রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ০১:০৩:৫৪

১৮ বছর পর হাসির জীবনে সবচেয়ে বড় খুশির সংবাদটি দিলেন স্বামী তুষার

১৮ বছর পর হাসির জীবনে সবচেয়ে বড় খুশির সংবাদটি দিলেন স্বামী তুষার

বিচিত্র জগৎ ডেস্ক: নিখোঁ'জের ১৮ বছর পর বাবা-মাকে খুঁ'জে পেলেন হাসি আক্তার (২৩) নামে এক তরুণী। পাঁচ বছর বয়সে বাবা-মাকে হা'রিয়ে অনা'থ আ'শ্রমের চার দেয়ালে ১৮ বছর কেটেছে তার। আপন বলতে কেউ ছিল না হাসির।

প্রাপ্তব'য়স্ক হওয়ার পর গাইবান্ধা সরকারি শিশু পরিবারে (বালক) অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি পান হাসি। তখনো এতিম বলেই নিজেকে জানতেন হাসি। অনা'থ আ'শ্রম থেকে বেরিয়ে চাকরি জীবন ভালোই কাটছিল তার। এরই মধ্যে গত ১৮ অক্টোবর নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার চৌখালী গ্রামের বাসিন্দা রায়হান হাসান তুষারের সঙ্গে বিয়ে হয় হাসির।

বিয়ের এক মাসের মধ্যে স্বামী রায়হান হোসেন তুষারের কাছ থেকে ১৮ বছর পর আগে হারানো বাবা-মায়ের সন্ধা'ন পান হাসি। হাসির জীবনে সবচেয়ে বড় খুশির সংবাদ দেন স্বামী তুষার। অনেকটা স্বপ্নের মতো, বিশ্বাস হচ্ছিল না তার। অবশেষে স্বামীর মাধ্যমে মায়ের সঙ্গে দেখা করে হাসি জানলেন এতি'ম নন, পরিবার এবং বাবা-মা আছে তার।

হাসি আক্তার রাজবাড়ী সদর উপজেলা খানখানাপুর ইউনিয়নের মল্লিকপাড়া গ্রামের মো. খলিলের নাতনি। ১৮ বছর পর হা'রা'নো মেয়ে হাসিকে খুঁ'জে পেয়ে আনন্দে আ'ত্মহা'রা হয়ে যান মা খাদিজা বেগম, নানা খলিল ও মামা সাইদুলসহ এলাকাবাসী। এ সময় আ'বেগা'প্লু'ত হয়ে কেঁ'দে ফেলেন সবাই।

খোঁ'জ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ১৮ বছর আগে পাঁচ বছর বয়সে রাজবাড়ী থেকে ট্রেনে দাদির সঙ্গে রাজশাহীতে বাবার বাড়ি যাচ্ছিল হাসি। ওই ট্রেনেই হা'রিয়ে যায় হাসি। এরপর বাবা-মা কিংবা পরিবারের কাউকে খুঁ'জে পায়নি হাসি। ওই সময় শুধু মায়ের নাম খাদিজা বেগম, বাবার নাম হাসেম আলী, নানার নাম খলিল, মামার নাম সাইদুল ও দুলু এবং নানা বাড়ি ‘খানখানপুর’ বলে জানতো হাসি। কিন্তু তাকে ওই ঠিকানায় কেউ নিয়ে যায়নি। তাকে অনা'থ আ'শ্রমে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

চলতি বছর গাইবান্ধা সরকারি শিশু পরিবারে অফিস সহকারী পদে চাকরি হয় হাসির। গত ১৮ অক্টোবর নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার চৌখালী গ্রামের বাসিন্দা রায়হান হাসান তুষারের সঙ্গে বিয়ে হয় তার।

বিয়ের পর হাসির কাছে ছোটবেলার স্মৃ'তি ও হা'রিয়ে যাওয়ার গল্প শুনতে চান স্বামী তুষার। তখন হাসি স্বামীকে বলেন খানখানপুর এলাকা, নানা খলিল ও মামা সাইদুল। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারি না। পরবর্তীতে গুগল ও ফেসবুকের মাধ্যমে ‘খানখানপুর’ সন্ধান করেন তুষার। এ সময় তিনি দেখতে পান রাজবাড়ীতে খানখানাপুর বলে একটি ইউনিয়ন রয়েছে। ওই ঠিকানায় খোঁ'জ করলেই মিলে যায় হাসির পরিবারের সন্ধান। শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে হাসিকে নিয়ে রাজবাড়ীতে আসেন তুষার।

পরে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) দিলসাদ বেগম, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, প্রেস ক্লাবের সভাপতি খান মো. জহুরুল হক ও একুশে টিভির জেলা প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর হোসেন নানা-নানি ও মামার হাতে হাসিকে তুলে দেন।

এরপর হাসি, স্বামী তুষার, চাচা শ্বশুর জাহাঙ্গীর আরিফকে বাড়ি নিয়ে যান হাসির নানা। গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পর হাসিকে দেখতে শত শত মানুষের ভিড় জমে। এ সময় হাসিকে জ'ড়িয়ে ধ'রে অনেকেই আ'বেগা'প্লু'ত হন।

হাসির স্বামী রায়হান হোসেন তুষার বলেন, পরিবারের কেউ নেই জেনেই ১৮ অক্টোবর হাসিকে বিয়ে করি। এরপর হাসির কাছে ছোটবেলার স্মৃ'তি জানতে চাই। তখন নানা, মামা ও এলাকার নাম বলে হাসি। মূলত এলাকার নাম সঠিক বলতে পারছিল না হাসি। খানখানাপুরের স্থলে খানখানপুর বলেছিল। পরে গুগোল ও ফেসবুকের সাহায্যে রাজবাড়ীর খানখানাপুরের সন্ধা'ন পাই। শনিবার রাজবাড়ীতে আসি আমরা। এখানে এসে ১৮ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া হাসির পরিবারকে এত সহজে পাব কল্প'নাও করিনি।

হাসি আক্তার বলেন, ছোটবেলায় ট্রেন থেকে হা'রিয়ে যাই। এরপর রাজশাহী ছোটমনি নিবাস, সেখান থেকে গাইবান্ধা সরকারি শিশু পরিবারে (বালিকা) বে'ড়ে উঠি। সেখানে পড়াশোনা করি। ওই সময় অনেকের অভিভাবক আশ্র'মে আসতো, শিশুদের সঙ্গে দেখা করতো। কিন্তু আমার সঙ্গে দেখা করতে কেউ আসতো না। মনের মধ্যে চা'পা ক'ষ্ট নিয়ে বড় হয়েছি আমি। কোনোদিন ভাবিনি হারানো পরিবারকে খুঁ'জে পাব। কারণ একটা দীর্ঘ সময় নিজেকে এতি'ম বলেই জানতাম।

সমাজসেবা কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সরকারি চাকরি পাই। পরে তুষারের সঙ্গে বিয়ে হয়। মূলত স্বামীর সহা'য়তায় হারানো বাবা-মা, নানা-নানি, মামাসহ সবাইকে খুঁ'জে পেয়েছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। স্বামী তুষারের প্রতি কৃতজ্ঞতা। ১৮ বছর পর সবাইকে কাছে পেয়ে আমি সত্যিই অনেক অনেক আনন্দিত।

হাসির মা খাদিজা বেগম বলেন, ১৮ বছর পর হাসিকে খুঁ'জে পাব ভাবিনি। আজ আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। হাসি হা'রিয়ে যাওয়ার পর অনেক কেঁ'দেছি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি যেন মেয়েকে খুঁ'জে পাই। অবশেষে তাকে পেলাম।


তিনি আরও বলেন, পাঁচ বছর বয়সে হাসি আর আমাকে বাবার বাড়িতে রেখে যায় হাসির বাবা। এরপর দাদির সঙ্গে রাজশাহীতে যেতে গিয়ে ট্রেনে হারি'য়ে যায় হাসি। অনেক খোঁ'জাখুঁ'জি করেও তাকে খুঁ'জে পাইনি। দীর্ঘদিন হাসির বাবা আমাকে না নেয়ায় আমাকে বিয়ে দেন বাবা-মা। হঠাৎ জানতে পারলাম হাসি বেঁ'চে আছে। হাসিকে কাছে পেয়ে আমার মনটা ভরে গেল।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে