চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুদিন আগে নিখোঁজ হওয়া দুই শিশু- সুমাইয়া খাতুন মেঘলা (৭) ও মেহজাবিন আক্তার মালিহার (৬) বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নামোশংকরবাটী ফতেপুর মহল্লা থেকে দুদিন আগে দুই শিশু নিখোঁজ হয়। মঙ্গলবার রাতে প্রতিবেশী ইয়াসিন আলীর বাড়ির একটি ঘর থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এলাকাবাসীর ধারণা, মুক্তিপণ আদায়ের জন্যই ওই দুই শিশুকে অপহরণ করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশের তৎপরতার মুখে শেষ পর্যন্ত তাদের হত্যা করে অপহরণকারীরা। অবশ্য পুলিশ তাৎক্ষণিক এই হত্যাকাণ্ডের কারণ জানাতে পারেনি।
এই ঘটনায় ওই বাড়ির মালিক ইয়াসিন আলীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নৃশংস এই ঘটনায় ওই এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া । ঘাতকদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নামোশংকরবাটী ভবানীপুর মহল্লার প্রবাসী মিলন রানার মেয়ে স্থানীয় ছোটমনি বিদ্যা নিকেতনের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন মেঘলা ও প্রতিবেশী আবদুল মালেকের মেয়ে একই স্কুলের নার্সারির ছাত্রী মেহজাবিন আক্তার মালিহা রোববার সকাল ১০টার পর বাড়ির বাইরে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়।
এরপর থেকে দুই শিশুর কোনো সন্ধান মিলছিল না। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুজির পর রোববার বিকালে তাদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়।
তখন থেকেই নিখোঁজ ওই দুই শিশুকে উদ্ধারে মাঠে কাজ করছিল পুলিশের একাধিক টিম। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে তেলীপাড়া মহল্লার জনৈক শম্ভুর মেয়ে গীতা রানী (১৮) নামের এক তরুণীকে আটক করে পুলিশ। তার দেয়া তথ্যর ভিত্তিতে জেলা শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালানো হয়।
নিখোঁজ দুই শিশুকে উদ্ধারে পুলিশের পক্ষ থেকে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। এছাড়া নিখোঁজ দুই শিশুর প্রয়োজনীয় সব তথ্য ও ছবি পাঠানো হয় দেশের সবকটি পুলিশ স্টেশনে।
অন্যদিকে নিখোঁজ দুই শিশুকে সীমান্ত পেরিয়ে কেউ যাতে ভারতে পাচার করতে না পারে, সেজন্য বিজিবির সহায়তাও নেয় পুলিশ। কিন্তু এতোকিছুর পরও তাদের সন্ধান মিলছিল না।
মঙ্গলবার দুপুর থেকে স্থানীয় এলাকাবাসী ওই এলাকার সন্দেহভাজন প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি শুরু করে। একপর্যায়ে সন্ধ্যায় একই গ্রামের ভ্যানচালক ইয়াসিন আলীর বাড়ি থেকে মেঘলা ও মালিহার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।
মুহূর্তের মধ্যে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার কয়েকশ' নারী-পুরুষ সেখানে ছুটে আসেন। খবর পেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলামসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে যান।
এসময় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এলাকার সাধারণ মানুষ। ঘাতকদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা।
পরে সদর থানা পুলিশ রাত ৭টার দিকে নিহত দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, এই ঘটনায় বাড়ির মালিক ইয়াসিন আলী, তার স্ত্রী তানজিলা বেগম ও ছেলের বউ লাকি খাতুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে হত্যার মোটিভ সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।
এদিকে নিহত দুই শিশুর পরিবারে চলছে মাতম। ফুটফুটে দুই শিশুকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন এলাকাবাসী। মেঘলা ও মালিহার স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে সেখানকার পরিবেশ।
মেঘলার মা কুলসুম বেগম মেয়ের শোকে কয়েকবার অচেতন হয়ে পড়েন। তাদের সান্ত্বনা দিতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি উপস্থিত অনেকেই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম জানান, স্থানীয়দের তথ্যর ভিত্তিতে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কী কারণে ও কীভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে তা তাৎক্ষণিক তিনি জানাতে পারেননি।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দ্রুত এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হবে। নৃশংস এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে।
১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম