শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০৬:৪৮:০৩

কবর তিনটা আমার বুকের ওপর দিয়ে গেছে!

কবর তিনটা আমার বুকের ওপর দিয়ে গেছে!

বরিশাল : আমার সবকিছু শেষ হইয়া গ্যাছে। নাতি হোসাইনকে আমি নিয়া আইছি। আমি নিজের হাতে লালন-পালন কইরা মানুষের মতো মানুষ বানামু। এহন স্মৃতিই ওই একজন। মিজানের আর কোনো স্মৃতি নাই। স্মৃতিই থুইয়া (রেখে) গ্যাছে ওই একটা।

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঝালকাঠির নিজ বাড়িতে দাফন শেষে কথাগুলো বলছিলেন মিরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহত মিজানের বাবা নাসির হাওলাদার। পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড আগরপাশা গ্রামে ছেলে, নাতনি লিমা আক্তার (৭) ও পুত্রবধূ মুক্তা আক্তারের দাফন শেষে কথাগুলো বলেন তিনি।

তিনি বলেন, আমার ছেলে, নাতনি আর পুত্রবধূ পানিতে ডুবে, বিদ্যুতে ঝলসে মারা গেল। এমন মর্মান্তিক ঘটনা পৃথিবীতে কারও সঙ্গে হয়েছে কীনা জানি না। এই শোক সইতে পারছি না। আমার সুন্দর একটা সংসার ছিল। গরিব হতে পারি, নাতি-নাতনি, ছেলে-মেয়ে নিয়ে চলছিলাম। আমার সব কিছু শেষ করে দিলো।

নাসির হাওলাদার বলেন, সন্তানদের মৃত্যুতো নিজ চোখে দেখিনি। সকলের মতো আমিও শুনেছি। শুনেছি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তবে যেভাবেই বলি সিটি করপোরেশনের দায় আছে। 

বিদ্যুতের তার ছিড়ে পরে রইলো অথচ সেটি কেউ দেখলো না। অতো পানি জমলো কিন্তু তা সরানোর ব্যবস্থা নেই। সেখানে কারও মৃত্যু হলে তার দায় কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারেন না। আমার সন্তান, নাতনি, পুত্রবধূ যদি মারা না গিয়ে তাদের স্বজন মারা যেত তাহলে কি তারা মেনে নিতেন?

আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ঘটনার বিচার চাই। একই সঙ্গে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু, আমার কোল খালি করে সব শেষ করে দিলো যারা তাদের বিচারের দাবি জানাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি যেন এমন বিচার করেন যে আর কারও সঙ্গে যেন এমন ঘটনা না ঘটে।

তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। আমাদের জীবন তছনছ করে দেওয়ার পরও কোনো খোঁজও নেয়নি।
 
নাসির হাওলাদার আরও বলেন, দেশবাসীর কাছে আমি দোয়া চাই। আমার বুকের মানিকেরা যে কষ্ট পেয়ে মারা গেছেন তাদের যেন আল্লাহ জান্নাত দান করেন। সব শেষ করে দিয়ে কবর তিনটা আমার বুকের ওপর দিয়ে গেছে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাতে অতিবৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে যায়। মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজ সংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তির সামনের সড়কে জমে থাকা পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়। 

এর মধ্যে তিনজনের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের আগরপাশা গ্রামে। নিহত তিনজন হলো মিজান, তার স্ত্রী মুক্তা ও সাত বছরের মেয়ে লিমা। মিজান-মুক্তা দম্পতির ৭ মাসের আরেক ছেলে পানিতে ডুবে গেলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে। তাকে দাদা নাসির হাওলাদারের তত্ত্বাবধায়নে রাখা হয়েছে। সূত্র: ঢাকা পোস্ট

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে