বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১৮, ১২:২৩:০৯

দুদিন ধরে খাটের নীচে স্ত্রী-মেয়ের মৃতদেহ রেখে বিরিয়ানি-মদ খায় স্বামী

দুদিন ধরে খাটের নীচে স্ত্রী-মেয়ের মৃতদেহ রেখে বিরিয়ানি-মদ খায় স্বামী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শনিবার বিকালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরেছিল পূজা। তারপর থেকে প্রতিবেশীরা আর তাকে দেখেনি। সোমবার সকালেও পূজাকে পরীক্ষা দিতে যেতে দেখেননি তারা। কাকতালীয় ভাবে ওই দু’দিন দেখা যায়নি তার মা মিঠু দেবনাথকেও।

তাই জল্পনাটা বেশ ছড়িয়েই পড়েছিল। সোমবার বিকালে তাই পূজার বাবাকে সামনে পেয়েই এসব নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন তারা। জানতে চেয়েছিলেন স্ত্রী-মেয়ের খবর। প্রথমে আমতা আমতা করে দু’চার কথা বললেও, পরে ছুটে বাড়ির মধ্যে ঢুকে যান বছর চল্লিশের শেখর দেবনাথ।

তখনই শেখরের পিছু নেন প্রতিবেশীরা। বাড়ির দরজা ভেঙেই ঘরে ঢোকেন তারা। দেখা যায়, খাটের উপর থেকে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন শেখর। প্রতিবেশীরা তাকে নিরস্ত করেন। কিন্তু, ঘরময় বোঁটকা গন্ধটাও নাকে আসছিল।

কীসের গন্ধ? কেনই বা শেখর আত্মহত্যার চেষ্টা করতে গেলেন? এ সব নিয়ে প্রশ্ন শুরু করতেই ভেঙে পড়েন শেখর। জানান, স্ত্রী ও মেয়েকে খুন করে তিনি খাটের তলায় রেখে দিয়েছেন। চমকে ওঠেন প্রতিবেশীরা। খবর দেওয়া হয় পুলিশে।

শেখরের কথা মতো খাটের তলা থেকে উদ্ধার করা হয় মিঠু দেবনাথ (৩৫) এবং তার মেয়ে পূজার প্ল্যাস্টিকে মোড়া মৃতদেহ। সোমবার বিকালে ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের হাবড়া থানার বিশ্বাসহাটি এলাকায়। জখম শেখরকে প্রথমে মছলন্দপুর ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা স্থীতিশীল।

পুলিশের কাছে জেরায় শেখর স্বীকার করেছেন, তিনিই স্ত্রী-মেয়েকে মেরেছেন। কী ভাবে? শনিবার পূজা পরীক্ষা দিয়ে বাড়ির ফেরার সময় তার মা বাড়িতে ছিল না। সেই সময় শেখর প্রথমে ভারী কাঠের টুকরো দিয়ে তার মাথায় সজোরে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে পূজা।

এর পর তার গলায় শাড়ির ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করা হয়। কিছু ক্ষণ পর মিঠুদেবী বাড়ি ফিরলে তাকেও একই কায়দায় মারেন শেখর। তারপর প্লাস্টিকে দেহ দু’টি মুড়ে ঘরের খাটের তলায় রেখে দেন। এ দিন দেহ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে ওই ঘর থেকে বিরিয়ানির প্যাকেট এবং মদের বোতলও পেয়েছে পুলিশ।

কিন্তু, কেন এমন ঘটনা ঘটালেন শেখর?

প্রতিবেশীদের বেশ কিছু দিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। বাজারে অনেক টাকা দেনাও হয়ে গিয়েছিল। প্রতিবেশীরা জানান, প্রথমে ব্যাগ তৈরির কারখানা ছিল শেখরের। সেটি উঠে যাওয়ার পর কাপড় সেলাইয়ের কারবার শুরু করেছিলেন।

কিন্তু, বছর খানেক আগে সেটিও উঠে যায়। চিটফান্ড সংস্থায় রাখার ফলে বেশ কিছু টাকা লোকসান করেছিলেন। তার উপর বাড়ি করার জন্য অনেক টাকা ধারও হয়ে গিয়েছিল। এ সবের জন্যই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন শেখর— অনুমান প্রতিবেশীদের।

আর স্ত্রী-মেয়েকে খুনের প্রসঙ্গে শেখরের স্বীকারোক্তি, ‘এ ভাবে বাঁচা যায় না। আমি মরে গেলে ওদের কী হতো। তাই এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। কিন্তু, দু’জন মানুষকে খুন করার পর কী ভাবে শেখর অমন নির্বিকার ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন? এ প্রশ্নের জবাব মেলেনি।

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে