বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৮, ১০:২৯:২৯

ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ, টার্গেট চীন!

ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ, টার্গেট চীন!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দীর্ঘতম পাল্লার ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ করা হয়েছে ওডিশা উপকূলের আবদুল কালাম আইল্যান্ড থেকে। বৃহস্পতিবার সকালে পঞ্চম বারের জন্য অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রটি ছুড়ল ভারত। ৫৫০০ থেকে ৫৮০০ কিলোমিটার দূরে পরমাণু আক্রমণে সক্ষম ভারতের এই ক্ষেপণাস্ত্র।

তবে, এ বারের উৎক্ষেপণের সঙ্গে আগের উৎক্ষেপণগুলির পার্থক্য রয়েছে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর। এর আগের চার বার নির্মাতা সংস্থা ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) অগ্নি-৫ ছুড়েছিল। এই প্রথম বার অগ্নি-৫ ছোড়া হলো ভারতীয় বাহিনীর পরমাণু অস্ত্রাগারের নিয়ন্ত্রক স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কম্যান্ড-এর (এসএফসি) তরফ থেকে।

অগ্নি-৫ হলো ভারতের হাতে থাকা একমাত্র ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম)। ৫,৫০০ কিলোমিটার বা তার চেয়েও বেশি দূরবর্তী স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম যে সব ক্ষেপণাস্ত্র, সেগুলিকেই আইসিবিএম গোত্রে ফেলা হয়। ৫০ টন ওজনের এই ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি ১৫০০ কিলোগ্রাম ওজনের পরমাণু অস্ত্র বহন করতে পারে।

অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা কত, সে নিয়ে অবশ্য চীনের দাবি অন্য রকম। এর আগে যখনই অগ্নি-৫-এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ হয়েছে, তখনই তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে চীন। দক্ষিণ এশিয়া শক্তির ভারসাম্য নষ্ট করছে ভারতের এই ক্ষেপণাস্ত্র, বার বার বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে এমন মন্তব্য করা হয়েছে। বেইজিংয়ের দাবি, ৫ হাজার ৮০০ কিলোমিটার নয়, অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের আসল পাল্লা ৮ হাজার কিলোমিটার। আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার কথা মাথায় রেখে ভারত ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা কমিয়ে দেখাচ্ছে বলে বেইজিংয়ের দাবি।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলেন, চীনের এই রকম প্রতিক্রিয়ার কারণ আসলে অন্য। অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্র চীনের যেকোনো প্রান্তে আঘাত হানতে সক্ষম এবং এই ক্ষেপণাস্ত্রটি তৈরি করে ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই পাঁচ সুপার-পাওয়ারের (আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন, ফ্রান্স) ‘ক্লাব’-এ ঢুকে পড়েছে ভারত, যাদের হাতে আইসিবিএম রয়েছে। সামরিক ক্ষেত্রে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এই বিরাট সাফল্য চিনের জন্য খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয় বলেই তারা বার বার অগ্নি-৫-এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের বিরুদ্ধে সরব হয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০১২-র এপ্রিলে প্রথম বার অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ হয়েছিল। ২০১৩-র সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় বার। ২০১৫-র জানুয়ারিতে হয় তৃতীয় উৎক্ষেপণ। চতুর্থটি হয় ২০১৬-র ডিসেম্বরে। ক্ষেপণাস্ত্রটির ওই চারটি উৎক্ষেপণ ছিল ‘এক্সপেরিমেন্টাল টেস্ট’ বা পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ।

২০১৬-র ডিসেম্বরে চতুর্থ বার ক্ষেপণাস্ত্রটি সফল ভাবে ছুড়েই ডিআরডিও জানিয়ে দিয়েছিল, এ বার ক্ষেপণাস্ত্রটি তুলে দেয়া হবে তিন বাহিনীর হয়ে যৌথভাবে পরমাণু অস্ত্রাগারের দায়িত্বে থাকা এসএফসি-র হাতে। কয়েক বার ‘ইউজার ট্রায়াল’-এর পরে ক্ষেপণাস্ত্রটি বাহিনীতে মোতায়েন করবে এসএফসি। বৃহস্পতিবারের উৎক্ষেপণ ছিল অগ্নি-৫-এর প্রথম ‘ইউজার ট্রায়াল’। অগ্নি-৫-এর সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।

অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রকে ট্রান্সপোর্ট ইরেক্টর লঞ্চার বা টিইএল (ট্রাকের মতো দেখতে যে সামরিক যান ক্ষেপণাস্ত্রকে বয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং ছুড়তেও পারে) থেকে ছোড়া যায়। ছোড়া যায় রেল মোবাইল লঞ্চার (ওয়াগনের মতো দেখতে যে সামরিক যান রেল ট্র্যাকের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্রকে বয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং ছুড়তেও পারে) থেকেও। ফলে ভারতের স্থলভাগের যেকোনো প্রান্ত থেকে অগ্নি-৫ নিক্ষেপ করা সম্ভব। এই সুবিধার কারণেই অগ্নি-৫-এর পাল্লার মধ্যে এসে গেছে প্রায় গোটা এশিয়া মহাদেশ (সম্পূর্ণ চীন, রাশিয়ার ৯০ শতাংশ এলাকা), ইউরোপের সিংহভাগ, আফ্রিকার বিরাট অংশ। এসেছে ভারত মহাসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরের বিশাল বিস্তারও।

অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে চীনের প্রতিক্রিয়া বিরূপ বলে যে ভারত আরো বড় পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বানানো বন্ধ করে দিয়েছে, তা কিন্তু নয়। অগ্নি-৬ এখন নির্মীয়মান। ওই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ১০ হাজার কিলোমিটার হতে চলেছে বলে খবর। শুধু স্থলভাগ থেকে নয়, সাবমেরিন থেকেও ছোড়া যাবে অগ্নি-৬। তবে সাবমেরিন লঞ্চেবল সংস্করণটির নাম হবে ‘কে-৬’, খবর ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রের।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে