শনিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৮:০৯:৩২

বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে আপন দুই ভাই

বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে আপন দুই ভাই

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: ৩৪তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছিলেন আপন দুই ভাই। তবে এরকম ঘটনা বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে সেটাই প্রথম ছিল না। এর আগেও ঘটেছে এমন ঘটনা। ২৫তম বিসিএসেও আপন দুই ভাই নিয়োগ পেয়েছিলেন। এরপর আরো নয়টি বিসিএস পেরিয়ে ৩৪তম বিসিএসে ঘটে বিরল ঘটনা। ঠাকুরগাঁয়ের বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার কৃতি সন্তান ওই দুই ভাই। বয়সে দু্ই বছরের ছোট-বড়।

বড় ভাই মো. হুমায়ুন কবির। ছোট ভাই শাহীনুর ইসলাম শাহীন। আপন হলেও আচরণে পুরোপুরি ভিন্ন তারা। বড় ভাই ঠিক যতোটাই ধীর-স্থির শান্ত, ছোট ভাই ততোটাই দুরন্ত। চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে দুই ভাই বলেছেন জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়ে বিসিএস ক্যাডার হয়ে উঠার গল্প। বালিয়াডাঙ্গী২৪ এর পাঠকদের জন্য সেই গল্প তুলে ধরা হল ।

দুই ভাই বালিয়াডাঙ্গি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়লেও কলেজ ছিল ভিন্ন। বড়ভাই হুমায়ুন পড়েছেন দিনাজপুর সরকারি কলেজে, আর পরিবারের ছোট ছেলেটিকে বাবা ভর্তি ঢাকার নটরডেম কলেজে করিয়েছিলেন। সেখান থেকে এইচএসসি পাশ করে শাহীন লেখাপড়া করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে আর হুমায়ুন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগে।

মু্ক্তিযোদ্ধা বাবার সন্তানেরা প্রতি পদেই স্মরণ করেন বাবাকে। বাবাকে হারিয়েছেন সদ্য। তবে বাবার বলা কথা পাথেয় হয়ে রয়েছে তাদের জীবনে। বাবা বলেছিলেন: দেশের জন্য কিছু করবে। মানুষের জন্য কিছু করবে। সবসময় চেষ্টা করবে সবার উপকার করতে।

বাবার আদর্শ নিয়েই এগিয়ে চলছেন তারা। তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের সেবা করার জন্য পুলিশ ক্যাডারেই বেশি সুযোগ মনে করায় পুলিশ ক্যাডার পছন্দ ছিল তাদের। সম্প্রতি বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ শেষের পর কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়েছেন তারা। বড় ভাই হুমায়ুন যোগ দিয়েছেন শেরপুর জেলার সহকারি পুলিশ সুপার হিসেবে। আর ছোট ভাই শাহীন কুড়িগ্রাম জেলার সহকারি পুলিশ সুপার।

তবে কঠোর ট্রেনিং পিরিয়ডটাও তারা উপভোগ করেছেন অনেক। ছোট ভাই শাহীন বলেন: একই চাকরিতে বড় ভাইয়ার সাথে জয়েন করবো, বিষয়টা অনেক আনন্দদায়ক হলেও শঙ্কাও ছিল। ভাবতাম, বড় ভাইয়া থাকায় আমি হয়তো ফ্রি-ভাবে থাকতে পারবো না। সবার সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলতে পারবো না। কিন্তু টেনিংয়ে গিয়ে দেখা গেলো ঠিক তার উল্টোটা। ভাইয়া আর আমি দু’জন দু’জনের বন্ধু হয়ে উঠলাম। একই সাথে সবসময থাকতাম। সবাই আমাদের দু’জনের কমন ফ্রেন্ড হয়ে গেলো।

সেসময়ের স্মৃতিচারণ করে বড় ভাই হুমায়ুন কবির বলেন: বিষয়টা অনেক মজার ছিল। একশ ৪১ জনের একটা বড় দলের মধ্যে সিনিয়র স্যার বা আমাদের যারা ট্রেনিং করিয়েছেন তাদের সবাইকে চেনা সম্ভব হতো না। কিন্তু আমাদের দু’ভাইকে সবাই চিনতেন। কোন কিছু হলেই দু’ভাইকে সবার আগে ডাকতেন প্রশিক্ষকরা। বলতেন, বিভিন্ন কসরত করে দেখাতে। প্রথম প্রথম ছোট ভাইয়ের চেয়ে ভালো করতে হবে এমন একটা প্রতিযোগিতা কাজ করতো। কিন্তু পরে যখন দেখলাম বিষয়টা আসলে মজা করার জন্য তখন আর করতে চাইতাম না।

ছোট ভাই শাহীনের চেয়ে ভালো করার একটা আকাঙ্খা সবসময়ই কাজ করতো হুমায়ুনের ভেতরে। কিন্তু, শাহীন ছোট থেকেই খেলাধূলা ও দৌড় ঝাপে পারদর্শী হওয়াতে তাকে হারানো ততোটা সহজ ছিল না।

সৌভাগ্যবশত ট্রেনিং পিরিয়ডে ডেলটা নামক একই কোম্পানিতে ছিলেন দুই ভাই। থাকতেন পাশাপাশি রুমে। বিপদে-আপদে হয়েছেন একে অপরের সঙ্গী। একভাই কোন ভুলের কারণে শাস্তি পেলে কষ্টের সীমা থাকতোনা অন্য ভাইয়ের ।

মো. আব্দুল বারেক ও শামসুননাহার দম্পতির এ দুই সন্তান আলোর দিশা হয়েছেন ঠাকুরগাঁয়ের বালিয়াডাঙ্গীর। তাদেরকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন অনেকে। মা শামসুন নাহার ও বাবার অনুপ্রেরণা ও আত্মত্যাগের কারণেই আজ তারা এ অবস্থানে বলে উল্লেখ করেন পুলিশ কর্মকর্তা দুই ভাই।

বড় ভাই হুমায়নের স্বপ্ন: কমিউনিটি পুলিশিং এর মাধ্যমে মুষের সেবা করা। এ লক্ষ্যে কমিউনিটি পুলিশিংকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান যাতে করে ঘটনা ঘটার অগেই তা প্রতিরোধ করা যায়।

ভাইয়ের সাথে সুর মিলিয়েই ছোট ভাই শাহীন বলেন: এমনভাবে কাজ করতে চাই যেন বাংলাদেশ পুলিশ রোল মডেল হয়ে উঠতে পারে। একটি পর্যায়ে এমন বাংলাদেশ দেখতে চাই যেখানে অপরাধ বলে কিছু থাকবে না।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে