সোমবার, ১৬ মে, ২০১৬, ০৩:১৭:৪৮

হতভাগা মা-বাবার প্রশ্ন, লাশের পরে পাস দিয়ে কি করবো?

হতভাগা মা-বাবার প্রশ্ন, লাশের পরে পাস দিয়ে কি করবো?

বরিশাল : বরিশাল শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে আত্মহুতি দেয়া সেই শিক্ষার্থী সর্বজিত ঘোষ হৃদয়ের পাসের খবর ক্রমশই তার পরিবারকে বিষিয়ে তুলছে। অদম্য মেধাবী সন্তানকে হারিয়ে তার মা-বাবা উভয়েই এখন হতবাক-বাকরুদ্ধ। ছেলে হারানো প্রশ্নে ক্ষণে ক্ষণে মুর্ছা যাচ্ছেন বাবা শেখর ঘোষ এবং মা শিখা ঘোষ। যে কারণে বরিশাল শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাদের বিচারের দাবি করেছেন তারা।

হৃদয়ের মা শিখা ঘোষের প্রশ্ন, ‘লাশের পরে পাস দিয়ে কি করবো?’ কিন্তু যাদের কারণে তার ছেলের প্রাণহানি হয়েছে তাদের তিনি শাস্তি চান। বরিশাল নগরীর কাঠপট্টি রোডে অবস্থিত হৃদয়ের বাসায় সোমবার বেলা ১১টার দিকে গিয়ে এমনই দৃশ্য দেখা গেছে।

কিন্তু এ প্রতিবেদকের নানামুখি প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে হৃদয়ের মা-বাবা শুধুই বলছেন, কোনো ভুল মানি না, আর কোনো ভুলের কথা শুনতে রাজি না। যে ভুল পাসের বিপরীতে ফেল দিয়ে সন্তানকে লাশ করে তা ক্ষমার অযোগ্য।

হৃদয়ের বাবার আকুতি ছেলের জীবনের বিনিময়ে আমি পাস চাই না, আমি আমার প্রাণাধিক প্রিয় ছেলে হৃদয়কে ফেরত চাই।

অশ্রুসিক্ত নয়নে হৃদয়ের বাবা জানান, তিনি প্রতিটি পরীক্ষার সময় বন্ধু হয়ে ছেলের পাশে ছিলেন। ১১ মে যখন হৃদয় স্কুলে গিয়ে ফোন করে জানায় রেজাল্ট পাচ্ছে না, তখন আমি ওকে সাহস দিয়ে বলেছি, তুমি ফেল করার ছাত্র না। সুতরাং একটু চিন্তা নিয়ো না। আমি স্কুলে যাচ্ছি এবং দেখছি।’

কিন্তু আমার ছেলে ফেল করার খবরে বন্ধুতুল্য বাবাকে মুখ দেখাতে চায়নি। যে কারণে বহুতল ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে নিভিয়ে দিয়েছে জীবন প্রদীপ। অথচ রেজাল্ট আনতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে সে তার ঠাকুর মাকে বলে গিয়েছিল, ভালো খাবার তৈরি করো, আমি সু-খবর নিয়ে আসছি।’

এক্ষেত্রে হৃদয়ে বাবার অভিব্যক্তি হচ্ছে, আমার হৃদয় ফেল করেনি, তারপরেও যারা ফেলের সংবাদ দিয়ে ওকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে, তারা খুনি। আমি তাদের শাস্তি চাই। হৃদয়ের মা শিখা ঘোষের অভিব্যক্তিও একই। ছেলেকে হারানো পরে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, বরিশাল শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রথম ধাপে ভুল ফলাফল প্রকাশিত করার বিষয়টি স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও হৃদয়ের পরিবারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি। এমনকি বোর্ডের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী তাদের সহানুভূতি দেখাতেও আসেনি।

এমতাবস্থায় শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষের এ ধরনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বরিশালের সচেতন মহল। বিশেষ করে বেশি সমালোচিত হয়েছেন বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক। অবশ্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সব দায় দুই পরীক্ষকের ওপর চাপিয়ে দেয়ার। তবে এটা দায় এড়াতে তার অপকৌশল চালানো ছাড়া আরও কিছু নয় বলে ভাবা হচ্ছে।

তাছাড়া শিক্ষাবোর্ডর কর্ণধর হিসেবে এই ব্যর্থতার দায় তিনি কখনোই এড়াতে পারেন না বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।

তবে তার দাবি, যাদের ভুলের কারণে ‘হিন্দুধর্ম’ নৈর্ব্যত্তিক পরীক্ষায় ফলাফল উল্টে প্রকাশ করা হয়েছিল, একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশও রাখা হবে।

তাছাড়া বরিশাল বোর্ডের সকল কার্যক্রম থেকে তাদের বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত কে তা তিনি এখনই প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না।

তবে বোর্ডের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এসএসসি পরীক্ষায় হিন্দুধর্ম পরীক্ষার নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নের উত্তরপত্র তৈরি করেন ৪ পরীক্ষক। তদন্তু কমিটির চুলচেরা বিশ্লেষণে অভিযুক্ত দুই পরীক্ষকের নাম উঠে এসেছে।

তাদের মধ্যে একজন হলেন-বরিশাল নগরীর বিএম স্কুলের হিন্দুধর্ম শিক্ষিকা জুরান চন্দ্র চক্রবর্তী এবং অপরজন বরগুনার বিবিচিনি স্কুলের হিন্দুধর্ম শিক্ষক বিরেন চক্রবর্তী।

প্রসঙ্গত, গত ১১ এপ্রিল সারাদেশের সঙ্গে একযোগে ঘোষিত এসএসসির ফলাফলে সর্বজিত ঘোষ হৃদয় ধর্ম বিষয় বাদে সবকটিতে জিপি পেয়েছিল বলে প্রকাশ করা হয়। এতে সে অভিমান করে বাসার পেছনে প্যারারা রোডে নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবনের ওপর থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে।

কিন্তু এর একদিন পরেই হিন্দুধর্ম বিষয়ে সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করে বরিশাল শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। সেই ফলাফলে দেখা যায় আত্মহননকারী মেধাবী ছাত্র সর্বজিত ঘোষ হৃদয় পাশ করেছে। -বাংলামেইল
১৬ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে