বুধবার, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০১:৩১:৪৫

হঠাৎ উপকূলের নদ-নদীতে রুপালি ইলিশ

হঠাৎ উপকূলের নদ-নদীতে রুপালি ইলিশ

শওকত আলী বাবু, বাগেরহাট : অনুকূল আবহাওয়ার কারণে বঙ্গোপসাগরসহ সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়তে শুরু করেছে  রুপালি ইলিশ। সাগর থেকে আহরিত ইলিশের সাইজ ও দাম ভাল হওয়ায় জেলেদের মুখে হাসি ফুটেছে।

এদিকে, বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য আড়ত কেবি বাজার চত্বরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। মৎস্য ব্যবসায়ীদের আশা এ বছর পুরো মৌসুম জুড়ে সাগরে এভাবে ইলিশ ধরা পড়লে গত বছরের ধারদেনা পরিশোধ করে তারা লাভের মুখ দেখতে পারবেন।

বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য বন্দর কেবি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, দড়াটানা নদীতে ইলিশ নিয়ে নোঙর করে রয়েছে বেশ কিছু ইলিশ বোঝাই ট্রলার। কাক ডাকা ভোর থেকে শরু হয় এ মৎস্য বন্দরের কার্যক্রম। প্রথমে নদীর ঘাটে ভেড়ানো ট্রলার থেকে ঝাকা বোঝাই করে নামানো হয় ইলিশ।

সকাল সাড়ে ৬ টায় ঘণ্টা বাজিয়ে ইলিশ পাইকারিভাবে বেচা-কেনার ডাক শুরু হয়। সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে ইলিশের পাইকারি বেচাকেনা। প্রতিদিনই প্রায় কয়েক টন ইলিশ বিক্রি হয় এ বাজারে। লেনদেন হয় কয়েক কোটি টাকার। ইলিশের দাম কমসহ অধিক মাছ ধরা পড়ায় এ মৌসুমের শুরুতে পাইকারি বাজারে ক্রেতার সংখ্যাও তাই বেশি।

ইলিশ আমদানির খবর শুনে বেশ কিছু পাইকার ভিড় করছে কেবি বাজার মৎস্য কেন্দ্রে। তারা মোটামুটি বড় সাইজের ইলিশ বেশি দামের আশায় এখান থেকে কিনে উত্তরাঞ্চলসহ রাজধানী ঢাকায় পাঠাচ্ছে।

এদিকে, গত কয়েক দিন ধরে কেবি বাজারে প্রচুর ইলিশ এসেছে এমন খবর শুনে অনেক খুচরা ক্রেতারা সেখানে ছুটে যান। ৬/৭ জনের এক একটি গ্রুপ করে কেউ এক পোন কেউ বা দুই পোন ইলিশ পাইকারি দরে কিনে পরে ভাগ করে নিয়েছেন।

কেবি বাজারের আড়তদার মো. সিরাজ উদ্দিন শাহিনের সঙ্গে কথা হলে তার সত্যতা মেলে। তিনি বলেন, মূলত এই মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ীরা দাদনের মাধ্যমে প্রায় সারা বছর ব্যবসা করে থাকে। ফলে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া নির্ধারিত ট্রলার ছাড়া অন্য এলাকার ট্রলারের মাছ এখানে আসে না।

তবে কয়েক দিন আগে নিম্নচাপের কারণে সাগরে মাছ ধরার অসংখ্য ট্রলার বাগেরহাটের কেবি বাজারে মাছ বিক্রি করেছে। অনেকটা বিপদে পড়েই তারা এখানে মাছ বিক্রি করেছে। ট্রলারে মাছ নষ্ট হওয়া ও তেল খরচের কথা বিবেচনা করেই ওই সকল অতিথি ট্রলার থেকে মাছ পাওয়া গেছে কিছুটা কম দামে।

তিনি আরো বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর সাগরে মাছ ধরা পড়ছে বেশি। এ বছর মাছের সাইজ খুব বড় না হলেও মাঝারি ও ছোট সাইজের মাছের বেচাকেনা বেশ ভালই। বাজারে ছোট সাইজের এক পোন (৮০ পিস ইলিশ) ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

আর মাঝারি সাইজের এক পোন ইলিশ ১৪ থেকে ১৬  হাজার টাকার বেচাকেনা হয়েছে। তিনি জানান, বড় সাইজের ইলিশ তেমন না আসায় দামও তেমন উঠছে না। তারপরও জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়লে তারা বিগত বছরের লোকসান পুষিয়ে উঠতে পারবে বলে অনেক মৎস্যজীবী আশা করেন।

এদিকে, ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায় পাইকারি বাজার থেকে কেনা এক পোন (৮০টি) ইলিশ খুচরা বাজারে কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ টাকায়। আর ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকায় কেনা মাঝারি সাইজের ইলিশ খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬শ থেকে ৭শ টাকায়।

তবে এর মধ্যে অতিথি ট্রলারের কারণে খুচরা বাজারে ছোট সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি সাড়ে ৩শ বা তার কমেও বিক্রি হয়েছে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ বেশ ঘটা করেই কয়েক দিন বাজার থেকে ইলিশ কিনেছে।

সাগর থেকে ফেরা মাঝি রহিম শেখ বলেন, সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। তিনি সোমবার  ট্রলারে করে এক ট্রিপে ৫ হাজারের বেশি ইলিশ এনেছেন। সাগরে এ ধরনের পরিবেশ আরো কয়েকদিন বিরাজ থাকলে তারা আরো কয়েক ট্রিপ মাছ ধরতে পারবেন।

আরেক জেলে শুকুর সেখ জানান, এখন জলদস্যুদের উৎপাত একটু কম। সরকার যদি দস্যু দমনে সজাগ থাকে তাহলে এ মৌসুমে প্রচুর ইলিশ ধরে তারা আগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

বাগেরহাট উপকূলীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী জানান, গত বছরের তুলনায় এবার সাগরে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলেরা সাগরে নির্বিঘ্নে ইলিশ ধরতে পারে সে বিষয়ে বনদস্যু ও জলদস্যু বাহিনী দস্যুতা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আবেদন জানান তিনি। -জাগো নিউজ
০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে