বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৫:০৮:৪৫

নায়করাজ রাজ্জাকের জানা-অজানা সব তথ্য

নায়করাজ রাজ্জাকের জানা-অজানা সব তথ্য

এবিএম সোহেল রশিদ : বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি নায়ক রাজ রাজ্জাকের ৭৫তম জন্মদিন আজ।

তার পুরো নাম আব্দুর রাজ্জাক (জন্ম ২৩ জানুয়ারি, ১৯৪২), যিনি নায়করাজ রাজ্জাক নামে সুপরিচিত, একজন বিখ্যাত বাংলা চলচ্চিত্র অভিনেতা। ষাটের দশকের মাঝের দিকে তিনি চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ষাটের দশকের বাকি বছরগুলোতে এবং সত্তরের দশকেও তাঁকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রধান অভিনেতা হিসেবে বিবেচনা করা হত।

শৈশবকাল : রাজ্জাক পশ্চিমবঙ্গের (বর্তমান ভারতের) কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় স্বরসতী পূজা চলাকালীন সময়ে মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের জন্য তার গেম টিচার রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁকে বেছে নেন নায়ক অর্থাৎ কেন্দ্রীয় চরিত্রে। শিশু-কিশোরদের নিয়ে লেখা নাটক বিদ্রোহীতে গ্রামীণ কিশোর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই নায়ক রাজের অভিনয়ে সম্পৃক্ততা।

ঢালিউড : তিনি ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাড়ি জমান। প্রথমদিকে রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে "ঘরোয়া" নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আব্দুল জব্বার খানের সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান।

সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের ‘তেরো নাম্বার ফেকু অস্তাগড় লেন’ চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার কাছে নিজ মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক।

পরবর্তীতে ‘কার বউ’, ‘ডাক বাবু’, ‘আখেরী স্টেশন’-সহ আরও বেশ ক'টি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করে ফেলেন। পরে বেহুলা চলচ্চিত্রে তিনি নায়ক হিসেবে ঢালিউডে উপস্থিত হন সদর্পে।

তিনি প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র।

সম্মাননা : ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বেশ দাপটের সাথেই ঢালিউডে সেরা নায়ক হয়ে অভিনয় করেন রাজ্জাক। এর মধ্য দিয়েই তিনি অর্জন করেন নায়করাজ রাজ্জাক খেতাব। অর্জন করেন একাধিক সম্মাননা। এছাড়াও, রাজ্জাক জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করছেন।

জন্মদিন পালন : প্রতি বছরই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি হিসেবে রাজ্জাক গুলশানের নিজ বাসভবন 'লক্ষ্মীকুঞ্জে' ঘরোয়াভাবে জন্মদিন পালন করে থাকেন।

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ :
বছর চলচ্চিত্র ভূমিকা পরিচালক সহশিল্পী নোট
‘১৯৬৬ আখেরি স্টেশন’ (সুরুর বারা বাঙ্কভি), ‘১৯৬৬ ১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন’ (বশীর হোসেন), ‘১৯৬৬ কাগজের নৌকা’ (সুভাষ দত্ত),  ‘১৯৬৬ ‘বেহুলা’ (জহির রায়হান), ‘১৯৬৭ আগুন নিয়ে খেলা’ (আমজাদ হোসেন / নূরুল হক), ‘১৯৬৭ আনোয়ারা’ (জহির রায়হান), ‘১৯৬৭ দুই ভাই’ (রহিম নেওয়াজ / নূরুল হক), ‘১৯৬৮ নিশি হলো ভোর’ (নূর আলম জিকো), ‘১৯৬৮ আবির্ভাব’ (সুভাষ দত্ত), ‘১৯৬৮ এতটুকু আশা’ (নারায়ণ ঘোষ মিতা), ‘১৯৬৮ সুয়োরাণী দুয়োরাণী’ (জহির রায়হান), ‘১৯৬৯ মনের মতো বউ’ (রহিম নেওয়াজ), ‘১৯৬৯ ময়নামতি’ (কাজী জহির), ‘১৯৬৯ আগন্তুক’ (বাবুল চৌধুরী), ‘১৯৬৯ নীল আকাশের নীচে’ (নারায়ণ ঘোষ মিতা), ‘১৯৭০ যে আগুনে পুড়ি’ (আমির হোসেন) ‘১৯৭০ ক,খ,গ.ঘ.ঙ’ (নারায়ণ ঘোষ মিতা) ‘১৯৭০ আঁকা বাকা’ (বাবুল চৌধুরী), ‘জীবন থেকে নেয়া’ (জহির রায়হান), ‘১৯৭০ পীচ ঢালা পথ’ (এহতেশাম), ‘১৯৭০ যোগ বিয়োগ’ (নূরুল হক বাচ্চু), ‘১৯৭০ দর্পচুর্ণ’ (নজরুল ইসলাম), ‘১৯৭০ মধুমিলন’ (কাজী জহির) ‘১৯৭০ ঢেউয়ের পর ঢেউ’ (মোহসিন) ‘১৯৭০ টাকা আনা পাই’ (বাবুল চৌধুরী) ‘১৯৭০ কাঁচ কাটা হীরা’ (আব্দুল জব্বার খান), ‘১৯৭০ দ্বীপ নেভে নাই’ (নারায়ণ ঘোষ মিতা) ‘১৯৭০ স্বরলিপি’ (নজরুল ইসলাম), ‘১৯৭০ নাচের পুতুল’ (অশোক ঘোষ), ‘১৯৭০ স্মৃতিটুকু থাক’ (আলমগীর কুমকুম), ‘১৯৭২ অশ্রু দিয়ে লেখা’ (কামাল আহমেদ) ‘১৯৭২ এরাও মানুষ’ (নারায়ণ ঘোষ মিতা),
‘১৯৭২ ওরা ১১ জন’ (চাষী নজরুল ইসলাম), ‘১৯৭২ ছন্দ হারিয়ে গেল’ (এস এম শফি), ‘১৯৭২ অবুঝ মন’ (কাজী জহির), ‘১৯৭৩ রংবাজ’ (জহিরুল হক), ‘১৯৭৩ ঝড়ের পাখি’ (সি বি জামান), ‘১৯৭৪ আলোর মিছিল’ (নারায়ণ ঘোষ মিতা), ‘১৯৭৪ ভুল যখন ভাঙল’ (রফিকুল বারী চৌধুরী), ‘১৯৭৪ বেঈমান’ (রুহুল আমিন), ‘১৯৭৪ পরিচয়’ (আজিজুর রহমান), (১৯৭৪ অবাক পৃথিবী’ (মোস্তফা মেহমুদ), ‘১৯৭৪ বাদী থেকে বেগম’ (আলী নওশের মহসিন ববিতা), ‘১৯৭৫ সাধু শয়তান’ (মোহাম্মদ সাঈদ), ‘১৯৭৫ আলো তুমি আলেয়া’ (দিলীপ সোম),
‘১৯৭৫ অনেক প্রেম অনেক জ্বালা’ (নাজমুল হুদা মিন্টু), ‘১৯৭৫ মায়ার বাঁধন’ (মুস্তাফিজ), ‘১৯৭৬ গুণ্ডা’ (আলমগীর কুমকুম)
‘১৯৭৬ আগুন’ (মহসিন), ‘১৯৭৭ অমর প্রেম’ (আজিজুর রহমান), ‘১৯৭৭ অনন্ত প্রেম’ (রাজ্জাক), ‘১৯৭৮ সোহাগ’ (সাইফুল আজম কাশেম), ‘১৯৭৮ অগ্নিশিখা’ (আজিজুর রহমান), ‘১৯৭৮ অশিক্ষিত’ (আজিজুর রহমান), ‘১৯৮০ জোকার’ (আজহারুল ইসলাম খান), ‘১৯৮০ ছুটির ঘন্টা’ (আজিজুর রহমান), ‘১৯৮০ আনারকলি’ (দিলীপ বিশ্বাস), ‘১৯৮২ দুই পয়সার আলতা’ (কাজল আমজাদ হোসেন), ‘১৯৮২ রাজা সাহেব’ (খসরু নোমান), ‘১৯৮৩ লালু ভুলু’ (কামাল আহমেদ), ‘১৯৮৪ চন্দ্রনাথ’ (চাষী নজরুল ইসলাম), ‘১৯৮৭ রাজলক্ষ্মী’ (শ্রীকান্ত বুলবুল আহমেদ), ‘১৯৮৮ জামানা’ (জাকারিয়া হাবিব)
‘১৯৮৯ রাম রহিম জন’ (সত্য সাহা), ‘১৯৯২ অন্ধ বিশ্বাস’ (মতিন রহমান) ‘১৯৯৪ সতীনের সংসার’ (জহিরুল হক), ‘১৯৯৭ জজসাহেব’ (সামসুদ্দীন টগর), ‘১৯৯৭ বাবা কেন চাকর’ (রাজ্জাক), ‘১৯৯৮ পৃথিবী তোমার আমার’ (বাদল খন্দকার), ‘২০০০ বাবা কেন আসামী’ (মমতাজুর রহমান আকবর), ‘২০০০
২০০১ কঠিন বাস্তব’ (মনতাজুর রহমান আকবর) ‘২০০১ মরণ নিয়ে খেলা’ (রাজ্জাক) ‘২০০২ সমাজকে বদলে দাও’ (কাজী হায়াৎ), ‘২০০২ কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ (মৌসুমী), ‘২০০৪ বাপ বেটার লড়াই’ (এফ আই মানিক), ‘২০০৬ পিতার আসন’ (এফ আই মানিক), ‘২০০৮ এক টাকার বউ’ (পি এ কাজল), ‘২০০৮ পিতামাতার আমানত’ (এফ আই মানিক), ‘২০০৮ আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’ (এস এ হক অলিক), ‘২০০৮ জমিদারবাড়ির মেয়ে’ (আজিজুর রহমান), ‘২০০৯ মিয়াবাড়ির চাকর’ (শাহাদাত হোসেন লিটন), ‘২০০৯ ভালোবাসার শেষ নেই’ (রেজা লতিফ), ‘২০১০ বাপ বড় না শ্বশুর বড়’ (শাহাদাত হোসেন লিটন), ‘২০১১ হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ’ (গাজী মাজহারম্নল আনোয়ার)

পুরস্কার : জাতীয় চলচ্চিত্র আজীবন সম্মাননা পুরস্কার (২০১৩)[৫]
মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা (২০১৪)
২১ জানুয়ারি, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে