প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে : সবেমাত্র নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। প্রতিদিন সকালে প্রাইভেট, কোচিং, স্কুল ও ক্লাস নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটায় রাজিফা আক্তার সাথী (১৫)। বাড়ি থেকে কোচিং সেন্টার বেশ দূরে। উপজেলা শহরে আসতে হয়। মাঝে মধ্যেই এক বখাটে তাকে উত্ত্যক্ত করে রাস্তায়।
প্রতিদিনের মতোই রোববার সকালেও সাথী বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় প্রাইভেটের উদ্দেশ্যে। রাস্তায় তাকে আটকায় স্থানীয় বখাটে হুজাইফাতুল ইয়ামিন (২০)। প্রকাশ্যে তাকে কু-প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করে। সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে বাসায় ফিরে সন্ধ্যার একটু আগে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় সাথী।
সন্ধ্যায় বাড়ির সদস্যরা তাকে মৃত দেখতে পায়। নিভে যায় একটি প্রাণ। ইভটিজিং, ধর্ষণে আর কত কিশোরীকে প্রাণ দিতে হবে এ প্রশ্নের উত্তর এলাকাবাসী জানতে চায়। বগুড়া দুপচাঁচিয়া উপজেলার জিয়ানগর মণ্ডলপাড়ায় ঘটনাটি ঘটেছে। সাথী ওই গ্রামের গোলাম রব্বানীর মেয়ে। সে স্থানীয় জিয়া নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী।
বখাটে হুজাইফা ওই উপজেলার এরুনজমির পাড়ার আমিনুর মীরের ছেলে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার অভিযান চলাকালে পুলিশের সঙ্গে বখাটেদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের ৫ সদস্য আহত হয়েছে। এ সময় পুলিশের কাছে থাকা একটি ওয়াকিটকি ছিনিয়ে নিয়েছে বখাটেরা। পরে জেলা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে সন্দেহভাজন ২৬ জনকে আটক করেছে। সংবাদ লেখা পর্যন্ত ওই ওয়াকিটকি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ জানায়, সাথী রোববার সকালে প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে দুপচাঁচিয়া আসে। পথিমধ্যে বখাটে হুজাইফা তাকে উত্ত্যক্ত করে। ওই বখাটে তাকে মাস ছয়েক আগ থেকেই ইভটিজিং করত। ইভটিজিং অতিরিক্ত হওয়ায় সে আর স্কুলে যায়নি। বাসায় ফিরে বিকালে নিজের শয়ন কক্ষে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।
দুপচাঁচিয়া থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, স্কুলছাত্রীর আত্মহনের খবর পেয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেন। এরপর অভিযোগ পেয়ে বখাটে যুবককে গ্রেপ্তার করতে পাশের হেরুঞ্জা গ্রামে গেলে গ্রামবাসী পুলিশকে বাধা দেয়। একপর্যায়ে তারা হামলা চালায় পুলিশের ওপর।
এতে নাসিরুজ্জামান, রহিম উদ্দিন ও জাকির হোসেনসহ পুলিশের ৫ সদস্য আহত হন। বখাটেরা পুলিশের কাছে থাকা একটি ওয়াকিটকি ছিনিয়ে নেয়। পরে বগুড়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর রহমান রিজার্ভ ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে যায়। ওই রাতেই ২৬ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। অপরদিকে বখাটে হুজাইফা পলাতক আছে।
সাথীর বাবা গোলাম রব্বানীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হুজাইফা তার মেয়েকে পথে-ঘাটে উত্ত্যক্ত করত। বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। চেয়ারম্যান একাধিকবার সালিশি-বৈঠকে ওই বখাটেকে শাসিয়েছে। তাতেও কোনো কাজ হয়নি।
রোববার সাথী বাড়ি থেকে দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরে প্রাইভেট পড়তে যায়। সন্ধ্যার কিছু আগে তার মেয়ে বাড়ি ফিরছিল। সেই সময় রাস্তায় ওই বখাটে সাথীকে কটূক্তি করে। এতে সে অপমানিত বোধ করে। সাথী বাড়ি ফিরেই নিজের ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।
এদিকে জিয়ানগর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোত্তালেব গণি জানান, সাথী তার স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণিতে জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতকার্য হয়। এর আগে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
তিনি আরো বলেন, ‘বখাটের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মেধাবী এই মেয়েটির আত্মহত্যার খবর পেয়ে স্কুলের সবাই তার বাড়িতে যায়। সাথী আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেও আমরা ওর জন্য কিছুই করতে পারলাম না।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর রহমান জানান, এ ঘটনায় দু’টি পৃথক মামলা করা হয়েছে। অত্মহত্যার প্ররোচনায় মেয়ের বাবা গোলাম রব্বানী বখাটে হুজাইফা ও তার বাবা আমিনুর মীরকে আসামি একটি মামলা করেছেন। অপরদিকে দায়িত্বপালনে বাধা ও হামলার অভিযোগে পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুর রহিম ২৬ জনের নাম উল্লেখসহ ৪০-৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে আরেকটি মামলা করেন।
ওই ঘটনায় রাতেই ২৬ জনকে আটক করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বর্তমানে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল হাসপাতালের মর্গে আছে। তিনি আরো জানান, পুলিশ বখাটে হুজাইফাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি