বরগুনা: বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হ'ত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া রিফাতের স্ত্রী আশয়া সিদ্দিকা মিন্নি বরগুনা জেলা কারাগারে রয়েছেন।
গত ১৯ জুলাই শুক্রবার রিফাত হ'ত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বী'কারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর থেকে কারাগারে রয়েছেন মিন্নি। কারাগারে যাওয়ার পর মিন্নির সঙ্গে দেখা করেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম।
তারা উভয়ই দাবি করেন, রি'মান্ডে থাকা অবস্থায় পুলিশের নি'র্যাতনে খুব অ'সুস্থ হয়ে পড়েছেন মিন্ন। তাই তার চিকিৎসা প্রয়োজন। এছাড়াও পুলিশের শিখিয়ে দেয়া স্বীকারোক্তি আদালতে বলেছেন মিন্নি। তাই এ স্বী'কারোক্তি প্রত্যাহার করতে চান তিনি।
সব শেষ বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাতে মিন্নির বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন বরগুনা জেলা কারাগারের সুপার মো. আনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘মিন্নি আদৌ অসুস্থ নয়। তার আইনজীবী এসেছিলেন। আমি মিন্নিকে তার আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দিয়েছি। আমার সামনেই মিন্নির আইনজীবী তার কাছে বারবার জানতে চেয়েছেন, তাকে মা'রধর করা হয়েছে কিনা এবং সে অসুস্থ কিনা? এর জবাবে মিন্নি বলেছেন, আমি ঠিক আছি। আমার শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে একটু ব্যথা হয়েছে।’
জেল সুপার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার সময় মিন্নি আমার সামনে ছিলেন। সঙ্গে কারা কর্তৃপক্ষের আরো কয়েকজন ছিল। আমার সামনে মিন্নি তার আইনজীবীর সঙ্গে এসব কথা বলেছেন। মিন্নি তেমন অসুস্থ নয়। প্রতিদিন সকাল-বিকেল নার্স মিন্নির স্বাস্থ্যের খোঁজ নিচ্ছেন। তাছাড়া আমিও আছি। খোঁজ রাখছি। সে অসুস্থ নয়।’
মিন্নিকে নার্সরা কী চিকিৎসা দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জেল সুপার বলেন, মিন্নি আমাদের এখানে আসার পর বলেছেন তার মাথা ব্য'থা। এরপর নার্সরা দুটি ট্যাবলেট মিন্নিকে দিয়েছেন। পরদিন আমি মিন্নির কাছে অ'সুস্থতার খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম। তখন মিন্নি বলেছেন, মাথা ব্যথা নেই। এখন ভালো লাগছে। মিন্নি সুস্থ এবং স্বাভাবিক। জেলখানায় চিকিৎসার ব্যাপারে আমরা কখনো গাফিলতি করি না।
আনোয়ার হোসেন বলেন, মিন্নির আদালতে দেয়া স্বী'কারোক্তি প্রত্যাহারের আবেদনের জন্য আইনজীবী একটি দরখাস্ত নিয়ে এসেছিলেন মিন্নির স্বাক্ষর নিতে। জেল-হা'জতের আইন অনুযায়ী এভাবে কোনো বন্দি কিছুতে স্বাক্ষর করতে পারেন না। তাই আমি তাকে স্বাক্ষর দিতে দেইনি। বরং মিন্নিকে নিয়ম অনুযায়ী আমার কাছে আবেদন করতে বলেছি। মিন্নি আবেদন করলে আমি নিয়ম অনুযায়ী সেই আবেদন আদালতে পাঠাব। কিন্তু মিন্নি এখনো কোনো আবেদন করেননি।
এক প্রশ্নের জবাবে জেল সুপার আরো বলেন, আইনজীবীরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন তার মক্কেলের জামিনের জন্য বা কোর্টের সহানুভূতির জন্য। এটা স্বাভাবিক।
জেলের মধ্যে কোনো বন্দিকে অসুস্থ রেখে আমাদের ঘুমানোর সুযোগ নেই। বন্দিদের থাকা-খাওয়া, দেখা-সাক্ষাত এবং চিকিৎসা, এ মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমার।
২৬ জুন সকাল সোয়া ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে নি'র্মমভাবে কু'পিয়ে জ'খম করে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীসহ তাদের সহযোগীরা। এরপর বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মা'রা যান রিফাত শরীফ।
রিফাত শরীফকে কু'পিয়ে জ'খম করার একটি ভি'ডিও ভা'ইরাল হলে শো'কে স্তব্ধ হয়ে পড়ে পুরো দেশ। হ'ত্যাকা'ণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি ওঠে সব মহলে।
এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বরগুনা সদর থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছ। এ মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন রিফাতের স্ত্রী মিন্নি। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।