাইকেলে যাওয়ার বিষয়ে রায়হান বলে,‘আর্থিক সমস্যার জন্য সাইকেল চালিয়ে এসেছি। হবিগঞ্জ আসতে চার দিন সময় লেগেছে। রাত দিন সমান করে সাইকেল চালিয়েছি। বাড়ি থেকে শ্রমিকের কাজ করে ৬’শ টাকা, একটি টর্চ লাইট, পাওয়ার ব্যাংক, এ্যানড্রোয়েড ফোনসহ একটি ব্যাগ নিয়ে এসেছি।’

জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘রায়হান যশোর থেকে সাইকেল চালিয়ে আমার একাডেমিতে খেলতে আসায় আমি অনেক কৃতজ্ঞ। বিষয়টিতে আমি আমরা অবাক হয়েছি । আমি ওর থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। যে স্বপ্ন নিয়ে রায়হান এখানে আসছে, সেই বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে