সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:২৬:৪০

হুমকির মুখে আগামীর কর্নধার ফুলশিশুরা (পর্ব ১)

হুমকির মুখে আগামীর কর্নধার ফুলশিশুরা (পর্ব ১)

পাঠকই লেখক ডেস্ক: শিশু বিজ্ঞানী ফ্রয়েবেলের মতে-কুঁড়ি থেকে ফুলের ফুটে ওঠার যে আনন্দ শিশু খেলাধুলার মধ্য থেকে সেই আনন্দই পায়। খেলাধুলার মধ্য দিয়ে যে আনন্দ লাভ করা যায়-তাই শিশু মনের পরিপূর্ণ বিকাশের সহায়ক। খেলা ভুলিয়ে রাখে অনেক কিছু। দৈনন্দিন জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে ব্যথা বেদনাকে দূরে সরিয়ে রেখে খেলা মনকে সজীবতায় ভড়িয়ে রাখে। ফলে খেলাধুলা শিশুর ক্রমবিকাশে যোগ করে একটা সুস্থ সুন্দর মন কার্টুন বা শিক্ষামূলক টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখার জন্য খুবই আগ্রহ থাকে ।শিশুদের তাদের এ উৎসাহ আর আনন্দকে আরেকটু বাড়িয়ে দিতে অভিভাবকরাও বেশ
তৎপর থাকেন। কিন্তু এক্ষেত্রে একটু সাবধান হওয়া উচিত কারণ দু’বছরের নিচের শিশুদের এসব দেখায় অহেতুক সময় নষ্ট হয় এবং তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় বলে প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।


যুক্তরাষ্ট্রেও বোস্টনে এএপির বার্ষিক সম্মেলনে এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। গবেষকরা জানান, দু’বছরের কম বয়সী শিশুরা টেলিভিশনে কোনো অনুষ্ঠান দেখে কিছুই শেখে না, বা তাদের মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তাও হয় না বরং টেলিভিশনে এসব অনুষ্ঠান অতিরিক্ত দেখায় তাদের কথা বলার বিকাশটা অনেকটা ধীরে হয়। এ কারণে তারা খারাপ আচরণও করতে থাকেএসব কারণে বাচ্চাদের এ ধরনের টেলিভিশন অনুষ্ঠানগুলোর কঠোর সমালোচনা করেছেন গবেষকরা আমেরিকান একাডেমী অব পেডিয়াট্রিকসের ওই গবেষকরা বলেন, শিশুদের মস্তিষ্কের
বিকাশে খুব ভালো ও সহজ উপায় হলো, তাদের এলোমেলোভাবে খেলতে দিতে হবে এ সুযোগটা বাচ্চাদের এককভাবেও দেয়া যেতে পারে, আবার এর সঙ্গে অভিভাবকরাও যুক্ত হতে পারেন। অভিভাবকরাও যদি শিশুদের সঙ্গে নিয়ে টেলিভিশনে কোনো অনুষ্ঠান দেখেন, তা হলেও শিশুদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে বলে জানান ওই গবেষকরাগবেষকরা সতর্ক করে বলেন, ঘুমোতে যাওয়ার আগে শিশুদেও টেলিভিশন দেখা মোটেও উচিত নয় এতে তাদের ঘুমের খারাপ অভ্যাস হয়ে যেতে পারে, আর এর প্রভাব সরাসরি তাদের মেজাজ ও আচরণের ওপর পড়ে ওই গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, অনেক ভিডিও অনুষ্ঠানই শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক বলে প্রচার করা হয় কিন্তু এটাকে সমর্থন করা যাবে না।তবে যদি এমন গুণগতমানের কোনো অনুষ্ঠান হয়, যে অনুষ্ঠানের বিষয় ও প্রেক্ষাপট শিশুরা পুরোপুরি বুঝতে সক্ষম,তাহলে কেবল তা দেখতে পারে সাধারণ অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা জানি যে শিশুদের সুস্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। কিন্তু এক গবেষণায় শিশুদের ঘুমের আরেকটি প্রয়োজনীয়তা জানা গেছে দেখা গেছে, শিশুদের পর্যাপ্ত ঘুম না হলে তাদের বেশি মোটা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, আর বেশি ঘুমালে শরীর ঠিক থাকে।একদল গবেষক ৮ থেকে ১১ বছর বয়সী ৩৭টি শিশুকে দুই ভাগে ভাগ করে তাদের প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন দেড় ঘণ্টা বেশি ঘুম, আবার পরের সপ্তাহে প্রতিদিন দেড় ঘণ্টা করে কম ঘুমানোর
ব্যবস্থা করেন।তাদের ঘুমের সময় নিরূপণ করা হয় ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে এবং প্রতিদিন খাবারের পরিমাণ লিপিবদ্ধ করা হয়তাদের রক্তে লেপটিনের পরিমাণও বের করা হয়।লেপটিন খিদে নিয়ন্ত্রণ করা হরমোন, এর পরিমাণ বেশি হলে শরীরের মেদ বাড়েপরীক্ষায় দেখা গেছে, সপ্তাহে বেশি ঘুমানো শিশুদের রক্তে লেপটিনের মাত্রা কমে যায়, তখন তারা পরিমিত খায় এবং শরীরেও অতিরিক্ত মেদ জমে না।কিন্তু কম ঘুমালে শিশুরা বেশি বেশি খায় এবং তাদের ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যায়।


শিশুদের সামর্থ্য কমে যাচ্ছে।আজকের যুগে শিশুরা তাদের মা-বাবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না।শারীরিক সুস্থতা বা সামর্থ্য বিবেচনায় তারা মা-বাবার শৈশবকালীন অবস্থার তুলনায় পিছিয়ে রয়েছেযুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে অনুষ্ঠিত আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক সম্মেলনে গবেষকেরা ১৯ নভেম্বর ২০১৩ এ তথ্য জানিয়েছেন শিশু যেদিন প্রথম আম খায়, বড়রা তাকে আমের নাম ও স্বাদের সাথে পরিচিত করে তাকে বলা হয়, এটা আম, উমমম... দারুণ, মজা বা মিষ্টি।এরপর থেকে সে কখনই আমকে জাম মনে করে না আমকে আমই মনে করে। তেমনি ছোটবেলার কল্পনার গল্পগুলোকে বড়রা কল্পনা বা স্বপ্ন না বলে চাপাবাজি বলে অভিহিত করলে, সে ঐ বিশেষণগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করে কারণ শিশুকালে ঐ স্বপ্নই তার কাছে বড় সত্যি অর্থাৎ বাবা-মায়ের দেয়া বিশেষণ ‘মিথ্যা’/‘চাপাবাজি’/ ‘দুষ্টামি’ই তার কাছে বড় সত্যি হিসেবে ধরা দেয়। এভাবেই মিথ্যাচারিতা বা চাপাবাজি তার মনে সত্য ও ভাল হিসেবে গ্রথিত হয়। বাল্যকাল ও কৈশোরে ঐ আচরণে অভ্যস্ত হলে বড় হয়েও সেখান থেকে সে বেরিয়ে আসতে পারে না মনে রাখতে হবে, পিতা-মাতার লালন-পালনের ধরন থেকেই শিশুর পরবর্তী বিকাশ হয়। এই বয়েসে অনেক শিশু অতিচঞ্চল শিশু নামেও আত্মীয়-স্বজন বা পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে অভিহিত হতে পারে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই মা-বাবা, ভাই-বোন, দাদা-দাদী অর্থাৎ বাসার বড়রা সবাই মিলে শিশুটিকে সময় দিন মনোযোগ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ খেলাধুলা করুন দেখবেন একটা সময় সবই ঠিক হয়ে যাবে।
লেখকঃ সাইফুল ইসলাম
(সম্পাদক দায়ী নয়)
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে