বগুড়া : কি নির্মম ঘটনা, মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য এক নরপশু ছেলে তার মাকে হত্যা করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের ধাপহাট এলাকায়।
জানা গেছে, বড় ছেলে ইউনুসের সঙ্গে মা রোকেয়া বেওয়ার বনিবনা হচ্ছিল না। সম্পত্তির অংশ ছেলেকে না দেয়ার জের ধরে মায়ের ওপর ভীষণ ক্ষেপে ছিলেন ইউনুস। এক সময় পরিকল্পনা করেন মাকে হত্যা করে সব সম্পত্তি হাতিয়ে নেবেন তিনি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১৫ জানুয়ারি রাত ১টার দিকে মায়ের শয়নকক্ষে প্রবেশ করেন ইউনুস। এ সময় মা রোকেয়া বেওয়াকে লোভ দেখান এই বলে, আজ রাতেই তোমাকে পাশের নিমতলা মাজারে যেতে হবে। তোমার কাছে যে টাকা গচ্ছিত আছে তা ওই মাজারে নিয়ে যেতে পারলে দ্বিগুণ হবে।
ছেলের এমন কথায় মা রোকেয়া বেওয়া চলে যান মাজারে। সেখানে গিয়েই মায়ের ওপর ঘাতক রূপে আবির্ভূত হন তিনি। আশেপাশ থেকে আরো তিন খুনি বের হয়। রোকেয়া বেওয়াকে তারা পাশের একটি সরিষা ক্ষেতের মেশিন ঘরে নিয়ে যান। সেখানে তার কাছে থাকা বেশকিছু টাকা ছিনিয়ে নেন তারা। এরপর ঘাড় মটকিয়ে মাকে নির্মমভাবে হত্যা করেন ইউনুস।
হত্যাকাণ্ডের দু’দিন পর ১৭ জানুয়ারি সরিষাক্ষেত থেকে রোকেয়া বেওয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গত ১৮ জানুয়ারি নিহতের ছোট ছেলে ইয়াকুব বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে মাঠে নামে পুলিশ।
কি কারণে এবং কেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তবে মায়ের জানাজায় অংশ না নেয়ায় সন্দেহের সৃষ্টি হয়। হত্যাকাণ্ডের আঙুল চলে যায় ইউনুসের দিকে। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাকে হত্যার দায় স্বীকার করেন ইউনুস এবং সহযোগীদের নাম প্রকাশ করে দেন।
সোমবার দুপুরে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুনের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন ইউনুস। হত্যার মিশনে নেতৃত্ব দেয়ায় ১০ হাজার টাকা ভাগ পেয়েছেন বলে আদালতকে জানান তিনি। পরে তার জবানবন্দি রেকর্ড করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালতের বিচারক।
এ ব্যাপারে বগুড়ার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) গাজিউর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, প্রথমদিকে এ হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছিল না। খুনিকে সনাক্ত করাও দুরূহ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু মায়ের জানাজায় অংশ না নেয়ায় ইউনুসকে নিয়ে সন্দেহ হয় পুলিশের। এ সন্দেহ থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হলে হত্যার রহস্য বেরিয়ে আসে।
তিনি জানান, হত্যার সময় মায়ের কাছে থাকা টাকার মধ্যে ১০ হাজার টাকা ভাগ পেয়েছেন বলে স্বীকার করেন ইউনুস। এ ঘটনায় ইউনুস ও তার এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
১ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম