শুক্রবার, ১০ জুন, ২০১৬, ০২:০২:৪৪

কবরের বাঁশের দেয়াল ধরে নির্বাক তাকিয়ে থাকে অবুঝ দুই শিশু

কবরের বাঁশের দেয়াল ধরে নির্বাক তাকিয়ে থাকে অবুঝ দুই শিশু

বগুড়া: সাইদুল মাত্র ৩৫ বছরের টগবগে যুবক। বাবা-মা, স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে বেশ ভালো চলে যাচ্ছিল তার দিন। সকালে অফিস সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরা এই ছিল তার নিত্য-রুটিন। চাকরি সময়ের পরে বৃদ্ধ বাবার সংসার দেখা শোনা করতেন। জমিতে যেতেন। গ্রামের মানুষের সাথে মিশতেন তাদের সাথে ভালো মন্দ বিষয়ে কথা বলতেন। এজন্য তার গ্রামের সবাই তাকে ভালোবাসতেন। পরিবার আত্মীয়-স্বজন, পড়শিদের ভালোবাসায় সিক্ত এই মানুষটিকে কেউ খুন করবে এ ধারণা কারোরই ছিল না। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি রাতে খুন হয় বগুড়ার শেরপুরের সাইদুল ইসলাম। সকালে গ্রামের একটি রাস্তায় তার গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়। তার পর কেটে যায় চার মাস। গ্রেপ্তার হয় না মূল হত্যাকারী। শত শত ক্রাইমের ভিড়ে চাপা পড়তে বসেছে সাইদুল হত্যার ক্রাইমও।

সরজমিন খোঁজ নিতে সাইদুলের বাড়িতে গেলে কাঁন্নায় ভেঙে পড়েন বাবা যুদ্ধাহত আনোয়ারুল ইসলাম এবং তার মা হালিমা খাতুন। চোখের পানি শুকিয়ে ফেরেছেন স্ত্রী রউফুন্নেসা রাসু। প্রতি রাতে এখনো বাবা ফেরার অপেক্ষায় জেগে থাকে সাইদুলের যমজ চার বছরের দুই মেয়ে সামিয়া ও মারিয়া। রাত শেষ হয়ে যায় তবুও চিপস নিয়ে বাবা আর বাড়ি ফেরে না। কবরের বাঁশের দেয়াল ধরে নির্বাক তাকিয়ে থাকে বুঝ না হওয়া দুই শিশু। অনেক দিন বাবা বলে ডেকেছে কবরের পাশে কিন্তু বাবা তাদের ডাকে কোন দিন সাড়া দেয়নি। সেজন্য কবরে গিয়ে বাবা বলে আর ডাকে না। ঘণ্টার পর ঘন্টা শুয়ে থাকা পিতার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে দুই যমজ শিশু। বাবা কেন তাদের ডাকে সাড়া দেয় না সে উত্তর দিতে পারে না স্ত্রী  রাসু।

সেও রাতের আঁধারে চোখের পানি ঝরাতে ঝরাতে পাথর হয়েছে। সাইদুল পরিবার পরিকল্পনার পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাকে খুনিরা কেন খুন করলো তার  ক্লু খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। পুলিশের দাবি খুনিদের শনাক্ত এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খুনের মূল পরিকল্পনাকারী পলাশকে গ্রেপ্তার করতে পারলেই খুনের ক্লু উদঘাটন হবে। কিন্তু চার মাস অতিবাহিত হলেও সেই মূল খুনীকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশের এই না পারা ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাইদুলের পিতা। সন্তান হত্যার এই ঘটনায় তিনি শেরপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলহাজ্ব উদ্দিন নিহত সাইদুলের মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে মাহবুবর রহমান নামের এক যুবককে গ্রেফতার করে। ৩রা ফেব্রুয়ারি আদালতে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দিতে মাহবুব হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে জড়িতদের নাম প্রকাশ করে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পলাশ নামের একজন মূল পরিকল্পনাকারী। মাহবুবের জবানবন্দির পর মামলা তদন্তে তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় বাদী আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে।

গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পেয়েই হাম্বু নামের আরো একজনকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে দেয়া হাম্বুর স্বীকারোক্তি এবং মাহবুবের স্বীকারোক্তি একই ধরনের হওয়ায় গোয়েন্দা পুলিশের দাবি খুনের সাথে জড়িতদের শনাক্ত করা গেছে। এখন মূল পরিকল্পনাকারী পলাশকে  গ্রেপ্তার করতে পারলেই খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটন হবে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফিরোজ জানান, ইতোমধ্যে চারজন আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলাম জানান, মূল ঘাতক আসামি পলাশ কে গ্রেপ্তারের সব রকম চেষ্টা চলছে।-এমজমিন

১০ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে