বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১৬, ০১:০৮:৪০

এক বছর ধরে নিখোঁজ ছিল আহত ‘জঙ্গি’ হাসান

এক বছর ধরে নিখোঁজ ছিল আহত ‘জঙ্গি’ হাসান

প্রতীক ওমর: বগুড়ার স্থানীয় একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে রাকিবুল হাসান রিগ্যান। পরে এইচএসসি পাস করার পর মেডিকেলে ভর্তির জন্য কোচিংয়েও ভর্তি হয়। এই সময়েই তাদের বাসার এক ভাড়াটিয়ার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে জেএমবির দলে ভিড়ে।

২০১৫ সালের ২৬শে জুলাই বাড়ি থেকে বের হয়ে ফিরে আসেনি। পরদিন ২৭শে জুলাই তার মা রোকেয়া বেগম নিখোঁজ ডায়েরিও করেন। এরপর কেটে গেছে একবছর। এই সময়ে পরিবারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি সে।

গতকাল রাজধানীর কল্যাণপুরে একটি বাসার মেসে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আহত অবস্থায় ধরা পড়ে হাসান। এরপরই বিভিন্ন মিডিয়ায় ছবি দেখে এলাকাবাসী ও তার মা রোকেয়া আক্তার হাসানকে শনাক্ত করেন। রাকিবুল হাসান রিগ্যানের (১৯) বাড়ি বগুড়া সদরের জামিলনগরে। সে ওই এলাকার মৃত রেজাউল করিমের ছেলে। হাসানের মা রোকেয়া আক্তারকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

হাসানের মায়ের দেয়া তথ্যে জানা যায়, হাসান ২০১৩ সালে স্থানীয় করতোয়া মাল্টি মিডিয়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে এসএসসি পাস  করে। এরপর গত বছর বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর মেডিকেলে ভর্তির জন্য একটি কোচিংয়ে ভর্তি হয়। সেখানে হাসান মাসখানেক কোচিং করার পর ২০১৫ সালের ২৬শে জুলাই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।

ওদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাসান পুলিশকে জানিয়েছে, তার বাড়ি বগুড়ায়। তার পরিচয় পাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন মিডিয়ায় তার নাম এবং ছবি প্রচার হলে পরিবারে লোকজন তাকে চিনে ফেলে।

হাসানের মা জানান, তাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া মুহায়মিনুল হাসান শিহাব নামের এক যুবকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সে জেএমবিতে যায়। শিহাব বর্তমানে জেলে আছে। হাসানের মা রোকেয়া আক্তার নন্দিগ্রাম উপজেলা বিজরুল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত। তাদের আদিবাস বগুড়া শহরের ১৪নং ওয়ার্ডের ইসলামপুর হরিগাড়ি।

বছর দেড়েক আগে জামিলনগর এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করেছেন। এখন তারা জামিলনগরেই থাকেন। হাসানের বাবা রেজাউল করিম একবছর আগে হৃদরোগে মারা যান। এদিকে হাসপাতালে হাসান পুলিশকে জানিয়েছে, কল্যাণপুরের ওই বাসায় সে বাবুর্চির কাজ করতো। অনেক দিন ধরেই সে পরিবারের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

স্থানীয়রা জানান, সে মানুষের সঙ্গে খুব কম মিশতো। বগুড়া সদর থানার ওসি আবুল বাশার জানান, হাসানের মাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। হাসানের সঙ্গে আর কারা আছে তাদের বিষয়ে খোঁজ করা হচ্ছে। মো. রাকিবুল হাসান রিগ্যানের সিরিয়া যাওয়ার কথা ছিল।

গতকাল প্রথম প্রহরে তাজ মঞ্জিলে পুলিশের অভিযান শুরুর ঘণ্টাখানেক পর রাত পৌনে ২টার দিকে হাসানকে আটকের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সকাল ৯টার দিকে ওয়ার্ডে গিয়ে পুলিশ বেষ্টিত অবস্থায় হাসানকে শয্যায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়। তার পায়ে ও মাথায় জখমের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছিল সে নিচু স্বরে।

হাসান পুলিশকে বলছিল, কল্যাণপুরের ওই ফ্ল্যাটে এক মাস ধরে রয়েছে সে। শফিক নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে সে সেখানে ঢোকে। ওই ফ্ল্যাটে আরও ১০ জন থাকত। হাসান বলে, ওই ফ্ল্যাটে সে শুধু রান্নার কাজ করত।

পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথোপকথনের একপর্যায়ে হাসান বলে, তার সিরিয়া যাওয়ার কথা ছিল। হাসানের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে এসআই শাহজাহান বুঝতে পারেন আশপাশে সাংবাদিকও রয়েছেন। তখন পুলিশ সদস্যরা অন্য সবাইকে ওয়ার্ড থেকে বের করে দেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ফটকেও পুলিশ অবস্থান নেয়। ক্যামেরা নিয়ে কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। হাসানের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে উপস্থিত একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম কথা বলছে। একবার বলে সে পড়াশোনা করে, আবার বলছে, আমি পড়াশোনা করি না।

একবার বলে জেহাদ করতে সিরিয়া যাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার চুপ হয়ে যায়। গত ছয় মাস ধরে বাড়ির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না থাকার কথা হাসান জানিয়েছে বলে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান।-এমজমিন

২৭ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে