বরিশাল: সম্প্রতি দেশে দুটি বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার পর নড়েচড়ে বসেছে বরিশাল পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মহল্লা বিশেষ বাড়ানো হয়েছে পুলিশি নজরদারি। পাশাপাশি নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও নিরাপত্তার স্বার্থে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের। এছাড়া বরিশাল জেলা ও মহানগরের প্রবেশদ্বারে বসানো হয়েছে পুলিশি চেকপোস্ট। সেসব স্থানে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের পাশাপাশি যানবাহনেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
এক্ষেত্রে বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, গত কয়েকদিন ঈদ উদযাপনের মধ্যে পুলিশের এমন নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়টি জনমনে ভীতির সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে রাত ১০টার পরপর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পোশাকধারী পুলিশ বিনোদনপ্রেমীদের অবস্থান ত্যাগে বাধ্য করায় ভীতি আরো বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া নগরীর একাধিক স্থানে রাতের বেলা একই সাথে চেকপোস্ট বসানোয় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। বলা চলে পুলিশের কড়াকড়ি আরোপে বরিশাল নগরীতে এক ধরনের অঘোষিত ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে বরিশাল পুলিশের ভাষ্য হচ্ছে, রাজধানীর গুলশানে জিম্মি সঙ্কটের পর পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী নগরবাসীর নিরাপত্তায় এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদুল ফিতরের নামাজে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর নিরাপত্তা আরো জোরদার করা হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ের যেসব কর্মকর্তা ছুটিতে ছিল তাদের ছুটি বাতিল করে স্ব-স্ব কর্মস্থলে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের নতুন নতুন দিক নির্দেশনা দিয়ে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। অবশ্য এই বিভাগের বরগুনা জেলায় সম্প্রতি কিলিংটার্গেটের ঘোষণা দিয়ে ‘পুরোহিত হত্যা’ নামে একটি সংগঠন এক মন্দিরের পুরোহিতকে খুনের বার্তা পাঠায়। ফলে সেই ঘটনার পর থেকে বরিশাল বিভাগের সবগুলো জেলায় পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
পাশাপাশি চিঠি পাঠিয়ে হুমকি দাতাদের সন্ধানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যদিও রোববার রাত পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের কোথায়ও বড় ধরনের কোনো সন্ত্রাসী আটকের খবর দিতে পারেনি পুলিশ। তবে বরিশালকে নিরাপদ মনে না করে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি রোধে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে পুলিশ। এ কারণে নগরীর প্রবেশদ্বার গুলোতে চেকপোস্টের পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পরপরই নগরীর বিনোদন স্পট মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, শিশুপার্ক, বঙ্গবন্ধু উদ্যান, ত্রিশ গোডাউন এবং স্বাধীনতা পার্কে বিনোদনপ্রেমীদের অবস্থান ত্যাগে বাধ্য করা হয়। পাশাপাশি এই ঈদ উদযাপনকে কেন্দ্র করে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বাজানো বাদ্যযন্ত্রও বন্ধ করে দেয়া হয়।
এসময় পুলিশের অভিব্যক্তি ছিল, জনবহুল এলাকা বা বিনোদন কেন্দ্রগুলোকে টার্গেট করেই হামলার পরিকল্পনা নেয় সন্ত্রাসীরা। মূলত সেই ধারণা অনুমানে এনেই নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়। তবে পুলিশের এই ধরনের পদক্ষেপে বিনোদনপ্রেমীদের হতাশ করেছে। কিন্তু সম্প্রতি হামলার ঘটনাগুলো সম্পর্কে সকলেই অবগত থাকায় সহজেই মেনে নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন।
ঈদের দিন রাতে বরিশাল ত্রিশ গোডাউন এলাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসা এক ব্যাংক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সাধারণত ঈদুল ফিতরে লম্বা ছুটি কম পাওয়া যায়। কিন্তু এবার একটানা ৯ দিন ছুটি পাওয়ায় পরিবার নিয়ে ঈদ কাটাতে গ্রামের বাড়ি বরিশালে এসেছেন। সেই ঈদে আনন্দটা পরিপূর্ণ করতে ছুটে যান কীর্তনখোলার পশ্চিম তীরে ত্রিশ গোডাউনে। কিন্তু রাত ১০টার পর পুলিশ তাদের অবস্থান ত্যাগে বাধ্য করায় চলে গেছেন।
এক্ষেত্রে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মূখপাত্র সহকারী কমিশনার (এসি) মো. ফরহাদ সরদার জানান, নগরবাসীর নিরাপত্তায় পুলিশ কাজ করছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিমও মাঠে রয়েছে। যাতে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা অরাজকতা কেউ সৃষ্টি করতে না পারে।
একই প্রসঙ্গে বরিশাল রেঞ্জের উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, গুলশান বা শোলাকিয়ার মতো কোনো ঘটনা এ অঞ্চলে সন্ত্রাসীরা যাতে না ঘটাতে পারে সেজন্য স্ব-স্ব জেলার কর্মকর্তাদের অনেক আগেই দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া সম্প্রতি বরগুনায় চিঠি পাঠিয়ে পুরোহিত হত্যার হুমকির ঘটনায় কমিটি গঠন করে হুমকি দাতাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি স্ব জেলার কোনো ব্যক্তি বিশেষের যোগসূত্র রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। -বাংলামেইল
১১ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম