মঙ্গলবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ০৮:১৭:২৭

রোনালদো কেন প্রথম একাদশে? প্রশ্ন উঠছে পর্তুগালেই

রোনালদো কেন প্রথম একাদশে? প্রশ্ন উঠছে পর্তুগালেই

স্পোর্টস ডেস্ক: সময়টা ভাল যাচ্ছে না ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে মাঠে নামার আগে পর্তুগিজ সাংবাদিকরা এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে হঠাৎই জিজ্ঞাসা করে বসেন, “সুইজারল্যান্ড ম্যাচে প্রথম একাদশে থাকবেন রোনালদো?”

তার চোট আছে বলে এমন কোনও খবর শোনা যায়নি। খেলতে অন্য সমস্যা আছে বলেও কেউ জানেন না। তারপরেও ফের্নান্দো স্যান্টোসকে সাংবাদিক সম্মেলনে তার দেশেরই সাংবাদিকদের থেকে শুনতে হচ্ছে, সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে রোনালদো কেন প্রথম দলে থাকবেন?

হকচকিয়ে গিয়ে শুরুতে স্যান্টোস মন্তব্যই করতে পারেননি। শেষে কিছুটা ধাতস্থ হয়ে মজা করেই বললেন, ‘‘টিম লিস্টটা আমি পর্তুগাল ক্যাম্পের লকারে ফেলে এসেছি। হাতের কাছে থাকলে বলতে পারতাম।’’ ম্যানচেস্টার পর্বের পর থেকে সময়টা ভাল যাচ্ছে না সিআরসেভেনের।

কিছুদিন আগেই ব্রিটিশ সাংবাদিক পিয়ার্স মরগ্যান সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে জিজ্ঞসা করেছিলেন, তিনি কি এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ফুটবলার? উত্তরটা দেওয়ার জন্য ক্ষণিকের ভগ্নাংশও ভাবতে হয়নি সিআর সেভেনকে। 

সঙ্গে সঙ্গে বলেন, তার মতে তিনিই সেরা। কিন্তু বাকিদের কীভাবে সন্তুষ্ট করবেন তিনি? একজন ভাবে অন্য কোনও ফুটবলার সেরা। আরেকজনের মতে, অন্য কেউ। তবে ফুটবল ইতিহাসের বই থেকে তাকে বাদ দেওয়া যাবে না। 

যে পর্তুগিজরা এতদিন ধরে রোনালদোর নাম জপ করতেন, তার নিজের দেশের সেই জনতাই এখন দাবি তুলেছে, মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে রোনালদোকে যেন প্রথম একাদশে না রাখা হয়! প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের আগে এরকম খবর দোহায় এসে পৌঁছালে কোন মহাতারকার মুড ঠিক থাকে? 

ফলে সুইস ম্যাচের আগে কোচের সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনেই এলেনই না সিআর সেভেন। ফর্মে ফিরে আসা শুধু নয়, তার প্রবলতম প্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসি চারটে ম্যাচ খেলে তিনটে গোল করে বসে আছেন। সেখানে তিনি বিশ্বের এক নম্বর গোলদাতা হয়েও প্রথম তিনটে ম্যাচ শুরু থেকে খেলতে নেমে গোল করেছেন মাত্র একটি! 

সেই গোলটিও আবার পেনাল্টি থেকে। কিন্তু পুরো ম্যাচে একবারও মনে হচ্ছে না, রোনালদো মাঠে থাকলে কিছু একটা ঘটতে পারে। এখানেই যত সমস্যা। পর্তুগালের প্রথম সারির দৈনিক ‘আ বোলা’ সেই দেশের জনগণের মধ্যে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল সুইজারল্যান্ড ম্যাচকে কেন্দ্র করে। 

সমীক্ষায় প্রশ্ন ছিল, মঙ্গলবার রোনালদোর কি প্রথম একাদশে থাকা উচিত? দেশের সত্তর শতাংশ মানুষ রায় দিয়েছেন, রোনালদোকে মঙ্গলবার কিছুতেই প্রথম একাদশে রাখা ঠিক হবে না! এরপরই সবাই বলতে শুরু করেছেন, তাহলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ টেন হাগ রোনালদোকে রিজার্ভে রেখে দিয়ে ভুলটা কী করেছেন?

আ বোলা’র সমীক্ষাটা নিয়ে এদিন পর্তুগাল শিবিরে চাপা টেনশন তৈরি হয়েছে। রোনালদো প্র্যাকটিসে এসেছিলেন। কিন্তু সেই হাসিখুশি ভাবটাই যে নেই। অন্যদিন হলে প্র্যাকটিসে মজা করেন সতীর্থদের সঙ্গে। এদিন প্র্যাকটিসে সংবাদমাধ্যমের দেখার অধিকার ছিল মাত্র শুরুর ১৫ মিনিট। 

তাতে দেখা গেল, শুরুতে একপাশে একা দাঁড়িয়ে স্ট্রেচিং করলেন। তারপর পেপের সঙ্গে কিছুক্ষণ ওয়ান-টু খেললেন। ব্যস। আগেরদিন কোরিয়ার বিরুদ্ধে রোনালদোকে দ্বিতীয়ার্ধে কোচ তুলে নেওয়ার পরই মূল সমস্যাটা শুরু হয়। মারাত্মক বিরক্ত দেখাতে থাকে তাকে।

সবাই ভেবে বসেন, স্যান্টোসের তাকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তটা ভালভাবে নিতে পারেননি তিনি। যদিও রোনালদো এবং স্যান্টোস দুই জনেই ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, পরিস্থিতিটার ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। রোনালদোর সমস্যাটা হয়েছিল কোরিয়ার ফুটবলারের সঙ্গে। কিন্তু এদিনই সাংবাদিক সম্মেলনে সেই প্রসঙ্গ ফের উঠে এলো। 

আর বিরক্ত পর্তুগাল কোচ বললেন, ‘‘এক কথা কতবার বলব যে, সমস্যাটা আমার সঙ্গে নয়। হয়েছিল কোরিয়ার ফুটবলারের সঙ্গে।’’ তার মধ্যেই আবার রোনালদোকে কেন্দ্র করে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বিষয়টিকে আরও জটিল করে ফেলেছেন তারই সতীর্থ উইলিয়াম কার্ভালহো। 

যিনি সরাসরি কিছু না বলে সেদিনের কোরিয়া ম্যাচের প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই ব্যাপারে মন্তব্য করার আমি কে? রোনাল্ডো নিজেই ভাল বলতে পারবে।’’ আর এখানেই পর্তুগিজ মিডিয়া ভাবছে, তাহলে কি কোরিয়া ম্যাচের পর পর্তুগাল শিবিরে কোচের সঙ্গে সত্যিই কিছু সমস্যা শুরু হয়েছে রোনালদোর? 

তবে সাংবাদিক সম্মেলনে বসে স্যান্টোস পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, তার কাছে এখন এই ইস্যুর থেকেও সুইজারল্যান্ড ম্যাচটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বকাপের মাঝে সৌদির ক্লাবের সঙ্গে রোনালদোর চুক্তির এই প্রসঙ্গটি অবশ্য মাঠের বাইরে ফেলে দিয়েছেন বিশ্বকাপে পর্তুগালের কোচ। 

বেশ বিরক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘‘কাল সুইজারল্যান্ড ম্যাচের আগে কেন এই সব প্রসঙ্গ তুলছেন কিছুতেই বুঝতে পারছি না। রোনালদো কোন ক্লাবে খেলবে, তা নিয়ে পরেও ভাবা যাবে। প্লিজ সুইজারল্যান্ড ম্যাচের আগে রোনালদোকে একটু ফোকাসড থাকতে দিন।’’

তিনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। তিনি আলোর সার্চলাইটের বাইরে থাকতে চাইলেই কি আর থাকা সম্ভব? না তাকে কেউ শান্তিতে থাকতে দেবে? তবে এটা তো ঠিক, মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ড ম্যাচের আগে তিনি ভাল নেই। 

এর একটাই কারণ, তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা যেভাবে বিশ্বকাপের আসরে এগিয়ে যাচ্ছেন, পারফরম্যান্সে তিনি অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন। এরকম পরিস্থিতি থেকে বহুবার বেরিয়ে এসেছেন চ্যাম্পিয়নের মতো। এবার কি তাহলে তাকে ঘিরে এই সমালোচনা, অপমান শুধু শুধু হজম করবেন তিনি? 

পিয়ার্স মরগ্যান প্রশ্ন করেছিলেন, ক্রিশ্চিয়ানো, প্রতিদিন সংবাদপত্র পড় তুমি? রোনালদো বলেছিলেন, কোনওদিন না। জানি ওরা আমাকে, আমার পরিবারকে নিয়ে মিথ্যো সমালোচনা করে। আমাকে নিয়ে খবর ওদের করতেই হবে। তাই ওদের আমি পাত্তা দিই না। আমি কখনও রেকর্ডের পিছনে দৌড়ই না। রেকর্ড আমার পিছনে দৌড়ায়!

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে