এস এম সামছুর রহমান, বাগেরহাট : পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজলে সরকার পরিচালিত একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় প্রজনন কেন্দ্রের বনকর্মী মাহাবুব হোসেনকে সাময়িক বরখান্ত করা হয়েছে। এছাড়া জাকির হোসেন নামে এক অস্থায়ী কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই কুমির প্রজনন কেন্দ্রে ২৭৭টি কুমিরের মধ্যে চুরি বা পাচার হওয়ার পর এখন ২৩৪টি কুমির রয়েছে। এদিকে ঘটনা তদন্তে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মেহেদীজ্জামানকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রজনন কেন্দ্রের পুরুষ কুমির রোমিও
সুন্দরবনে বিলুপ্তপ্রায় লবণ পানির প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের জন্য ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র এই বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র। চুরি বা পাচার হওয়ার পর বর্তমানে করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে রোমিও নামে ১টি পুরুষ, জুলিয়েট ও পিলপিল নামের ২টি মা কুমির ও ২৩৪টি বাচ্চা কুমির রয়েছে।
সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মেহেদীজ্জামান জানান, ‘করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের দুইটি প্যান (কৃত্রিম পুকুর) থেকে ৪৩ কুমিরের বাচ্চা চুরি বা পাচার হয়ে গেছে। ১ ফেব্রুয়ারি সকালে ওই দুইটি প্যানে থাকা কুমিরের বাচ্চা গণণা করে ৪৩টি কম পাওয়া যায়। পরে সেখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তা বিষয়টি জানানোর পর ওই দিন দুপুরে পূর্ব সুন্দরবনে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।’
এসিএফ মো. মেহেদীজ্জামান আরও বলেন, ‘কোন হিংস্র প্রাণী যদি প্যানে ঢুকে বাচ্চাগুলোকে আক্রমণ করতো কিংবা খেয়ে ফেলতে তাহলে সেখানে হাড়, মাংস, অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গ ও রক্ত দেখা যেত। এমন কোনও আলামত সেখানে পাওয়া যায়নি। প্রায় এক বছর বয়সী এই কুমিরের বাচ্চাগুলো চুরি কিংবা পাচার করে দেওয়া হয়েছে। চীন- মিয়ানমার- লাওস ও থাইল্যান্ড সীমান্তের গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল অঞ্চলের আর্ন্তজাতিক চোর বাজারে কুমিরের বাচ্চার চড়া মূল্য থাকায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র এই চুরি ও পাচার কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘১ ফেব্রুয়ারি সকালে কুমিরের বাচ্চাগুলো চুরি যাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে আমি ওইদিনই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে এঘটনায় জড়িত বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে বনকর্মী (লস্কর) মাহাবুব হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া জাকির হোসেন নামে এক অস্থায়ী কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম