এম জসীম উদ্দীন: বরগুনা শহরের অধিকাংশ গভীর নলকূপে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পানি না ওঠায় শহরে খাওয়ার পানির সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। এক সপ্তাহ ধরে তীব্র দাবদাহে পানির জন্য হাহাকার চলছে গোটা শহরে। পানিসংকটের কারণে শহরের হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলো গ্রাহকদের পুকুরের পানি সরবরাহ করতে বাধ্য হচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শহরে পানি সরবরাহের জন্য চলতি বছরের শুরুর দিকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পাঁচটি নতুন পাম্পহাউস স্থাপন করে। এসব পাম্প চলাকালে (সকাল ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত) শহরের কোনো নলকূপে পানি ওঠে না।
বরগুনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহমুদ খান বলেন, পৌর শহর এলাকায় পানি সরবরাহের জন্য নতুন পাঁচটি পাম্প ভূগর্ভস্থ ৯৫০ থেকে ৯৭০ ফুট স্তরে বসানো হয়েছে। আর গভীর নলকূপগুলোও একই স্তরে হওয়ায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
পৌরসভার পানি সরবরাহ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পৌরবাসীর সুপেয় পানির চাহিদা পূরণে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ৫৫৬টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এ ছাড়া তাদের দৈনন্দিন পানির চাহিদা মেটাতে ছয়টি বড় ধরনের পাম্পহাউস ও একটি পানি শোধনাগার (ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) রয়েছে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদা পূরণে চলতি বছরের শুরুর দিকে নতুন করে আরও পাঁচটি পাম্পহাউস স্থাপন করায় এখন শহরের কোথাও নলকূপে পানি উঠছে না বলে শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ।
শহরের কাঠপট্টি, বাগানবাড়ি, কলেজ রোড, কলেজ ব্রাঞ্চ রোড, নাথপট্টি, ডিকেপি রোড, কালীবাড়ি, সদর রোড, থানাপাড়া, হাসপাতাল রোড, কালবিড়ি, চরকলোনিসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েক শ গভীর নলকূপে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পানি ওঠে না। রাত ১২টায় এসব পাম্প বন্ধ করা হয়। এর প্রায় এক-দেড় ঘণ্টা পর নলকূপগুলো থেকে অল্প অল্প করে পানি পড়ে।
শহরের নাথপট্টি এলাকার বাসিন্দা মহসিন চৌধুরী অভিযোগ করেন, তিন মাস ধরে শহরে এই তীব্র পানি সংকট চলছে। সারা শহর ঘুরে ৫০-১০০ টাকা দিয়েও এক কলস খাওয়ার পানি জোগাড় করা যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে মানুষ পুকুর ও সাপ্লাইয়ের দূষিত পানি পান করছে।
তিনি আরও জানান, শহরের প্রায় এলাকায় ব্যক্তিগত ও সরকারি কয়েক শ পুকুর ভরাট করে ফেলায় পুকুরের পানি পাওয়াও দুষ্কর হয়ে উঠেছে।
শহরের কাঠপট্টি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ১৫-২০ জন লোক কলসি ও বালতি হাতে একটি গভীর নলকূপের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। দুই ব্যক্তি নলকূপের হাতলে চাপ দিয়ে পানি তোলার চেষ্টা করছেন। পরে একজন বালতিতে পানি এনে নলকূপের পাম্পে ঢালেন। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। পরে খালি হাতে সবাই বাড়ি ফিরে যান। শহরের সাহাপট্টি, বাকালিপট্টি, পশু হাসপাতাল সড়ক, ডিকেপি সড়ক, বাগানবাড়ি এলাকা ঘুরেও এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
কাঠপট্টি এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমাদের এখানে পৌরসভার পানি সরবরাহের পাম্পটি চালু করার পর থেকেই নলকূপে পানি উঠছে না। পাম্পটি সকাল ৮টার দিকে চালু করে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে। এরপর রাত একটার দিকে অনেক চেষ্টা করলে নলকূপে পানি ওঠে। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে আমরা খাওয়ার পানির কষ্টে আছি।’ প্রায় একই কথা বলেন বাগানবাড়ি এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান, মনিরুজ্জামানসহ অনেকে।
পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মশিউর রহমান বলেন, ‘নতুন যে পাঁচটি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে, সেগুলোর স্তর এবং গভীর নলকূপগুলোর স্তর একই হওয়ায় এই সমস্যা হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানে সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি চালু করার জন্য আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। প্ল্যান্টটি চালু করলে প্রচুর বিদ্যুৎ বিল ওঠে বলে কয়েক মাস ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু এটি চালু না করায় শহরে খাওয়ার পানির সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠছে।’
বরগুনা পৌরসভার মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এ সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হচ্ছে গভীর নলকূপগুলোর গভীরতা ৯৫০ ফুটের পরিবর্তে ১ হাজার ১৫০ ফুটে উন্নীত করা। এটা কেবল মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমি এ জন্য জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ঢাকায় এসেছি এবং এ-সম্পর্কিত একটি লিখিত প্রস্তাবনাও নিয়ে এসেছি। আশা করি তাঁরা (মন্ত্রণালয়) এটা অনুধাবন করবেন এবং নতুন যেসব নলকূপ স্থাপন করা হবে সেগুলো এক হাজার ১৫০ ফুট গভীরতায় স্থাপন করা হবে। এটা হলে অচিরেই শহরবাসীর পানি সমস্যা নিরসন হবে।-প্রথম আলো
২৮ এপ্রিল,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ