রবিবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৮:০৪:২৩

পরীক্ষার ফি না দেয়ায় বাবাকে কুপিয়ে হত্যা!

পরীক্ষার ফি না দেয়ায় বাবাকে কুপিয়ে হত্যা!

বগুড়া : পরীক্ষার ফি না দেয়ায় বাবাকে হত্যা করেছে তারই ছেলে।  ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায়।  বিএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা না পেয়ে হাড়কিপটে বাবাকে গলা কেটে হত্যা করেন ছেলে আবু হাসান।  হত্যার রহস্য উদঘাটন হলো দীর্ঘ আট মাস পর।

রোববার দুপুরে বগুড়ার সরকারি আযিযুল হক কলেজের ছাত্র হাসান তার বাবাকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

গত বছরের ১০ জুন সন্ধ্যায় দুপচাঁচিয়া উপজেলার আটগ্রাম শাহ পাড়ায় নিজ বাড়ি থেকে হবিবর রহমান ধলুর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

বগুড়া জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানান, হাসান জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন, তার বাবা হবিবর রহমান ধলু ছিলেন হাড়কিপটে প্রকৃতির মানুষ।  সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সংসারে টাকা পয়সা খরচ করতেন না তিনি। ছেলের লেখাপড়ার কোনো খরচ দিতেন না।  নিজ উদ্যোগে টাকা সংগ্রহ করে এইচএসসি পাস করে হাসান বগুড়া সরকারি আযিযুল হক কলেজে বিএসসিতে ভর্তি হন।

হাসানের বরাত দিয়ে গাজিউর রহমান জানান, গত বছরের ১০ জুন বিএসসি প্রথমবর্ষ পরীক্ষার ফরম পূরণের শেষ তারিখ ছিল।  ওই দিন সকাল ৭টার দিকে আবু হাসান ফরম পূরণের জন্য তার বাবার কাছে দুই হাজার ৫শ’ টাকা চান।  তাকে মাত্র ৫০ টাকা দিয়ে কৃষি কাজের জন্য মাঠে চলে যান তিনি।  পরে আবু হাসান তার বাবার ড্রয়ার খুলে দুই হাজার ৫শ’ টাকা নিয়ে ফরম পূরণ করতে চলে যান।  সকাল ৯টার দিকে তার বাবা রক্ষিত টাকা না পেয়ে স্ত্রী ও বেড়াতে আসা বিবাহিতা মেয়েকে মারধর শুরু করেন।  তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেন।  পরে মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী পাশের গ্রামে তার বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন।

তিনি জানান, দুপুর ২টার দিকে আবু হাসান বাড়ি ফিরে কাউকে না পেয়ে নানার বাড়ি গিয়ে মা-বোনের কাছে বিষয়টি শোনেন।  এরপর সবার অগোচরে হাসান মই দিয়ে বাবার শয়নকক্ষে প্রবেশ করেন।  এ সময় তার বাবা ঘুমাচ্ছিলেন।  ঘরে প্রবেশ করে একটি হাসুয়া কাছে পেয়ে বাবার ঘাড়ে কোপ দিয়ে পালিয়ে যান তিনি।  দীর্ঘ সময় হবিবর রহমানের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেন।  সন্ধ্যায় পুলিশ এসে ঘরের দরজা ভেঙে তার লাশ উদ্ধার করে।

এএসপি জানান, ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় নিহতের পরিবার ধারণা করছিল, হবিবর রহমান স্ত্রী-সন্তানদের ওপর অভিমান করে আত্মহত্যা করেছেন।  এ ঘটনায় থানায় ইউডি মামলা দায়ের করা হয়।  ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়।

তিনি জানান, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ড উল্লেখ থাকায় রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে পুলিশ।  গত শনিবার নিহতের স্ত্রী, বিবাহিতা দুই মেয়ে এবং একমাত্র ছেলে হাসানকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।  জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে বাবাকে হত্যার কারণ জানায় হাসান।

রোববার দুপুরে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন আদালতে হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন হাসান।
৭ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে