বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৭, ০১:২৩:২৭

কোন্দলে বিপর্যস্ত আ.লীগ, সুবিধাজনক অবস্থায় বিএনপি

কোন্দলে বিপর্যস্ত আ.লীগ, সুবিধাজনক অবস্থায় বিএনপি

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট থেকে : প্রায় সাড়ে ছয়শ বছরের প্রাচীন জনপদ বাগেরহাট-২ (সদর) আসনে এখনই বইতে শুরু করেছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া। এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় ভোট প্রায় কাছাকাছি।

নতুন ও ভাসমান ভোট বরাবরই জেলার মর্যাদাপূর্ণ সদর আসনে এমপি নির্বাচনে নিয়ামক শক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। যে প্রার্থী নতুন ও ভাসমান ভোট বেশি পাবেন, সেই প্রার্থীই আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করবেন। অতীতের পরিসংখ্যান এমনটাই বলছে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ চায় আসনটিতে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে। আর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি চায় আসনটি পুনরুদ্ধার করতে।

বাগেরহাট-২ আসনে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মীর শওকত আলী বাদশা এমপি নির্বাচিত হন। বিএনপির সাবেক এমপি এম এ এইচ সেলিমের ভাই বিএনপির প্রার্থী এম এ সালাম ওই নির্বাচনে পরাজিত হন। বর্তমান পরিসংখ্যান বিচারে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হলে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের চেয়ে অধিক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি।

সদর আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে আওয়ামী লীগের এমপি মীর শওকত আলী বাদশার সঙ্গে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের রয়েছে বিরোধ। দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন— জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও বাগেরহাট পৌর মেয়র খান হাবিবুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা শেখ আলী আহমেদ খোকন। জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ও বাগেরহাট প্রেস ক্লাব সভাপতি আহাদ উদ্দিন হায়দার, বাগেরহাট পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল বাকী প্রমুখ।

অন্যদিকে জেলা বিএনপির নেতাদের ভিতরে তেমন কোনো বিরোধ না থাকায় আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেকটাই সুবিধাজনক স্থানে রয়েছে দলটি। জেলা বিএনপি সভাপতি এম এ সালামের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মনিরুল ইসলাম খানের প্রচারণাও চলছে সমানভাবে। ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ছাড়াও এলাকায় নিজ নিজ নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা সমানভাবেই চালাচ্ছেন তারা।

বিএনপি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বাগেরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মনিরুল ইসলাম খানের নামই উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক হাজরা জাহিদুল ইসলাম বাবলু আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।   

বিগত পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েক নেতা ও তাদের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ বিরোধের ফলে নির্বাচনী ফলাফল শেষ পর্যন্ত বিএনপির ঘরেও যেতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। বাগেরহাট সদর আসন থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম ও মনিরুল ইসলাম খানের মধ্যে যে কোনো একজন মনোনয়ন পাবেন আশা করা হচ্ছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দুদকের দায়ের করা জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলার আসামি মনিরুল ইসলাম খান কেন্দ্রীয়ভাবে অনেকটাই এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে। তবে এম এ সালামও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ থেকে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন তা নিয়ে রয়েছে অনেক কৌতূহল।

এ আসনের বর্তমান আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি মীর শওকত আলী বাদশা এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা পালন আর পারিবারিক ঐতিহ্য ও এলাকার উন্নয়নের কারণে আগামী নির্বাচনে বাগেরহাট সদর আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে তার সমর্থকরা আশা করছেন। তবে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থী চান আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা।

এ অবস্থায় দলীয় নেতাদের মধ্যে বিরোধ ও বিরোধী পক্ষের শক্তি বিবেচনায় আওয়ামী লীগ কৌশলগত কারণে শেখ হেলাল উদ্দিনকে বাগেরহাট-১ আসনের পাশাপাশি ২০০১ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো সদর আসন থেকেও দলীয় প্রার্থী করা হতে পারে। এমনটা জানিয়েছেন স্থানীয় অনেক আওয়ামী লীগ নেতা।

সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থীদের বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ কামরুজ্জামান টুকু বলেন, আসনওয়ারী আওয়ামী লীগের প্রার্থী এখনো নির্ধারণ হয়নি। ফলে প্রার্থী নির্বাচনের সাংগঠনিক প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি।

বাগেরহাট জেলা বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট মনিরুল ইসলাম খান বলেন, মনোনয়ন দেওয়ার মালিক দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড। আমার কাজ হলো এলাকায় সাংগঠনিকভাবে এবং সামাজিকভাবে মানুষের কল্যাণে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া। ‘ওয়ান-ইলেভেন’ সরকারের আমলে কারা-নির্যাতনসহ বিভিন্ন রকমের নির্যাতনের শিকার হয়েছি। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আসামি হয়েছি। এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। তবুও দেশ বা এলাকা ছেড়ে কোথাও যাইনি। এলাকায় সেবা করার সুযোগ পেলে বাগেরহাট সদরকে রোল মডেল বানাব।

জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম বলেন, বিএনপির জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা পুলিশ প্রশাসন দিয়ে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমে অব্যাহতভাবে বাধা দিয়ে আসছে। তারপরও বিএনপির কার্যক্রম বন্ধ করা যায়নি।

সম্প্রতি জেলা বিএনপির কার্যক্রমসহ জেলা মহিলা দলের কর্মী সভাও বাগেরহাটে করতে দেয়নি ক্ষমতাসীন দল। খুলনায় গিয়ে কর্মিসভা করতে হয়েছে তাদের। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসন আওয়ামী লীগের কথামতো চলছে। প্রশাসন কোনো ন্যায়-অন্যায় মানছে না। বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে