নিউজ ডেস্ক: বরিশালের উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামে ৫৫ বছরের এক বৃদ্ধের সঙ্গে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। তবে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিয়ে বন্ধ হয়ে যায়।
দুই পরিবারের অভিভাবকরা গত বুধবার বিয়ের সকল আয়োজন করেছিল। স্থানীয় লোকজন ও পরিবারের সদস্যরা জানায়, উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়ননের ডহরপাড়া গ্রামের মৃত হাবিব হাওলাদারের কন্যা রিনা বেগমের বিয়ে হয় ঝালকাঠী উপজেলার কালিহান্দা গ্রামের রবিউল ইসলামের সঙ্গে। বিয়ের কিছুদিন পরেই স্বামী রবিউল দ্বিতীয় বিয়ে করেন। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় রিনা বেগম ২০১১ সালে নিজ পিত্রালয় উজিরপুরে ডহরপাড়া গ্রামে ৬ বছরে কন্যা রিদিকাকে নিয়ে চলে যান। গত ৫ বছর রিনা বেগম কন্যা রিদিকাকে নিয়ে তার বাবার বাড়িতে বসবাস করেন।
জাহানুর বেগম (৪৫) ও মোতালেব হাওলাদারসহ (৪২) গ্রামবাসী জানান, গত এক বছর আগে রিনা বেগমের সাথে একই উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের সুমন মোল্লার সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে হয়। রিনা বেগম কন্যা রিদিকাকে নিয়ে দ্বিতীয় স্বামীর বাড়িতেই থাকেন। রিদিকা নারায়নপুর পল্লী ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। রিদিকার মা রিনা বেগম উজিরপুর উপজেলার ওটরা ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের মোশারেফ মোল্লার ছেলে ও ঢাকার মাছ ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান মোল্লার (৫৫) সঙ্গে মেয়ের বিয়ে পাকাপোক্ত করেন। দুই পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে কণের বাড়িতে বিয়ের দিন ধার্য হয়। যে কথা সেই কাজ।
পূর্বের কথা অনুযায়ী কনের বাড়িতে বিয়ের সকল ধরনের আয়োজন সম্পন্ন হয়। আর এ খবর অতি দ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সব পন্ড হয়ে যায়। স্থানীয় ইউপি সদস্যা শাহিনুর বেগম জানান, তিনি বাল্য বিয়ের খবর পেয়ে বিষয়টি নারায়নপুর পল্লী ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনের পরিচালনা কমিটির সদস্য ও ইউপি সদস্য মো. মোজাম্মেল হোসেন সরদারকে অবহিত করেন। পরে তারা উজিরপুর মডেল থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কনের বাড়িতে অভিযান চালায়।
এ সময় বর মুজিবুর রহমান মোল্লা (৫৫) তার স্বজনদের নিয়ে পালিয়ে যান। উজিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ ফরিদ উদ্দিন জানান, কনের মা রিনা বেগম (৩৫) ও কনে রিদিকাকে (১২) আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতে হাজির করা হয়।
কনের মা রিনা বেগম আদালতে নিজের ভুল স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলে বিচারক ও নির্বাহী কর্মকর্তা ঝুমুর বালা মা ও মেয়ের কাছ থেকে ১৮ বছরের আগে বিয়ে নয় মর্মে লিখিত মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেন।
কনের মা রিনা বেগম বলেন, সৎ বাবার অভাবি সংসার থাকার কারণে আইন না জেনে বিয়ে ঠিক করেছিলাম। কষ্ট হলেও বিয়ে বন্ধ করে মেয়েকে লেখাপড়া করানোর কথা জানান রিনা বেগম।
বাব্য বিবাহ বন্ধের কথা স্বীকার করেছেন উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ঝুমুর বালা।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস