গৌরনদী (বরিশাল): মাত্র এক শ’ টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে বরিশালের গৌরনদী উপজেলা সদরের খাদিজাতুল কোবরা (রা:) মহিলা কওমি মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণীর শিশু শিক্ষার্থী কামরুন নাহার সুমাইয়ার (৮) মুখে গামছা বেঁধে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। গতকাল সকালে ছাত্রীর মা মাদরাসাটির আবাসিক হল থেকে গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন।
নির্যাতিতা ওই শিশু ছাত্রীর মা উপজেলার পশ্চিম শাওড়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী মো: কামাল হোসেন বেপারীর স্ত্রী রেনু বেগম জানান, প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে তার একমাত্র শিশুকন্যা কামরুন নাহার সুমাইয়াকে ওই মাদরাসায় ভর্তি করা হয়।
এরপর থেকেই সুমাইয়াকে মাসিক তিন হাজার টাকা চুক্তিতে মাদরাসার আবাসিক হলে রাখা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, গতকল সকালে মাদরাসার এক ছাত্রী গোপনে তাকে ফোন করে জানায় মাদরাসার তিন নারী শিক্ষক রাতে সুমাইয়ার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে।
খবর পেয়ে সকাল ১০টায় তিনি মাদরাসার আবাসিক হল থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় তার শিশুকন্যা সুমাইয়াকে উদ্ধার করেন। এ সময় মাদরাসার সুপার তাকে জানায়, অপর এক ছাত্রীর এক শ’ টাকা চুরির ঘটনায় সুমাইয়াকে শাসন করা হয়েছে। তবে কোন ছাত্রীর টাকা চুরি হয়েছে তা সুপার বলতে পারেননি।
নির্যাতিতা শিশু ছাত্রী সুমাইয়ার বরাত দিয়ে তার মা রেনু বেগম আরো অভিযোগ করেন, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় এক শ’ টাকা চুরির অপবাধ দিয়ে মাদরাসার সুপার ও মেজো সুপার এবং বাংলা সুপার মিলে তার মেয়ে সুমাইয়ার মুখে গামছা বেঁধে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রেনু বেগম বলেন, বড় খালামণির নির্দেশে মুখে গামছা বাঁধার পর মাদরাসার আবাসিক হলের মেজো খালামণি গুনে গুনে তার মেয়েকে ৬০টি ও বাংলা ম্যাডাম ১০০টি বেত্রাঘাত করেছে। এতে তার মেয়ে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরেও তাকে (সুমাইয়া) রাতের খাবার দেয়া হয়নি। সকাল ১০টায় খবর পেয়ে তিনি মাদরাসার আবাসিক হলে পৌঁছে গুরুতর অবস্থায় তার শিশুকন্যা সুমাইয়াকে উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ ব্যাপারে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
অভিযোগের ব্যাপারে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা জাহিদুল ইসলামের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ০১৭৯১-১২৭৩৪৯ নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেকোনো অপরাধ করলে কওমি মাদরাসায় শাস্তি দেয়ার বিধান রয়েছে।
এ আইন সারা দেশের কওমি মাদরাসাগুলোতে প্রচলিত। তাই টাকা চুরির ঘটনায় ছাত্রী সুমাইয়াকে মাদরাসার শিক্ষক শাসন করেছে। শিশু শিক্ষার্থী সুরাইয়াকে নির্যাতনকারী ওই তিন শিক্ষকের নাম জানতে চাইলে তিনি দম্ভ করে বলেন, মাদরার প্রধান সুপার আমার স্ত্রী, অন্য দুইজনও আমার নিজস্ব লোক, তাদের নাম বলা যাবে না। তিনি এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি তার নিকট আত্মীয় বলে পরিচয় দেন।
এ ব্যাপারে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মনিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ঘটনায় এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেননি, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, মাদরাসার প্রধান সুপারকে বড় খালামণি, সহকারী সুপারকে মেজো খালামণি ও অন্য শিক্ষকদের সাবজেট অনুযায়ী বাংলা খালামণি কিংবা আরবি খালামণি হিসেবেই ডাকেন শিক্ষার্থীরা।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস