বুধবার, ০৬ জুলাই, ২০১৬, ০১:০৬:২২

‘তাবলিগে যাবার নামে ছেলে জঙ্গী হবে তা কখনো ভাবিনি’

‘তাবলিগে যাবার নামে ছেলে জঙ্গী হবে তা কখনো ভাবিনি’

জাতীয় ডেস্ক: ‘রাক্ষুসী যমুনার পেটে সব জমি যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে গেছি। অনেক কষ্টে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছি। চিল্লায় (তাবলিগ জামায়াত) যাবার নামে ছেলে জঙ্গি হবে তা কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি।‘
 
ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত ও নিহত জঙ্গি শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলের শয্যাশায়ী মা বৃদ্ধা আসিয়া বেগম এসব কথা বলেন।
 
গত (মঙ্গলবার) বিকালে বগুড়ার ধুনট উপজেলার বানিয়াজান চল্লিশপাড়া গ্রামের বাড়িতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘জঙ্গি হবে জানতে পারলে তাকে কখনও চিল্লায় যেতে দিতাম না। ছেলের এ ঘটনায় সকলের কাছে ক্ষমা চাই। পারলে তাকে ক্ষমা করে দিবেন। স্বামী ও বড় ছেলে নিরাপরাধ তাদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। আর ছেলের লাশটি ফেরত চাই।‘
 
তার মত গ্রামের অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, তাদের ধার্মিক, সৎ ও মেধাবী উজ্জ্বল নৃশংস জঙ্গি হতে পারে না।
 
মঙ্গলবার বিকালে বগুড়া শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ধুনট উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ি ইউনিয়নের বানিয়াজান চল্লিশপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, নিহত জঙ্গি শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলের বাড়ির সামনে গ্রামবাসীদের ভিড়। সাংবাদিকদের দেখে তারাও এগিয়ে আসেন।
 
যমুনা নদীতে কৈয়াগাড়ি গ্রামে বাড়িঘর ও আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব কৃষক বদিউজ্জামান প্রায় দু’বছর আগে ওই স্থানে টিনের বাড়ি করেন।
 
ভাতিজি টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজে নার্সিং ডিপ্লোমার ছাত্রী কেয়া আকতার জানান, বদিউজ্জামানের তিন ছেলের মধ্যে উজ্জ্বল সবার ছোট। কৈয়াগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক, ২০০৫ সালে গোসাইবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০০৭ সালে গোসাইবাড়ি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ২০১১ সালে একই কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।
 
এরপর বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে মাস্টার্সে ভর্তি হন। মাস্টার্সের ফরম ফিলাপ করলেও পরীক্ষা দেয়নি। উজ্জ্বল ডিগ্রি পাশ করার পরপরই ঢাকার আশুলিয়া থানার শাহজাহান মার্কেট এলাকার মাদারী মাদবর কেজি স্কুলে শিক্ষকতার চাকুরি নেয়।
 
পাশাপাশি লেখাপড়াও চালিয়ে যাচ্ছিল। আশুলিয়া এলাকায় বড় ভাই গার্মেন্টস শ্রমিক আসাদুল ইসলামের বাড়িতে থাকতো। চার মাস আগে আসাদুল গার্মেন্টসের চাকরি ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন।
 
তখন উজ্জ্বল আরেকটি বাসা ভাড়া নিয়ে চাকরি করছিলেন। প্রতি মাসে কিছু টাকা পাঠাতো। বাড়িতে এলে সকলকে পর্দা করতে এবং ঠিকমত নামাজ আদায় করতে পরামর্শ দিতেন।
 
মা বৃদ্ধা আসিয়া বেগম বলেন, ‘প্রায় ছয় মাস আগে উজ্জ্বল ঢাকায় চিল্লায় যাবার নামে বাড়ি থেকে বের হয়। পরবর্তীতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সে কিভাবে ও কখন জঙ্গি হয়েছে তা পরিবারের অজানা।
 
তিনি বলেন, ‘গত সোমবার সকালে টিভিতে ছবি দেখে তিনি ছেলের লাশ সনাক্ত করেন। বিকালে পুলিশ এসে তার স্বামী বদিউজ্জ্বামান ও ছেলে আসাদুল ইসলামকে থানায় নিয়ে যায়। মঙ্গলবার সকালে জানতে পারেন, তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।‘
 
অসুস্থ আসিয়া বেগম অবিলম্বে উজ্জ্বলের লাশ ফেরত ও স্বামী এবং অপর ছেলে আসাদুলের মুক্তি চান।
 
স্বজনরা সকলে একই দাবি করেন। এছাড়া তিনি তরুণ সমাজকে তার ছেলের মত জঙ্গি না হয়ে সঠিকভাবে লেখাপড়া ও বাবা-মার কথামত চলার উপদেশ দেন।
 
পার্শ্ববর্তী খোকসাবাড়ি গ্রামের শামীম আহমেদ জানান, উজ্জ্বল গোসাইবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে তার সহপাঠী ছিল। তিনি লেখাপড়ায় ভাল এবং সবসময় সৎভাবে চলাফেরা করতো। পুরো পরিবার হানাফী সম্প্রদায়ের হলেও সে আহলে হাদিস মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে যায়।
 
তিনি আরও জানান, উজ্জ্বল এত বড় জঙ্গি এবং এতগুলো মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করতে পারে তা এখনও তারা বিশ্বাস করতে পারেন না।
 
এদিকে বগুড়া ডিবি পুলিশ গত রোববার বিকালে শাজাহানপুর উপজেলার চুপিনগর ইউনিয়নের বৃ-কুষ্টিয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে জঙ্গি খায়রুল ইসলাম পায়েলের বাবা আবুল হোসেন ও মা পিয়ারা বেগমকে আটক করে। তাদের অফিসে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
 
ধুনট থানা পুলিশ সোমবার বিকালে ধুনটের ভাণ্ডা ন্ডারবাড়ি ইউনিয়নের বানিয়াজান চল্লিশপাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে জঙ্গি শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলের বাবা বদিউজ্জামান ও ভাই আসাদুল ইসলামকে আটক করে। তাদেরও দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
 
মঙ্গলবার সকালে তাদের চারজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
 
ধুনট থানার ওসি মিজানুর রহমান সংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন। বিকালে থানায় গিয়ে তিনিসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
 
বগুড়া ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর আমিরুল ইসলাম বলেন, নিহত জঙ্গি পায়েলের মা-বাবা ও উজ্জ্বলের বাবা-ভাইকে মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাদের দিয়ে লাশ সনাক্ত করানো হবে। এছাড়া তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।
 
দুটি পরিবার লাশের অপেক্ষায়:
ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত ও নিহত জঙ্গি শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল এবং খায়রুল ইসলাম পায়েলের মরদেহ এক নজর দেখতে এবং দাফন করতে দু’টি পরিবারের সদস্যরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
 
উজ্জ্বলের মা আসিয়া বেগম অবিলম্বে তার ছেলের লাশ ফেরত চেয়েছেন। একই দাবি করেছেন, পায়েলের বড় বোন হোসনে আরা বেগম।-যুগান্তর
৬ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে