রবিবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ০১:৫১:৩৭

হঠাৎ আগুন ব্রাজিলের সুখের ঘরে, বড় কঠিন হচ্ছে ‘মিশন হেক্সা’!

হঠাৎ আগুন ব্রাজিলের সুখের ঘরে, বড় কঠিন হচ্ছে ‘মিশন হেক্সা’!

স্পোর্টস ডেস্ক : দোহার ওয়েস্টিন হোটেল ঘিরে নানা গুঞ্জন ডালপালা মেলছে। ফুটবলারদের ইনজুরি নিয়ে বাইরে আসছে নানা তথ্য। ব্রাজিলের সাংবাদিকরা ওত পেতে বসে আছেন ভালো-মন্দ খবরের জন্য। হঠাৎ আগুন ব্রাজিলের সুখের ঘরে, খেলোয়াড়দের চোট আর মানসিক চাপ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত যে খবর তাতে ব্রাজিলের ‘মিশন হেক্সা’ বড় কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

ব্রাজিলের এক ফটো সাংবাদিক আলেক্স ভিক্টর ওয়েস্টিন হোটেলে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘শিবিরে কোনো সুসংবাদ নেই। দুই ফুটবলারের বিশ্বকাপ হয়তো শেষ হয়ে যাচ্ছে। 

চিকিৎসকরা ব্যস্ত খেলোয়াড়দের চোট নিয়ে। সেরা একাদশ নামানোই কঠিন হয়ে পড়বে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে। তিতের কৌশল নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে দলের ভেতর। ’ অর্থাৎ সুখের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন ক্যামেরুন। 

শুরুর দুই ম্যাচ জেতার পর বেশ স্বস্তির হাওয়া বইছিল ওয়েস্টিন হোটেলে। খুব খোশমেজাজেই ছিল ব্রাজিল দল। পরশু মধ্যরাতে সেলেসাওদের ওপর বুলডোজার চালিয়ে দিয়েছে ক্যামেরুন। কোনো আফ্রিকান দলের কাছে তারা হেরেছে এই প্রথম। শেষ ষোলোতে পৌঁছে যাওয়ার পর ব্রাজিলের দ্বিতীয় দলের হার না হয় মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু এই এক ম্যাচে যে ছিটকে গেছে দুই ফুটবলার—গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও অ্যালেক্স তেলেস! চোটে দুজনের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে।

অ্যালেক্স তেলেসের শেষ মানে বিকল্প লেফট ব্যাকও বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। অথচ প্রথম একাদশের লেফট ব্যাক অ্যালেক্স সান্দ্রোর এখনো চোট সারিয়ে ফেরার খবর নেই। আর্সেনালের স্ট্রাইকার জেসুসের না থাকা মানে দলে এখন একমাত্র ‘নাম্বার নাইন’ রিচার্লিসন। হায়রে বেঞ্চ! পরীক্ষায় বসেই ফাঁকা হয়ে গেল! 

এ জন্য অনেকে কাঠগড়ায় তুলছেন ব্রাজিলের কোচকে। দ্বিতীয় দলটি কখনো একসঙ্গে খেলেইনি। কম্বিনেশন তৈরি না করে তিতে তাঁদের মাঠে নামিয়ে ভুল করেছেন। প্রত্যেকে প্রথম একাদশে ঢোকার স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নামে এবং নিজেদের সর্বোচ্চটা দিতে গিয়েই তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। 

পুরো দাপটে খেলেও গোল বের করতে পারেনি স্রেফ সমন্বয়হীনতার জন্য। একে অন্যকে বোঝার আগেই একসঙ্গে বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে নেমে গেছে। তাই অ্যান্থনি সুযোগ তৈরি করলেও তাঁর কাছে অজানা ছিল জেসুসের অবস্থান। একসঙ্গে না খেলার কারণে জেসুসও জানতেন না বক্সের কোন জায়গায় বল ফেলতে যাচ্ছেন এই উইঙ্গার।

তিতে না বুঝেই এই ‘অপকর্মটা’ করছেন বলে সেলেসাও দর্শকদের ধারণা। সাও পাওলো থেকে আসা এক দর্শক বিশ্বাস করেন, ‘তিতের ওপর আমার কোনো ভরসা ছিল না। রাশিয়া বিশ্বকাপেও একই কাণ্ড হয়েছিল। বেলজিয়ামের বিপক্ষে ব্রাজিল সারা ম্যাচ খেলে শেষ পর্যন্ত এক গোলে হেরে বিদায়।

তাঁর হাতে জাতীয় দলটাকে এত বছর দিয়ে রেখেই ভুল করেছে। নইলে এবার অন্যতম সেরা অ্যাটাকিং লাইন ছিল ব্রাজিলের। কিন্তু কোচের মাথায় আধুনিক ফুটবলের ব্রেইন নেই। ’ কোচ হিসেবে অমন কোনো সুখ্যাতি ছিল না তিতের। প্রতিপক্ষকে কৌশলে মার দেওয়ার ব্যাপারটাও কখনো দেখা যায়নি এই ব্রাজিলিয়ান ট্যাকটিশিয়ানের মধ্যে। ক্যামেরুনের কাছে হারের পর তাই এই কোচেরও মুণ্ডপাত হচ্ছে কাতারে। ৩৯ বছর বয়সী রাইট ব্যাক দানি আলভেজকে বাছাই করেই তিনি প্রথমে চক্ষুশূল হয়েছেন ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যমের।

ক্যামেরুনের কাছে হেরে তার সংক্রমণ হয়েছে সমর্থকদের মধ্যে। সেলেসাও সমর্থকরা ছোট ছোট বিশ্বকাপ ট্রফি আর পতাকা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গান গেয়ে যাচ্ছিলেন। গতকাল থেকে সেই গান বেসুরো হয়ে গেছে। বিশ্বাসেও চিড় ধরেছে। শেষ ষোলোতে দক্ষিণ কোরিয়ার হার্ডল পার হতে পারবে কি না, তা নিয়েই ব্যাপক সন্দেহ তৈরি হয়েছে সমর্থকদের মনে। 

বিশেষ শঙ্কা তৈরি হয়েছে রক্ষণভাগ নিয়ে। প্রথম ম্যাচের পর থেকে মেক-শিফট ডিফেন্ডারে চলছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের স্বপ্নগাড়ি। সেটার সমাধান অজানা। ফরোয়ার্ড লাইনে নেইমারের ফেরাও চূড়ান্ত হয়নি।

ক্যামেরুনের ম্যাচ শেষে নেইমার মাঠে নেমে সমর্থকদের চেহারা দেখালেও ম্যাচের জন্য সবুজ সংকেত দেননি চিকিৎসক। গতকাল বিকেলে তাঁর বুট পরে ট্রেনিং করার কথা, এর পরই হয়তো সিদ্ধান্ত হবে। তবে হাতে এখনো সময় আছে অনেক। কোরিয়া ম্যাচের আগে ব্রাজিল সব অলুক্ষণে ছায়া ঝেড়ে ফেলতে পারবে কি না, সেটাই দেখার বিষয়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে