আনোয়ার হোসেন, চাঁপাই নবাবগঞ্জ : গুলশান হামলাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন জঙ্গি হামলায় অস্ত্র সরববরাহকারী হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চার ‘জঙ্গিকে’ গত সপ্তাহে গ্রেফতার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তবে তারা জেএমবি বা কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল না বলে দাবি করেছে তাদের পরিবার। বরং পরিবারগুলোর অভিযোগ, মাস দুয়েক আগে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এই চারজনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। গ্রেফতার হওয়া চার ব্যক্তির নামে থানায় কোনও মামলা নেই বলেও জানা গেছে।
গ্রেফতার হওয়া এই চারজন হলেন- আবু তাহের (৩৭), মিজানুর রহমান (৩৫), সেলিম মিয়া (৪৫) ও তৌফিকুল ইসলাম ওরফে ডা. তৌফিক (৩২)। নব্য জেএমবির কথিত ওই চার সদস্যের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। শিবগঞ্জ থানা সূত্রে জানা গেছে, ওই চারজনের কারও বিরুদ্ধেই থানায় কোনও মামলা নেই।
স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই চারজনই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ওই চারজন ‘কেতাল পার্টির’ অনুসারী ছিলেন। কেতাল পার্টির অনুসারীদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এরা মাথায় বড় বড় চুল ও মুখে দাড়ি রাখে। এও শোনা গেছে, ওই চারজন তালেবানের অনুসারী ছিল।
গ্রেফতারকৃত চারজনের একজন হাজারবিঘি চাঁদপুর আবু তাহের। তার স্ত্রী শাবানা বেগম জানান, ২ মাস ১০দিন আগে তার স্বামীকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন। এরপর থেকেই তার স্বামী নিখোঁজ ছিল।
তার দাবি, তাহের মাছ ও আমের ব্যবসা করতো। সে কোনও রাজনৈতিক দল বা জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। ২ নভেম্বর গণমাধ্যম ও এলাকাবাসী সূত্রে জানতে পেরেছেন তার স্বামীকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী হিসেবে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
তাহেরের বিষয়ে স্থানীয় আলী আকবর মাস্টার, মোশাররফ হোসেন, মুকলেসুর রহমানসহ আরও কয়েকজন জানান, তাহেরকে ছোটবেলা থেকেই তারা চেনেন। কখনোই মনে হয়নি সে কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো ও রোজা রাখতো। লেখাপড়া তেমন জানতো না। মৌসুমী মাছ ও আম ব্যবসায়ী ছিল। তবে ভেতরে ভেতরে কী করতো সে বিষয়ে তাদের জানা নেই।
ধোবড়া কলেজপাড়া এলাকার মিজানুর রহমানের স্ত্রী আয়েশা বেগম জানান, প্রায় আড়াই মাস আগে রাতে বাড়ি থেকে মিজানকে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ ।
আয়েশার দাবি, ‘আমার স্বামী আমের চারা তৈরি ও কৃষি কাজ করতো। সে কোনও রাজনৈতিক দল ও কোনও মতাদর্শের অনুসারী ছিল না। কেউ ষড়যন্ত্র করে তাকে ফাঁসিয়েছে।’ মিজান ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে বলে তার পরিবার ও আত্মীয় সূত্রে জানা গেছে।
আজমতপুর মোন্নাটোলা এলাকার সেলিম মিয়া সম্পর্কে এলাকার লোকজন জানিয়েছে, তিনি সোনামসজিদ স্থলবন্দরে পাথর শ্রমিকের কাজ করতেন। তার পরিবারের দাবি, সে কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল না।
তার ভাই শাজাহান জানান, ‘প্রায় আড়াই মাস আগে সেলিমকে রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন। তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকাবাসীও দেখেছে।’
মোবারকপুর ইউনিয়নের গোয়াবাড়ি চাঁদপুর এলাকার তোফিকুল ইসলাম ওরফে ডা. তোফিক এলাকায় বেশ পরিচিত মুখ। পেশায় একজন পল্লী চিকিৎসক। তিনি একটি স্থানীয় মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেন। এলাকাবাসীর দাবি, তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। স্থানীয় আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন।
তৌফিকের স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানান, ‘আমার স্বামী কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তার নামে কোনও মামলা নেই এবং তিনি কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি আগে কেতাল পার্টির অনুসারী থাকলেও দুই-তিন বছর আগেই ওই ধারা থেকে সরে এসেছেন। গোয়াবাড়ি চাঁদপুর এলাকার অনেকেই তালেবান মতাদর্শে বিশ্বাসী।’
শিবগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মো. সারোয়ার জাহান জানান, ঢাকার দারুস সালাম থানায় অস্ত্র আইনে গ্রেফতারকৃত চার জঙ্গির বিরুদ্ধে শিবগঞ্জ থানায় কোনও মামলা নাই। এমনকি পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো জেএমবির তালিকায় তাদের নাম নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘শিবগঞ্জ থানা পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগ ইতোমধ্যে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে।’
এদিকে শিবগঞ্জ থানার ওসি রমজান আলী, ‘এ ধরনের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে গোয়েন্দা পুলিশ বা পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যরা শুধু স্থানীয় পুলিশের কাছ থেকে ঠিকানা বা অন্যান্য তথ্য জেনে নেয়। অভিযানের বিষয়ে কিছু জানায় না। এই চারজনের গ্রেফতারের বিষয়েও আমাদের কিছু জানা নেই।’ -বাংলা ট্রিবিউন।
০৬ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম