স্পোর্টস ডেস্ক : নেইমারের শট গোলরক্ষক ওয়েভারটনকে পরাস্ত করে জালে। সতীর্থদের হাততালিতে মুখর হয়ে ওঠে আল আরাবি স্পোর্টস ক্লাবের মাঠ। সেলেসাওদের ‘হেক্সা মিশন’ও যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে ওই ছবিতে। তাদের স্বপ্নগাড়ির প্রধান চালক হয়ে নেইমার ফুটবলবিশ্বকে দিয়েছেন তাঁর চোট কাটিয়ে ফেরার বার্তা।
গত পরশু সন্ধ্যায় ব্রাজিলের অনুশীলনের এই দৃশ্য শুধুই দলের মহাতারকার ফেরার বার্তা নয়, অন্দরে লুকিয়ে আছে আরো অনেক না-বলা কথা। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল কাটিয়ে একটি দলের সাহসী হয়ে ওঠার গল্প, হলুদের সপ্রাণ সমারোহ এবং গরম চেয়ারে আসীন তিতের শরীর জুড়িয়ে দেওয়া স্বস্তির হাওয়া।
ক্যামেরুন ম্যাচ হারার পর ব্রাজিল দলকে ঘিরে জমে ওঠা অনুশীলনের একটি ছবিতেই আড়াল পড়ে গেছে। অনুশীলন শেষে ব্রাজিলের ‘নাম্বার টেন’ নেইমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেনও, ‘আমি ভালো বোধ করছি। ’ তিনি ভালো বোধ করলে যে পুরো দলের মনোজগতে ইতিবাচকতা ফেরে, সমর্থকরাও আশায় বুক বাঁধে।
গ্রুপের তিন ম্যাচ খেলতেই ব্রাজিলের সেরা একাদশ ভেঙে চুরমার। চোটে শেষ হয়ে গেছে গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও ফুলব্যাক অ্যালেক্স তেলেসের বিশ্বকাপ। তার আগে নেইমার ও দানিলোর চোট নিয়ে বিশ্রাম এবং সাতজনের জ্বরে ভোগা—সব মিলিয়ে তিন ম্যাচে চোটজর্জর ব্রাজিল প্রায় আধমরা। বিপদ যখন আসে চারদিক দিয়েই আসে।
শেষ ম্যাচে ক্যামেরুনের কাছে হারের পর ব্রাজিলের কোচও পড়েছেন প্রশ্নের মুখে। তাঁর কোচিং মেধা ও কৌশল নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। এসব নেতিবাচকতা উড়িয়ে দিতে পারে কেবল একটি জয়। দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছলেই ফিরে আসবে গৃহশান্তি। তার আগে নেইমারের বুট পরে ওয়ার্ম আপ ও সবার সঙ্গে ট্রেনিং করা এবং গোল করার ছবিটি এই মুহূর্তে মহার্ঘ।
প্রথম ম্যাচের পর থেকে গোড়ালিতে চোটের কারণে অনুশীলনও করতে পারেননি নেইমার। এরপর ছড়িয়েছিল পিএসজি তারকার বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়ার গুঞ্জনও। দলের মনোবল ভেঙে পড়বে বলেই নাকি খবরটা চেপে রেখেছে ব্রাজিল। সব গুজব বিদায় করে খোদ নেইমারই মাঠে গিয়েছিলেন ক্যামেরুন ম্যাচে।
খেলা শেষে মাঠে নেমে হাত নেড়ে দর্শক-সমর্থকদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি সুস্থতার দিকে। পরশু বিকেলে বুট পায়ে দলের সঙ্গে অনুশীলন করে ব্রাজিলের মহাতারকা দিয়েছেন নিজের সম্পূর্ণ সুস্থতার খবর। তিনি সুস্থ, অনুশীলন করছেন এবং টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে কোরিয়ার বিপক্ষে খেলার আগ্রহও প্রকাশ করেছেন।
তিনি খেলতে চান। বড় স্বপ্নে মন রাঙিয়েই বিশ্বকাপে এসেছিলেন ব্রাজিলের এই পোস্টারবয়। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন এই মৌসুমের শুরু থেকে। পিএসজির জার্সিতে সবচেয়ে উজ্জ্বল নেইমার ২০ ম্যাচে ১৫ গোল ও ১২ অ্যাসিস্টের দারুণ ফর্ম নিয়ে আসেন কাতারে।
প্রকাশ্যে কোনো ঘোষণা না দিলেও ‘সামনে আর বিশ্বকাপ খেলা না-ও হতে পারে’ মন্তব্য করেছিলেন ৩০ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। ব্রাজিলের জার্সিতে নতুন প্রতিভার মিছিল দেখেই হয়তো নিজের ভবিষ্যতের পথটা ঠিক করে ফেলেছিলেন। তাই বাকি সব এক পাশে সরিয়ে এবার ফুটবলে বিশেষ মনোযোগী হয়ে তিনি কাতার আসেন বিশ্বজয়ের অদম্য আকাঙ্ক্ষা নিয়ে।
কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিলের জার্সিতে নেইমারের এই লড়াইয়ের ভেতর আছে আরেকটি লড়াই। পিএসজির তিন তারকার অন্তর্গত লড়াই। মেসি-এমবাপ্পের পায়ে বিশ্বকাপ এখন মহাতুঙ্গে। জাতীয় দলের জার্সিতে পিএসজির দুই তারকা করেছেন তিনটি করে গোল। দলের স্বপ্নকে কাঁধে নিয়ে দুজনই খুব ভালোভাবে শামিল হয়েছেন মরুযাত্রায়। সেখানে কেবল নেইমার নেই। চোট তাঁকে এই লড়াইয়ে পিছিয়ে দিলেও এখন সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরতে মরিয়া ব্রাজিল ফরোয়ার্ড।
কিন্তু তাঁর চাওয়াতেই সব কিছু হওয়ার নয়। নেইমারকে শতভাগ সুস্থ করে মাঠে নামাতে চান তিতে। ব্রাজিল কোচ সিদ্ধান্ত নিতে চান ম্যাচের আগের দিনের অনুশীলন দেখে। কোনো ঝুঁকি না থাকলে খেলবেন নেইমার। ঝুঁকি দেখলে তিতে হাঁটবেন বিকল্প পথে। তবে অগ্রাধিকারের তালিকায় অবশ্যই নেইমার আছেন। এটা শুধু নেইমারের একার স্বপ্ন নয়, সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ব্রাজিলের ‘হেক্সা মিশন’ও।