বুধবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:৪৬:৫৯

রসরাজের ফেসবুক টার্গেটে ৩-৪ জন

রসরাজের ফেসবুক টার্গেটে ৩-৪ জন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে : রসরাজ দাসের (২৭) ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড জানতো আরো ৩/৪ জন। তারাই এখন পুলিশের টার্গেট। জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন- তাদের ধরতে পারলেই মূল ঘটনা বের হয়ে আসবে। রসরাজের ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর ছবি আপলোড করার ঘটনায় তুলকালাম হয় নাসিরনগরে।

ছবি আপলোড করার পরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ গ্রেপ্তার করে তাকে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা দিয়ে পাঠানো হয় জেল হাজতে। ইতিমধ্যে রসরাজের মোবাইলফোনের বিশেষজ্ঞ পরীক্ষা হয়েছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনে। তাতে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ ছবিটি রসরাজের মোবাইল থেকে আপলোড হয়নি। অন্য কোথাও থেকে সেটি আপলোড হয়েছে। তবে তার একাউন্টে ছবিটি পাওয়া গেছে।

তবে রসরাজ নিজে না অন্য কেউ ওই ছবি আপলোড করেছে তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। ওদিকে ছবি আপলোড করার বিষয়ে পুলিশের সন্দেহের তালিকায় থাকা আল আমিন সাইবার ক্যাফের মালিক জাহাঙ্গীর আলমকে ৩য় দফায় ৩ দিনের রিমান্ডে  নেয়া হয়েছে। তার দোকানের কম্পিউটার থেকেই ছবি আপলোড হয়েছে সেটিও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। তার দোকান থেকে ঘটনার পর জব্দ করা দুটি হার্ডডিস্ক পরীক্ষায় এমন আলামত পাওয়া যায়নি। পরে রিমান্ডে জাহাঙ্গীরের দেয়া তথ্যমতে আরো দুটি হার্ডডিস্ক উদ্ধার করে পুলিশ। সেগুলো পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনে বিশেষজ্ঞ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।  

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দায়িত্বশীল একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, রসরাজের  মোবাইলফোন থেকে ছবি আপলোড করা না হলেও ছবিটি তার নিজের  ফেসবুক একাউন্টে ছিল। আমরা এখনো নিশ্চিত নই ছবিটি কে আপলোড করেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না অন্য কেউ আপলোড করার কথা স্বীকার করছে বা তদন্তে বেড়িয়ে এসেছে সে পর্যন্ত দায় তার কাঁধেই।  

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন- রসরাজ  ফেসবুকে ছবিটি যদি আপলোড নাও করে থাকে সে দায় এড়াতে পারে না।  সে একটি একাউন্ট খুললো অন্য আরেকজনের সহায়তায়। তার একাউন্টের পাসওয়ার্ড জানতো আরো ২/৪ জন। এরাই এখন আমাদের টার্গেট। ধরতে পারলেই সব পরিষ্কার হবে। তাদের প্রশ্ন ফেসবুক চালানোর মতো অবস্থা না থাকলে রসরাজ কেন এটি খুললো। এটিও তার দায়।

ছবি আপলোড করার পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে গত ২৯শে অক্টোবর পুলিশ রসরাজকে গ্রেপ্তার করে এবং তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠায়। এর জের ধরে পরদিন ৩০শে অক্টোবর নাসিরনগর ও হরিপুরে তাণ্ডব চলে। রসরাজ এখনো কারাগারে রয়েছে। আগামী ৩রা জানুয়ারি তার জামিন শুনানি হবে।

এদিকে ঘটনার পর ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া রসরাজের পরিবার বাড়িতে ফিরেছে। নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু জাফর জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে অভয় দেয়ায় রসরাজের পরিবারের সদস্যরা নিজ গ্রাম হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড়ে ফিরে এসেছেন।

৩য় দফা রিমান্ডে জাহাঙ্গীর: হরিপুরের আল আমিন সাইবার ক্যাফের মালিক জাহাঙ্গীর আলমকে ৩য় দফা ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিনের আদালত গতকাল তার এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ তার ৫ দিনের রিমান্ড চেয়েছিলো। ২৮শে  নভেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে শহরের কালাই শ্রীপাড়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়ে তাকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পেশ করা হয়।

অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সফিকুল ইসলামের আদালত তার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এরপর ৩রা নভেম্বর তাকে দ্বিতীয় দফায় আরো ৩ দিনের রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ধর্মীয় অবমাননাকর ছবিটি তার দোকান থেকে আপলোড করা হয়েছে বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। যদিও তার দোকানের দুটি কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের বিশেষজ্ঞ পরীক্ষায় এমন আলামত পাওয়া যায়নি। তবে তার দোকানের আরেকটি কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক ঐ সময় পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ।

প্রথম দফা জিজ্ঞাসাবাদে তার দেয়া তথ্যানুসারে দুটি হার্ডডিস্ক উদ্ধার করে পুলিশ। সেগুলো বিশেষজ্ঞ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন জানান, তাকে ভাঙচুরের অন্য আরেকটি মামলায় তৃতীয় দফা রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন-জিজ্ঞাসাবাদের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য তাকে আবারো রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এমজমিন
৭ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে