বরগুনা থেকে: স্বামীর সাথে ছোট বোনের গোপন প্রেমের সম্পর্ক। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সাথে বিবাদ দুই বছর ধরে। অবশেষে বিষপানে আত্মহত্যা করে ছোট বোনের পথ থেকে সরে দাঁড়ালেন বরগুনার কেওড়াবুনিয়া গ্রামের গৃহবধূ লায়লা আক্তার রুমা। তবে এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা, এ নিয়ে শঙ্কা আছে এলাকাবাসীর।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ পনেরো বছরের সংসার নাসিমুল হক এবং লায়লা আক্তার রুমার। ইটবারিয়া ভোকেশনাল ইন্সটিটিউটের প্রশিক্ষক নাসিমুল হক, চাকুরী সূত্রেই থাকতেন শ্বশুরবাড়ি কেওড়াবুনিয়া গ্রামে, শ্বশুর আঃ রাজ্জাক হাওলাদারের তৈরী করে দেয়া বাড়িতে। এর আগে, উভয়ের মাঝে ছিল দীর্ঘদিনের পরিণয়, সেই সুত্রেই বিয়ে।
শুরুতে ভালোই চলছিল তাদের সংসার। তবে হঠাতই অগ্নাশয় অপারেশন করাতে বাধ্য হলে, রুমা হারিয়ে ফেলে নারীত্বের সবচেয়ে বড় যোগ্যতাটি। চিরতরে লোপ পায় তার মা হবার ক্ষমতা। পিতৃত্বের আশায় আরেকটি বিয়ে করতে চায় স্বামী নাসিমুল। যাতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
এরই মাঝে বড় হয়ে উঠতে থাকে রুমার ছোট বোন নাবিলা আক্তার। বছর দুয়েক আগে, নাবিলা ভর্তি হয় ভগ্নীপতির বিদ্যাপীঠেই। সেই সুত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুলাভাইয়ের সাথেই একত্রে যাতায়াত। এই সুযোগে, নাসিমুলের নজর পড়ে শ্যালিকার দিকে। অবাধ মেলামেশা রুপ নেয় পরিণয়ে। আপন করে নিতে চায় একে অপরকে। ধীরে ধীরে দুরত্ব বাড়তে থাকে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে। সম্পর্কের অবনতি চরমে পৌছে যায়। শুরু হয় ঝগড়াবিবাদ। একপর্যায়ে মেয়ে জামাইকে আলাদা বাড়ি তৈরি করে দিয়ে, মেয়ের সংসার আলাদা করে দেন শ্বশুর রাজ্জাক হাওলাদার।
তবে, নতুন বাড়িতে নতুন সংসার শুরু হলেও, সুখ আসেনি সংসারে। স্বামীর সোহাগ জোটেনি রুমার কপালে। দূরত্বের দেয়াল বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি শালী-দুলাভাইয়ের প্রেমের সম্পর্কে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে শুরু করে তারা। প্রথমে দিনেদিনে ঘুরে ফিরলেও, পরবর্তীতে বাড়ি ফিরতে রাত পেরিয়ে যেতে থাকে তাদের। কখন রাত যাপনের ঘটনাও ঘটেছে।
২৬ মে শুক্রবার, জুম্মার নামাজে ব্যস্ত পুরুষরা। হঠাতই খবর আসে বিষপান করেছে রুমা। অজ্ঞানাবস্থায় বরগুনা সদর হাসপাতালে ওয়াস করানোর পর, উন্নত চিকিৎসার জন্য অচেতন রুমাকে বরিশালে পাঠায় চিকিৎসক। এম্ব্যুলেন্সে বরিশাল নেয়ার পথেই মৃত্যু হয় রুমার।
নিজের জীবন উৎসর্গ করে বোনের পথকে পরিষ্কার করে দিলো রুমা। আর যেন রুমার এই আত্মত্যাগকে সফলতা দিতেই, বড় মেয়ে রুমাকে কবরে শুইয়ে জামাই নাসিমুলের হাতে ছোট মেয়ে নাবিলাকে তুলে দিলেন বাবা রাজ্জাক হাওলাদার। অগ্রজের সমাধি মাড়িয়ে অনুজের ফুলসজ্জায় গমন।
তবে, রুমার এই আত্মত্যাগ এবং নাবিলার বেহায়াপনায় ক্ষোভে উত্তাল এলাকাবাসী। রুমার বিষপানে মৃত্যুকে কোনভাবেই আত্মহত্যা হিসেবে মানতে নারাজ তারা। এটি শালী-দুলাভাইয়ের পরিকল্পিত ও ঠান্ডা মাথার খুন বলে দাবী প্রতিবেশীদের। প্রেমিকযুগলকে আটক করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির তাদের। অবশ্য হত্যার স্বপক্ষে নানা যুক্তি ও তথ্যপ্রমাণও উপস্থাপন করছেন এলাকাবাসী।
তবে, রুমার মৃত্যুর পর তার লাশের ময়না তদন্ত নিয়েও নানা টালবাহানা করে নাসিমুল। ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন দিতে বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালায় তারা। তবে ঘটনা জানতে পেরে রুমার মরদেহ ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দেন বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার বিজয় বসাক।
বরগুনা সদর থানায় দায়ের হয় একটি অপমৃত্যু মামলা। পুলিশ সুপার জানান, লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে, মৃত্যুর কারন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে আপাতত এটি আত্মহত্যা হিসেবে প্রচার হলেও, এতে প্ররোচনা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলেন বিজয় বসাক। তদন্তে মাথায় রাখা হবে নাসিমুল-নাবিলার পরিণয়ের বিষয়টিও।
২ জুন, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসবি