সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৭, ০৭:২২:০৫

চাষী নজরুলের আলোচিত পাঁচ চলচ্চিত্র

চাষী নজরুলের আলোচিত পাঁচ চলচ্চিত্র

বিনোদন ডেস্ক  :   চাষী নজরুল ইসলাম, বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো একটি নাম। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণের অন্যতম কাণ্ডারি তিনি।

২০১৫ এর ১১ জানুয়ারি আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়া বাংলাদেশের স্বনামধন্য এই চলচ্চিত্র পরিচালকের জন্মদিন ২৩ অক্টোবর। ১৯৪১ সালের এইদিনে জন্ম নেয়া এই পরিচালক জীবদ্দশায় ৩৫টির মতো চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। প্রতিটি চলচ্চিত্রই ছিল দর্শকনন্দিত। প্রভাবশালী এই চলচ্চিত্র নির্মাতার জন্মদিনে তার আলোচিত পাঁচটি চলচ্চিত্র সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন এখানে-

► ওরা ১১ জন:
স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে প্রথম চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’। চাষী নজরুল ইসলাম ছিলেন এই চলচ্চিত্রের পরিচালক। মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা) এর প্রযোজনায় এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক, খসরু, শাবানা, এটিএম শামসুজ্জামান, খলিলুল্লাহ খান, সৈয়দ হাসান ইমাম সহ আরও অনেকে।

১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই চলচ্চিত্র শ্রেষ্ঠ হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছিল। সদ্য যুদ্ধ ফেরত কয়েকজন অভিনেতাকে নিয়ে চাষী নজরুল ইসলাম তৈরি করেছিলেন তাঁর জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। মুক্তিযুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণও তুলে ধরেছিলেন তিনি এই চলচ্চিত্রে।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের কিছুটা অংশও পাওয়া যায় এই চলচ্চিত্রে। যেন মুক্তিযুদ্ধকে ভুলে না গিয়ে তাঁর ইতিহাসকে বহন করে নিয়ে যেতে পারে স্মৃতিচারণের মাধ্যমে, সে কারণেই রুপালি পর্দায় মুক্তিযুদ্ধকে বন্দী করেছিলেন চাষী নজরুল ইসলাম।

► শুভদা :
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর উপন্যাস অবলম্বনে চাষী নজরুল ইসলাম তৈরি করেছিলেন ‘শুভদা’। রাজ্জাক, বুলবুল আহমেদ, আনোয়ারা, জিনাত প্রমুখের অভিনয়ে এই চলচ্চিত্রে মুক্তি পায় ১৯৮৬ সালে। গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের গল্প নিয়ে এগিয়েছে শুভদার কাহিনী।

জুয়া ও গাঁজায় আসক্ত হারান, তাঁর স্ত্রী শুভদা, দুই কন্যা ললনা ও ছলনা, অসুস্থ ছেলে মাধব আর এক বিধবা বোনকে নিয়ে হারানের সংসার। গল্পে আরও আছে সদানন্দ, সারদার নামে আরও কিছু চরিত্র। নানা টানা-পোড়েনের ঘটনা নিয়ে আবর্তিত হয়েছে ‘শুভদা’র কাহিনী। চাষী নজরুল ইসলাম এর এই চলচ্চিত্র ১৯৮৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, অভিনেত্রী, পরিচালক, প্রযোজক, সংগীত পরিচালকসহ পুরস্কার পায় ১১টি বিভাগে।

► হাঙর নদী গ্রেনেড:
প্রখ্যাত সাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত উপন্যাস ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ নিয়ে চাষী নজরুল ইসলাম তৈরি করেন তাঁর বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে করা চাষী নজরুল ইসলামের আরেকটি অসাধারণ চলচ্চিত্র বলে বিবেচিত এই ছবিটি।

সোহেল রানা, সুচরিতা, অরুণা বিশ্বাস প্রত্যেকে তাঁদের চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তাঁদের অভিনয় নৈপুণ্যের মাধ্যমে। বুড়ির চরিত্রে সুচরিতার দুই মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে নিজের সন্তানকে পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দেয়ার দৃশ্য আজও মানুষকে কাঁদায়। এই চলচ্চিত্র চাষী নজরুল ইসলামকে ২২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আবারও শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার এনে দেয়।

► হাসন রাজা:
মরমী সাধক হাছন রাজার জীবন ও কর্ম  নিয়ে ২০০২ সালে চাষী নজরুল ইসলাম তৈরি করেন ‘হাছন রাজা’। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন হেলাল খান। বিনোদিনীর চরিত্রে ছিলেন শমী কায়সার। সিলেট অঞ্চলের জমিদারপুত্র হাছন রাজাকে নিয়ে নির্মিত চাষী নজরুল ইসলামের এই চলচ্চিত্রও অর্জন করেছিল শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ ছয়টি জাতীয় পুরস্কার।

► শাস্তি:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প ‘শাস্তি’ অবলম্বনে ২০০৪ সালে মুক্তি পায় ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় চাষী নজরুল ইসলামের চলচ্চিত্র ‘শাস্তি’। রিয়াজ, পূর্ণিমা, ইলিয়াস কাঞ্চন ও চম্পার অসাধারণ অভিনয় আর চাষী নজরুলের নির্মাণশৈলিতে ‘শাস্তি’ সেসময় দারুণ জনপ্রিয় হয়। গ্রামের দুইভাইয়ের সংসারের অভাব-অনটন, তাঁদের দুই স্ত্রীর নিত্যদিনের ঝগড়া আর গল্পের শেষে দুই বৌয়েরই করুণ পরিণতি নিয়ে ‘শাস্তি’র গল্প।

এই চলচ্চিত্রে আরও অভিনয় করেছিলেন শলিদুল আলম সাচ্চু, এটিএম শামসুজ্জামান, আহমেদ শরীফ প্রমুখ। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০০৪ এ শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা ও অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন ও চম্পা।

চাষী নজরুল ইসলাম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলচ্চিত্রের কাজ করে গেছেন। তাঁর অন্যান্য বিখ্যাত চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে ‘বেহুলা লক্ষিন্দর’, ‘দাঙ্গা ফাসাদ’, ‘মেঘের পরে মেঘ’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘সুভা’ প্রভৃতি।

এমটিনিউজ২৪/এম.জে/এস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে