বুধবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৭:৫২:৩১

'কর্ম না করলে খাব কী', কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বললেন শতবর্ষী বৃদ্ধ

'কর্ম না করলে খাব কী', কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বললেন শতবর্ষী বৃদ্ধ

মানিকগঞ্জ থেকে : সময় মানুষের সব কিছু বদলে দেয়। মানুষ সময়ের কাছে বড্ড অসহায়। সময়ের পরিবর্তনে কাছের মানুষ দূরে চলে যায়, আর আপন হয়ে যায় অজানা অপরিচিত কত শতজন। তবু মানুষকে বেঁচে থাকতে হয় সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে। 

সময় সব কিছু বদলে দিলেও শতবর্ষীয় গণেশ চন্দ্রের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি ৮৫ বছরেও। ভাগ্যের নির্মম পরিণতি আর দরিদ্রতার কষাঘাতে এখনও বৃদ্ধ বয়সেও গলায় বাক্স ঝুলিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে বিভিন্ন এলাকায় হকারি করে পাঁপড় ভাজা বিক্রয় করেন। স্ত্রী ও সন্তানহারা গণেশ চন্দ্রের বাড়ি রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার জুইড়ান মন্ডলের পাড়ায়।

আরিচা ফেরি ঘাটে কথা হয় গণেশ চন্দ্রের। তিনি জানান, গত ৮৫ বছর ধরে পাঁপড় ভেজে হকারি করে বিক্রয় করি। এক আনা দামে প্রথমে পাপড় বিক্রয় শুরু হয়। বর্তমানে পাঁচ টাকা করে বিক্রয় দাম। দীর্ঘ সময়ে এ ব্যবসা করার কারণে মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাটসহ জেলার বেশির ভাগ উপজেলাতে পরিচিত মুখ তিনি। ছোট-বড়, বৃদ্ধ সবাই তার কাছ থেকে কোনো না কোনো সময়ে সুস্বাদু পাঁপড় ভাজা খেয়েছেন।

গণেশের বাড়ি পার্শ্ববর্তী জেলায় হলেও মূলত তিনি মানিকগঞ্জেই ব্যবসা করেন। সেই পাকিস্তান আমলের শুরু থেকেই সকালে নদী পাড় হয়ে এপাড়ে পাঁপড় বিক্রয় করে রাতে নিজ বাড়ি ফেরেন। কোনো এলাকায় ফুটবল খেলার মাঠে টুর্নামেন্ট হলেই দেখা যায় গলায় টিনের একটি বাক্স ঝুলিয়ে পাঁপড় নিয়ে হাজির গণেশ। এ ছাড়া স্কুল-কলেজের সামনে, গানের আসরে পাঁপড় বিক্রয় করেন তিনি।

গণেশ চন্দ্র আরো বলেন, বর্তমানে তার বয়স এক শ পনেরো ছুঁই ছুঁই। আগের মতো হাঁটতে পারেন না। কানেও কম শোনেন। চোখে অনেক সময় ঝাপসা দেখেন। পাঁপড় বোঝাই বাকসের ওজন হয় সাত থেকে আট কেজি। এত কষ্ট করতে সমস্যা হয় কি না জানতে চাইলে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলেন, কর্ম না করলে কি খাব।

পরিবার নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পঞ্চাশ বছর আগে স্ত্রী সাফ্রেদী সাহা অজানা এক রোগে মারা যায়। তার আগেই পাঁচ বছরের এক ছেলে ও কোলে থাকা মেয়েও মারা যায়। তার পর থেকে একা হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় বোনকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। বোন বাড়িতে পাঁপড় ভেঁজে রাখতো আর সারা দিন বিক্রি করতো। সে বোনও বেশ কয়েক বছর আগে বয়সের ভারে অচল হয়ে পড়ে। একমাত্র ভাগনে মারা যাবার পর তাদেরও দায়িত্ব গণেশের ওপর পরে। ভাগনের স্ত্রী বর্তমানে বাড়িতে পাঁপড় ভাজে আর গণেশ বিক্রি করেন। শুধু শেষ চাওয়া কেউ যদি সামান্য মূলধন দিত তাহলে নির্দিষ্ট জায়গায় দোকান দিয়ে বসতে পারতেন তিনি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে