চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শিবনগর এলাকায় যে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হচ্ছে, সে বাড়িতে লুকিয়ে থাকা জঙ্গি আবু আলীকে (৩২) স্থানীয়রা কখনও সন্দেহজনক কোনও কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে দেখেননি। তবে এলাকার বাইরে গিয়ে সে কী করত, সে ব্যাপারে তাদের কোনও ধারণা নেই। এলাকাবাসী ও তার পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
নিরাপত্তাহীনতার উদ্বেগে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলছেন, আবু পেশায় একজন মসলা বিক্রেতা। সে হাট-বাজারে পাটি বিছিয়ে মসলা বিক্রি করে থাকে।
ঘিরে রাখা বাড়িটি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে শিবগঞ্জ উপজেলার চককর্তি ইউনিয়নের কৃষ্ণ চন্দ্রপুর গ্রামে আবুর বাবা আবসার আলীর বাড়ি। এই বাড়িতে থাকেন আবুর মা ফুলশানা বেগম (৫০)। তিনি জানান, ‘আট বছর আগে উপজেলার আব্বাস বাজার এলাকার রুহুল আমিনের মেয়ে সুমাইয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় আবুর। তার দুই মেয়ের বড়টির বয়স ছয় বছর, আর ছোটটি চার বছর।’ এর মধ্যে বড় মেয়ে নানির কাছে থাকে বলে জানান আবুর মা।
ফুলশানা বেগম বলেন, ‘মাস দুয়েক আগে আবুর স্ত্রীর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। এই ঝগড়া নিয়ে সালিসও হয়। পরে আবুকে বাসা থেকে বের করে দেন তার বাবা আবসার আলী। ওই সময়ই শিবনগরের জেন্টু বিশ্বাসের বাড়িটি ভাড়া নেয় আবু।’
এলাকাবাসী জানায়, আবু পেশায় একজন মসলা বিক্রেতা। সে হাট-বাজারে পাটি বিছিয়ে মসলা বিক্রি করে আসছে। বাড়ির পাশের চাতরা ফাজিল মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সে পড়ালেখা করেছে ।
স্থানীয়রা বলছেন, আবু ছিল ‘কাতাল অনুসারী’। এই মতাদর্শের অনুসারীরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আগাম রোজা ও ঈদ পালন করে থাকেন। আবু সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখেই একদিন আগেই রোজা শুরু করত, ঈদ উদযাপন করত। তবে তার আচরণে স্থানীয়রা কখনও সন্দেহ করেননি যে সে জঙ্গি হতে পারে।
শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নের লাওঘাট্টা গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আবু মসলা বিক্রি করত। তাকে চককর্তি বাজারে পেঁয়াজ, মরিচ, ধনিয়া, হলুদসহ বিভিন্ন মসলা বিক্রি করতে দেখেছি। বাবার সঙ্গে ঝগড়ার কারণে সে আলাদা বাড়িতে থাকত, এটাও জানতাম।’
জঙ্গি তৎপরতায় আবু জড়িত ছিল কিনা, জানতে চাইলে মিজানুর বলেন, ‘আবু নামাজ পড়ত। সৌদি আরবের সঙ্গে মিলিয়ে রোজা-ঈদ পালন করত। কিন্তু জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে ও জড়িত ছিল কিনা, তা জানি না। এমনিতে আমাদের কখনও মনে হয়নি সে জঙ্গি।’
উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শিবনগর এলাকার একটি বাড়ি বুধবার (২৬ এপ্রিল) ভোর থেকে ঘিরে রাখে পুলিশ। বাড়িটিতে কাউন্টার টেরোরিজমের সদস্যরা তল্লাশি শুরু করতে গেলে বাড়ির ভেতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোঁড়া হয়। জবাবে পুলিশও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। তবে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
পরে বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে ঢাকা থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযান শুরু করেন সোয়াট টিমের সদস্যরা। অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন ঈগল হান্ট’। পরে রাত ৯টা ৫ মিনিটে অভিযানের বিরতি ঘোষণা করেন সিটিটিসি ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের (এসএজি) উপ পুলিশ কমিশনার প্রলয় কুমার জোয়ার্দার। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে ফের শুরু হবে এই অভিযান।
জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িটির ভেতর আবু বক্কর নামে এক জঙ্গি ও তার স্ত্রীসহ কয়েকজন থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন সিটিটিসির সদস্যরা। একটি আমবাগানের ভেতরে বাড়িটির অবস্থান। ভোরবেলা বাড়িটি ঘেরাও করার পরপরই কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সাধারণ লোকজনের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণের জন্য আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। বাংলা ট্রিবিউন
২৭ এপ্রিল ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি