সোমবার, ১৮ জুন, ২০১৮, ১০:৪১:৫৫

অবরোধের মধ্যেও কাতারের আছে ১০০ বছর চলার সম্পদ!

অবরোধের মধ্যেও কাতারের আছে ১০০ বছর চলার সম্পদ!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অবরোধের মধ্যেও কাতারের আছে ১০০ বছর চলার সম্পদ! গত ৬ জুন কাতারের ওপর সৌদি আরব ও তার মিত্রদের আরোপিত অবরোধের এক বছর হয়। ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের কথিত অভিযোগে দেশটির ওপর এই অবরোধ আরোপ করা হয়। অবরোধের ফলে কেমন চলছে বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির এই ছোট্ট দেশটি?

সোদি আরবের কথা শুনলে মনে হবে এই অবরোধের ফলে তারা বড় ধরনের সফলতা পেয়েছে। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কাছে এই সফলতা এতোটাই বেশি যে তিনি তার উপসাগরীয় প্রতিবেশিকে কোনো ধরনের পাত্তাই দিচ্ছে না।

যেমনটা মোহাম্মদ বিন সালমানকে উদ্ধৃত করে রাজকীয় আদালত সম্পর্কিত জুনিয়র এক মন্ত্রী ও তার উপদেষ্টা টুইটে বলেছেন, ‘আমরা কোনো কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছি না। কিন্তু কাতার সব কিছু থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে।’

কিন্তু বাস্তবতা তেমনটি নয়। বিভিন্ন মানদণ্ডে কাতারের ওপর আরোপিত স্থল, আকাশ ও সমুদ্র অবরোধ ব্যর্থ হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতে দেশটির আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে। মাথাপিছু আয়ের হিসাবে কাতার বিশ্বের এক নম্বর দেশ। এর রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ, যা ২০১৮ সালের বাজেট উদ্ধৃত রাখবে। দেশটির অর্থনীতি ধারণার চেয়ে দ্রুত গতিতে বাড়ছে।

লন্ডন কিংস কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডেভিড রবার্টস বলেন, কিভাবে এই অবরোধ সফল হবে সেটা ভাবা কঠিন। কারণ কাতার আত্মসমর্পণ করেনি। সৌদি জোটের বাইরের গুরুত্বপূর্ণ কোনো দেশ এই অবরোধে যোগ দেয়নি।

অবশ্য ব্লুমবার্গের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক অর্থনীতিবিদ জিয়াদ দাউদ বলেন, শুরুতে এর প্রভাব ছিল মারাত্মক। একদিনেই শেয়ারমার্কেটের ৭ শতাংশ সূচক পড়ে যায়। কারণ দেশটি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছিল। জুনে আমদানি কমে গিয়েছিল ৪০ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়েছিল। বেড়ে গিয়েছিল খাবারের দাম। রিয়েল এস্টেট, পর্যটন এবং হোটেল ব্যবসা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

তিনি বলেন, কাতারকে সব ধরনের আমদানিতে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। তবে তাদের পকেট অনেক বড় এবং এটা তারা বহন করতে পারবে। তারা তুরস্ক এবং ইরান থেকে আমদানি করতে শুরু করে।

সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত দেশটি থেকে তাদের ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলে নেয়। কাতারের ব্যাংকগুলো ফাঁকা হয়ে যায়। তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের তেমন বেগ পেতে হয়নি। এই শূন্যতা পূরণে রাষ্ট্রীয় ৩২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যথেষ্ট ছিল।

কাতার স্থানীয় ব্যাংকগুলোকে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়িয়ে দেয়। তারা ২০২০ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল কোম্পানির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের কথাবার্তা শুরু করে।

কাতারের ২০১৮ সালের অধিকাংশ ব্যয় ছিল প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত। এরপরও কাতারের যে পরিমাণ সম্পদ আছে সেটা দিয়ে দেশটি ২১৩৩ সাল পর্যন্ত ঘাটতি পূরণ করতে পারবে বলে মনে করেন জিয়াদ দাউদ।

টেক্সাসের রিচ ইউনিভার্সিটি’র বেকার ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক পলিসির মধ্যপ্রাচ্য বিষয় ফেলো ক্রিস্টিনা সি উলরিশেন বলেন, প্লান বি ছাড়াই জুনে তড়িঘরি করে নেয়া সৌদি জোটের সিদ্ধান্ত শুরুতে কিছু আতঙ্ক ছড়ালেও প্রত্যাশিত ফল আনেনি। তবে মুখরক্ষায় সৌদি এবং আমিরাত অবরোধ তুলে নিতে অনাগ্রহী। কিন্তু কাতারিরা প্রমাণ করেছে তারা এই অবস্থার মধ্যেও বেঁচে থাকতে পারে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে