বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৪:২৭:৫১

মাইরের ওপর ওষুধ নাই : শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের উদ্দেশে ইউএনও

মাইরের ওপর ওষুধ নাই : শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের উদ্দেশে ইউএনও

নারায়ণগঞ্জ থেকে : নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় এইচএসসি টেস্ট পরীক্ষায় দুইয়ের অধিক বিষয়ে ফেল করে অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুক্লা সরকারের কাছে যান ছেলেমেয়েদের পাস করিয়ে দেয়ার সুপারিশের জন্য।

কিন্তু তাদের এই আবদারকে 'অন্যায্য' আখ্যায়িত করে সন্তানদের লেখাপড়ার বিষয়ে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে বলেছেন তিনি। ইউএনও তার ফেসবুক পোস্টে সবার শেষে লিখেছেন, ‘মাইরের ওপর ওষুধ নাই।’ ইউএনও লেখেন-

"গত কয়েকদিন ধরে বেশকিছু অভিভাবক এবং ছাত্র-ছাত্রী আসছেন। তারা সবাই এইচএসসি টেস্ট পরীক্ষায় দুইয়ের অধিক বিষয়ে অ'কৃ'তকার্য। তাদের আবদার, আমি যেন তাদের পাস করিয়ে দেয়ার সুপারিশ করি। তাদের জিজ্ঞেস করলাম, কেন তারা ফেল করল? ছাত্র-ছাত্রীদের ভাষ্য- এই একটু স'ম'স্যা ছিল। কী স'ম'স্যা খো'লাসা করে বলে না।

বেশিরভাগ মা-বাবা বলল, তাদের সন্তানরা পরীক্ষার সময় অসুস্থ ছিল। অ'সু'স্থতার ধরন জিজ্ঞেস করলে বলে, সবার জ্বর ছিল। কেউ কেউ বলল, কলেজের স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ে নাই তাই ফেল করিয়েছে। কোনো কোনো মা বলল, তাদের সংসারে অ'শা'ন্তি, ছেলে পড়তে পারেনি।

একজন ছাত্র বলল, প্রিন্সিপাল স্যার কলেজ ড্রেস ছাড়া কলেজে ঢুকতে দেয় না, চুলে আর্মি কাট দিতে বলে এবং খুব আশ্চর্য লাগল ছেলের মাও একই বিষয়ে অভিযোগ করছে! জিজ্ঞেস করলাম এইচএসসির পূর্ণরূপ কী? মাশাল্লাহ কেউই বলতে পারল না।

ওহো এর মধ্যে আবার সরকারি স্কুলে ক্লাস সিক্সে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স না পাওয়া ছেলে-মেয়েদের বাবা-মা আছেন। আজ একজন বাবা তার মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পেরনো ছেলের সামনে বলছেন, ম্যাডাম আমার ছেলে বলে দিছে সে যদি এই স্কুলে না ভর্তি হতে পারে তাহলে আর লেখাপড়াই করবে না! সাব্বাস বাপ-বেটা!

শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের উদ্দেশে সম্মান রেখেই বলছি, আপনাদের মনে কেন এত মায়া, মায়ার বশে আপনারা পরীক্ষার হলে বাচ্চাদের কথা বলতে দেন, তারা একজন আর একজনের দেখে লিখলেও আপনারা তা দেখেন না। এখনও কেন শুনতে হয়, এই চুপ কর, ম্যাজিস্ট্রেট আসছে।

আপনারা মনে করেন বাচ্চাগুলা পাস করুক, ভালো কথা কিন্তু পরীক্ষার হলে সুযোগ দিয়ে কেন? কেন আপনাদের শুনতে হবে আপনাদের কাছে না পড়লে আপনারা ফেল করায় দেন। আপনারা কি ভাবেন এতে করে বাচ্চাগুলোর উপকার হচ্ছে, তারা আপনাদের মনে রাখবে? একটা সময়ে এরাই আপনাকে অস'ম্মান করবে, পা'ত্তা দেবে না।

প্রিয় বাবা-মা,

আপনি আপনার সন্তানের সামনে শিক্ষকের বি'রু'দ্ধে কথা বলছেন, শিক্ষককে ছোট করছেন, আপনার সন্তান আর কদিন পর আপনাকে সম্মান করবে তো! সন্তান ফেল করলে/চান্স না পেলে সব শিক্ষকের দোষ, প্রশ্ন কঠিন হয়েছে, প্রশ্ন ফাঁ'স হয়েছে, সিস্টেম ভালো না, টাকা খেয়েছে ব্লা ব্লা।

কোনো শিক্ষকের কি এই সাধ্য আছে যে, খাতায় লেখার পরও তাকে ফেল করায় দেয়! যে বাচ্চাটা ইংরেজিতে তিন/তের পেয়েছে তাকে কিভাবে তেত্রিশ করবে!

বাচ্চাকে শখ করে, আদরের আ'তিশ'য্যে, আধুনিকতার সং'স্প'র্শে আইফোন কিনে দিলেন, বাইক কিনে দিলেন কিন্তু সে আদৌ স্কুলে/কলেজে যায় কিনা কয়দিন খোঁ'জ নিয়েছেন। সে কার সঙ্গে চলাফেরা করে খোঁ'জ নিয়েছেন শেষ কবে? কবে সে অন্য কাউকে খুব ছোট্ট কাজে ধন্যবাদ বলেছে?

আচ্ছা সে কি কখনও তার স্কুলের দফতরিকে সালাম দিয়েছে? সে কি স্কুলের মাঠ যে ঝাড়ু দেয় তাকে থ্যাংকু বলেছে? সে যে রিকশায় আসা-যাওয়া করে তাকে কোনোদিন থ্যাংকু বলেছে?

সং'বিধিব'দ্ধ স'ত'র্কীকরণ: মাইরের উপর ওষুধ নাই!”

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে