স্পোর্টস ডেস্ক : কোনো ক্রীড়া সংস্থায় একই পদে দুই মেয়াদের বেশি কেউ থাকতে পারবে না বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন ও সংস্থার সঙ্গে মতবিনিময় শেষে এই কথা বলেছেন তিনি।
মাত্র মাস দেড়েক আগে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন আসিফ মাহমুদ। এর মধ্যে ক্রীড়াঙ্গনের অনেক অসঙ্গতি চোখে পড়েছে তার। ফেডারেশনগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) থেকে সাধারণ নির্দেশনা তৈরি হচ্ছে। যার কিছুটা ধারণা দিয়েছেন উপদেষ্টা, কোনো ক্রীড়া সংস্থায় একই পদে দুই বারের বেশি নয়। খেলা বা ফেডারেশনের প্রয়োজনে ওই ব্যক্তি অন্য পদে কাজ করতে পারে, কিন্তু একই পদে দুই বারের বেশি নয়।
ক্রীড়া উপদেষ্টা সরাসরি উল্লেখ না করলেও সহজেই অনুমেয় তিনি ফেডারেশন-ক্রীড়া সংস্থাগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদের বিষয়টিকেই মূলত নির্দেশ করেছেন। ফেডারেশনগুলোর বড় দায়িত্বে যারা থাকেন, তারা একবার চেয়ারে বসার পর পুনরায় সেই চেয়ারে বসার জন্য নানা পদক্ষেপ নেন। সেই বিষয়টিও ইতোমধ্যে জ্ঞাত ক্রীড়া উপদেষ্টার, অনেকেই ফেডারেশনের পদকে দায়িত্ব নয়, ক্ষমতার অংশ মনে করে। আমরা সেটা রোধে কাজ করছি।
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে রাজনীতির প্রভাব রয়েছে। বিগত সময়ের মতো আগামীতেও যেন রাজনীতিকরণ না হয়, সেদিকেও যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ক্রীড়াঙ্গনে বিরাজনীতিকরণ নিয়ে আমরা কাজ করছি। একজন ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে, কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনে যেন প্রভাব যেন না আসে।
ক্রিকেট বাদে দেশের অন্য সকল ফেডারেশনে আর্থিক সমস্যা রয়েছে। ফেডারেশনগুলোর বাজেট বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করতে চান আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, অবশ্যই খেলাধুলার জন্য বাজেট প্রয়োজন। আমরা বাজেট বৃদ্ধি ও স্পন্সরের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। অনেক ফেডারেশন নিয়ে আমরা আর্থিক দুর্নীতি-অনিয়মের কথা শুনি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বা মন্ত্রণালয়ের কাছে ফেডারেশনগুলোর নিয়মিত অডিট রিপোর্ট দিতে হবে।
বিভিন্ন ফেডারেশনের খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তা ও রেফারি আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন ওই সভায়। ক্রীড়া উপদেষ্টাকে কাছে পেয়ে অনেকে নিজেদের মতামত তুুলে ধরতে চেয়েছিলেন। কয়েক বার হাত উঠিয়েও বক্তব্য দিতে পারেননি কেউ কেউ। একজন মাইক না পেয়ে পুরো মিলনায়তন ঘুরেছেন, এ নিয়ে সেখানে খানিকটা হট্টগোলও হয়েছে।
সেই বিশৃঙ্খলা চোখ এড়ায়নি ক্রীড়া উপদেষ্টার। তার বক্তব্যের শুরুতে এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, খেলাধুলা আমাদের শৃঙ্খলা শেখায়। যা জাতীয় জীবনেও শিক্ষণীয়। এখানে আপনারা অনেক বর্তমান, সাবেক খেলোয়াড় ও কোচ আছেন। আপনাদের মধ্যে শৃঙ্খলার যথেষ্ট অভাব। আগামীতে আপনারা ফেডারেশনে আসলে শৃঙ্খলভাবে কাজ করতে পারাটা সন্দিহান।
দেড়ঘণ্টা জুড়ে উপদেষ্টা বিভিন্ন জনের বক্তব্য শুনেছেন। এরপরও অনেকে বক্তব্য না দিতে পারার আক্ষেপ রয়েছে। তাদের লিখিতভাবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে অথবা ইমেইল যোগে মতামত প্রেরণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেগুলো মূল্যায়ন হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব বলেন, আপনাদের লিখিত বক্তব্য আমরা পর্যালোচনা করব। সার্চ কমিটিকেও প্রেরণ করব সেগুলো।
সার্চ কমিটির আহ্বায়ক জোবায়েদুর রহমান রানা উপদেষ্টার সঙ্গে মঞ্চেই ছিলেন। তিনি স্বাগত ব্ক্তব্য রেখেছেন এবং বিভিন্ন জনের বক্তব্যও শুনেছেন।
আজকের অনুষ্ঠানে প্রতিটি ফেডারেশন/এসোসিয়েশন থেকে একজন সংগঠক, খেলোয়াড়, কোচ ও রেফারি আমন্ত্রিত ছিলেন। ফেডারেশনের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণের বাইরেও এসেছিলেন অনেকে।
বিশেষ করে গত এক দশকে যারা বঞ্চিত, তাদের অনেকেই আজ এই মিলনায়তনে এসেছিলেন। দুই পক্ষ অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানে থাকলেও তেমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ রকম অনুষ্ঠান আয়োজনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আরও দূরদর্শিতা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
এদিকে বাংলাদেশে পঞ্চাশোর্ধ ক্রীড়া ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশনের পাশাপাশি রয়েছে প্রতিটি বিভাগ ও জেলায় ক্রীড়া সংস্থা। এরকম অনেক ফেডারেশনেই সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ একজন ব্যক্তি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে দখল করে রেখেছেন।
বাংলাদেশ অ্যমেচার কুস্তি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তাবিবুর রহমান পাওয়ান চার দশকের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পদাক আসাদুজ্জামান কোহিনুর প্রায় তিন দশক, বাংলাদেশ বাস্কেটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক একে সরকার প্রায় আড়াই দশক একই পদে আছেন।
নতুন উপদেষ্টা ক্রীড়াঙ্গনের সংস্কারের উদ্যোগের প্রথম ধাপে ৪৫টি ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিদের অব্যাহতি দেন। এর আগে সবক’টি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থাও ভেঙে দেন। ক্রীড়াঙ্গনকে গতিশীল করতে একটি সার্চ কমিটি গঠন করেন, যাদের ২ মাসের মধ্যে একটি প্রস্তাবনা দিতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার গোটা ক্রীড়াঙ্গনের মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন তিনি, যেখানে ফেডারেশনের চেয়ার চীরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে ফেলাদের দেন কড়া হুশিয়ারি। এছাড়া ফেডারেশনগুলোর আর্থিক সচ্ছ্বলতা নিশ্চিতে ফি বছর আয়-ব্যায়ের অডিট রিপোর্ট এবং প্রগ্রেস রিপোর্ট জানানোর নির্দেশনা দেন উপদেষ্টা। একই সঙ্গে সর্বস্তরের জবাবদিহিতা করতে বলেন।