সোমবার, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:৪২:৫৮

মাটির নিচে পাওয়া সোনা-রূপাভর্তি কৌটার রহস্য

মাটির নিচে পাওয়া সোনা-রূপাভর্তি কৌটার রহস্য

মোজাম্মেল হোসেন সজল, মুন্সীগঞ্জ থেকে: মুন্সীগঞ্জে মাটির নিচ থেকে উদ্ধার করা সোনা-রূপা ভর্তি কৌটার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে।  অনুসন্ধানে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে এসেছে।  এগুলো প্রায় চার দশক ধরে মাটির নিচেই ছিল।  এসব সোনা-রূপার গহনাগুলো ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের রথের জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা বিগ্রহের বলে জানা গেছে।  


রোববার সদর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ইদ্রাকপুরে মাটি খননের সময় দুইশ' গ্রাম ওজনের সোনা ও রূপাসহ তামার কৌটা উদ্ধার করা হয়।  নুরুল ইসলাম কমান্ডারের বাড়িতে বহুতল ভবন নির্মাণের সময় শ্রমিকের সাবলের আঘাতে তামার কৌটার মোটকা খুলে গেলে গহনাগুলো বেরিয়ে আসে।
 
প্রাচীন কানের দুল, মাটলি, বাকু, স্বনেৃর পুঁথি, রৌপ্য ও রৌপ্যের মোহরসহ কৌটাটি ট্রেজারিতে জমা রেখেছেন ইউএনও সারাবান তাহুরা।  রথের তিনটি বিগ্রহের গহনাগুলোর দাম অনেক।  এর সংরক্ষণকারী বাড়িটি মেয়েদের দান করে দেয়ার পর অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার কারণে এই মূল্যবান সম্পদ মাটির নিচেই চাপা থেকে যায়।

ইদ্রাকপুরের প্রবীণ বাসিন্দা রমেন কুমার বনিক রবি গণমাধ্যমকে জানান, উদ্ধার হওয়া গহনাগুলোর বাড়িটির পূর্ব মালিক ছিলেন হর কান্ত পাল।  শহরে ইদ্রাকপুরের লক্ষী নারায়ন জিউর মন্দির থেকে প্রায় দুইশ বছর ধরে নিয়মিত রথ যাত্রা হত।  জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা এই তিনটি বিগ্রহকে গহনা পরানো হত।

তিনি জানান, গহনাগুলো মন্দির থেকে চুরির আশঙ্কায় তৎকালীন কর্মকর্তা হর কান্ত পালের তত্ত্বাবধানে ছিল।  এই রথ ইদ্রাকপুরস্থ উপজেলা পরিষদ (তৎকালীন থানা পরিষদ) কার্যালয়ের প্রধান গেটের পাশে এবং মন্দিরের উত্তর-পশ্চিম কোণে মন্দিরের নিজস্ব জায়গায় রাখা হত।  

রমেন কুমার বনিক জানান, স্বাধীনতা কিছু পর এই বিগ্রহ ও রথের ঘোড়া ঢাকার তাঁতী বাজারস্থ জগন্নাথ জিউর মন্দিরে দান করা হয়।  এখনো ওই মন্দিরে এসব বিগ্রহ রয়েছে।  কিন্তু এই পুরনো বিগ্রহের গহনা হার কান্ত পালের কাছেই রয়ে যায়।  নিরাপত্তার কারণে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা বিগ্রহের গহনা মাটির হারির ভেতরে একটি তামার কৌটায় কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখেন।  

তিনি জানান, হর কান্ত পালের কোনো পুত্র ছিল না।  তাই দুই কন্যা ভানু রানী পাল ও শান্তি রানী পালকে প্রায় সাড়ে আট শতাংশের বাড়িটি দান করে যান তিনি।  দানের বছর তিনেক পর ৩০/৩৫ বছর আগে কন্যারা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নরুল ইসলামের কাছে বাড়িটি বিক্রি করে দেন।  সে সময় হর কান্ত পাল সস্ত্রীক মেয়ের বাড়ি মিরকাদিমের নগর কসবায় বসবাস করছিলেন। কিন্তু জমি বিক্রির বছর তিনেক পর হর কান্ত পাল মারা যান।

রমেন কুমার বনিক জানান, মুত্যুর কয়েক বছর আগে থেকেই তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।  তিনি তখনকথা বলতে পারতেন না।  তাই হয়তো মৃত্যুর আগে মাটির নিচে রাখা গহনাগুলোর কথা বলে যেতে পারেননি তিনি।  এর ২/৩ বছর পরই হর কান্ত পালের স্ত্রীও মারা যান।  হর কান্ত পালের কন্যা শান্তি রানী পাল (৭২) রোববার গহনা উদ্ধারের খবর পেয়ে তাদের পুরনো বাড়িতে আসেন।  

তিনি বলেন, এসব গহনা যে মাটির নিচে আছে এটি তার বাবা কখনো বলেননি।  গহনাগুলো তাদের নিজস্ব বা পারিবারিক ছিল না।  এটি মন্দিরের গহনা এবং তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিলেন বাবা।  

জানা গেছে, হর কান্ত পাল ছিলেন একজন স্বর্ণকার।  শহরের সদর রোডের বাজারের কাছে পালের দোকানের বিপরীতেই ছিল তার স্বর্ণের দোকান।  এটি তখন হরকান্ত পোদ্দারের দোকান হিসেবেই পরিচিত ছিল।  ওই সময় তাকে পোদ্দার হিসেবেই সবাই চিনতো।
 
৬২ বছরের বৃদ্ধ রমেন কুমার বনিক রবি জানান, তিনি নিজের চোখে ৫০ বছর আগে এসব গহনা ঠাকুরকে পরাতে দেখেছেন।  তখন রবির বয়স ছিল বার বছর।  বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ বাজারের বস্ত্র ব্যবসায়ী তিনি।
 
জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল গণমাধ্যমকে জানান, মাটির নিচে পাওয়া সোনা-রূপার খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৬ জুলাই,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে