বৃহস্পতিবার, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০২:৫৬:৩৩

দুই জোটের অর্ধেক দলেরই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই

দুই জোটের অর্ধেক দলেরই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই

এমরান হোসাইন শেখ : দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক জোটের অর্ধেক শরিক দলেরই দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশনে (ইসি)এসব দল নিবন্ধিত না থাকায় তারা এককভাবে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। ইসি সূত্র এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, শরিকদের অনেক দলই শুরুতে নিবন্ধন না থাকা, দলের নিবন্ধিত অংশের জোট ত্যাগ এবং উচ্চ আদালতের রায়ে বিএনপি জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত ইসলামীর নিবন্ধন স্থগিত হওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি, ন্যাপ ভাসানী, পিপলস লীগ, ডেমোক্রেটিক লীগ, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) নির্বাচন কমিশনে কোনও নিবন্ধন নেই। এছাড়া ইসলামী ঐক্যজোট ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মূল অংশ সম্প্রতি এ জোট ত্যাগ করেছে। এ দল দু’টির খণ্ডিত অংশ জোটের সঙ্গে থাকলেও এ অংশের হাতে নিবন্ধন নেই। আর সাম্যবাদী দলের যে অংশটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ত্যাগ করে বিএনপি জোটে যুক্ত হয়েছে, তাদেরও নিবন্ধন নেই। এদিকে, বিএনপি জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন গত ১ আগস্ট ২০১৩ তারিখে হাইকোর্ট এক আদেশে অবৈধ ঘোষণা করায় দলটির নিবন্ধন বর্তমানে স্থগিত রয়েছে।

আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, জাসদ ও ১১ দলের সমন্বয়ে গত ২০০৪ সালে গঠিত ১৪ দলীয় জোট গঠনের শুরুতেই ১১ দলীয় জোটের একাধিক শরিক এ জোটে যুক্ত হওয়া থেকে বিরত থাকে। ফলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটকে মোটা দাগে ‘১৪ দলীয় জোট’ বলা হলেও এ জোটে দল সংখ্যা ৮ থেকে ১০টির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এ জোটে বর্তমানে রয়েছে ১০টি দল। যাদের মধ্যে কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ (রেজাউর রশীদ খান) ও গণ-আজাদী লীগ-এ  ৪টি দলের ইসিতে নিবন্ধন নেই। অবশ্য এ ১০ দলের বাইরে বর্তমানে জাতীয় পার্টি (জেপি) ও তরিকত ফেডারেশন বাংলাদেশ ১৪ দলীয় জোটের সব কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। ইসিতে নিবন্ধতি এ দল দু’টি ১৪ দলীয় জোটভুক্ত নাকি মহাজোটের অংশ, জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ সে বিষয়টি স্পষ্ট করেনি।

আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে কোনও বাধা নিষেধ না থাকলেও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে দলগুলোর নিবন্ধন করার বিষয়টি যুক্ত করা হয়। বলা হয়, ইসিতে কোনও দল নিবন্ধিত না হলে তারা দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে পারবে না বলেও নিবন্ধনের শর্তে উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য কিছু শর্ত পূরণের বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়।

আরপিওতে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বিষয়ে বলা হয় ‘নিবন্ধন পেতে হলে একটি দলকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কোনও নির্বাচনে অন্তত একটি সংসদীয় আসন পেতে হবে, অথবা যে কোনও একটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে ওই আসনে প্রদত্ত মোট ভোটের ৫ শতাংশ পেতে হবে, অথবা দলের একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে, দেশের অন্তত এক তৃতীয়াংশ (২১টি) প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা কমিটি থাকতে হবে এবং অন্তত ১০০ উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রামাণিক দলিল থাকতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘জোটের সঙ্গে আর ভোটের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। রাজনৈতিক দল করার অধিকার যেমন সবার রয়েছে। তেমনি দলগুলোর জোটবদ্ধ হতে নিশ্চয়ই কোনও বাধা থাকার কথা নয়। আর রাজিনৈতিক দল বা জোট গঠন নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারের বিষয়ও নয়। তবে, দলগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে নির্বাচন কমিশনে সেই দল নিবন্ধিত থাকতে হবে। কমিশনে নিবন্ধন না থাকলে সেই দল দলীয়ভাবে নির্বাচন অংশ নিতে পারবে না। আগে এই বিধান কেবল জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে ছিল, এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও এই বিধান যুক্ত হয়েছে।’

নতুন করে কোনও দলকে নিবন্ধন দেওয়ার কোনও চিন্ত‍া ইসির এই মুহূর্তে নেই বলেও এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব জানান। -বাংলা ট্রিবিউন
০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে