স্পোর্টস ডেস্ক : শ্রীলঙ্কা সিরিজের দুর্দান্ত ফর্ম দেশের মাঠেও টেনে আনলো বাংলাদেশ। লঙ্কায় প্রথম টি-টোয়েন্টি হারের পর ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়েছিল। ঘরের মাঠে প্রথম টি-টোয়েন্টিতেই পাকিস্তানকে নাকাল করলো লিটন দাসের দল।
মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে ৭ উইকেট আর ২৭ বল হাতে রেখে হারিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে টানা তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে জয় পেলো টাইগাররা।
বোলাররাই আসল কাজ সেরে রেখেছিলেন। ব্যাটারদের সামনে লক্ষ্য খুব বড় ছিল না, মাত্র ১১১ রানের। তবে শুরুতেই তানজিদ হাসান তামিম আর অধিনায়ক লিটন দাস ফিরে যান। অভিষিক্ত বাঁহাতি পেসার সালমান মির্জাকে হুক করে মিডউইকেটে ক্যাচ দেন তামিম (৪ বলে ১)।
সালমানের পরের ওভারে সাজঘরে ফেরেন লিটন দাসও। শরীরের বাইরে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ হন বাংলাদেশ অধিনায়ক (৪ বলে ১)। ৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
সেই চাপ দারুণভাবে কাটিয়ে উঠেন তাওহিদ হৃদয় আর পারভেজ হোসেন ইমন। তৃতীয় উইকেটে ৬২ বলে ৭৩ রান যোগ করেন তারা। তাতেই বাংলাদেশের জয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়। আব্বাস আফ্রিদির বলে বোল্ড হন হৃদয়। ৩৭ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় করেন ৩৬ রান।
তবে ধীর পিচেও নিজের ব্যাটিংটাই করেছেন পারভেজ হোসেন ইমন। ফাহিম আশরাফকে ছক্কা হাঁকিয়ে ৩৪ বলে ফিফটি পূরণ করেন বাঁহাতি এই ওপেনার। ৩৯ বলে ৩ চার আর ৫ ছক্কায় ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন ইমন।ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনি। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করা জাকের আলী ৯ বলে ১১ করে তার সঙ্গে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন।
এর আগে মিরপুরের দুর্বোধ্য পিচের সুবিধা দারুণ কাজে লাগালেন তাসকিন-মোস্তাফিজরা। টাইগারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৯.৩ ওভারে ১১০ রানেই অলআউট হয় পাকিস্তান।
শেরে বাংলায় টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস। প্রথমেই স্পিন দিয়ে আক্রমণ শুরু করেন তিনি।
শেখ মেহেদী প্রথম ওভারে সুযোগও তৈরি করেছিলেন। চতুর্থ বলে স্লগ সুইপ খেলতে গেলে বল উঠে গিয়েছিল আকাশে। শর্ট ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ ফেলে দেন তাসকিন আহমেদ। ৪ রানে জীবন পান ফখর।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভার করেন তাসকিনই। বল হাতে নিয়ে প্রথম ৪ বলেই দিয়ে বসেন ৯ রান। তবে পঞ্চম বলে উইকেটও নিয়েছেন ডানহাতি এই পেসার। ফ্লিক খেলে ফাইন লেগ বাউন্ডারিতে মোস্তাফিজুর রহমানের ক্যাচ হন সাইম আইয়ুব (৪ বলে ৬)।
তৃতীয় ওভারে শেখ মেহেদীকে হাঁকাতে গিয়ে কাউ কর্নারে শামীম পাটোয়ারীর ক্যাচ হন মোহাম্মদ হারিস (৩ বলে ৪)। ৩২ রানে ২ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
পঞ্চম ওভারে সালমান আগা খেলতেই পারছিলেন না তানজিম হাসান সাকিবকে। টানা চার বল মিস করার পর চিকি শট খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষক লিটনের ক্যাচ হন পাকিস্তান অধিনায়ক (৯ বলে ৩)।
পরের ওভারে বল হাতে নিয়েই উইকেট উপহার দেন মোস্তাফিজুর রহমান। রানের খাতা খোলার আগেই হাসান নওয়াজ ফেরেন সাজঘরে। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৪১ রানে ৪ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
এরপর ফখরের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হন মোহাম্মদ নওয়াজ (৩)। স্ট্রাইকিং এন্ডের কাছে চলে গিয়েছিলেন তিনি। ফখর যখন ফেরত পাঠান, ততক্ষণে লিটন দাস থ্রো করেছেন ননস্ট্রাইকে। বোলার শেখ মেহেদী ভেঙে দেন স্টাম্প। পঞ্চাশের আগে (৪৬ রানে) পড়ে পাকিস্তানের ৫ উইকেট।
একটা প্রান্ত ধরে ফখর জামান দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু তাকে থামতে হয় রানআউটে। মোস্তাফিজের ওভারে খুশদিল দুই নিতে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝি ফখরের সঙ্গে, তাসকিনের থ্রোতে স্ট্রাইকিং এন্ডের স্টাম্প ভাঙেন লিটন। ৩৪ বলে ৪ চার আর ১ ছক্কায় ফখরের ব্যাট থেকে আসে ৪৪ রান।
পরিস্থিতি বুঝে খুশদিল শাহ মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন। ২৩ বলে ১৮ করে তিনি হন মোস্তাফিজের শিকার। স্লোয়ারে মিসটাইমিং করে মিডঅফে রিশাদের ক্যাচ হন খুশদিল। ৯ বলে ৫ করে তাসকিনকে উইকেট দেন ফাহিম আশরাফ।
তাসকিন আহমেদ ২২ রানে নেন ৩টি উইকেট। মোস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে মাত্র ৬ রান খরচ করে শিকার করেন ২ উইকেট। একটি করে উইকেট তানজিম হাসান সাকিব আর শেখ মেহেদী হাসানের।