চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্ত্রীকে তালাক না দিয়ে ১৮ বছর ধরে নিজ ঘরে জীবন পার করছেন দেলোয়ার হোসেন সেন্টু নামের এক দিনমজুরের। এমন আজব ঘটনাটি ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল সদর ইউনিয়নের আমজোয়ান গ্রামে।
সেন্টুর দাবি, প্রভাবশালী মাতব্বরদের সালিশের রায় নীরবে মাথা পেতে নিয়ে তিনি ও তার স্ত্রী অমানবিক এক সাজা পালন করে যাচ্ছেন। ১৮ বছর ধরে ঘরে থাকেন তার স্ত্রী সোফিয়া বেগম, আর তিনি থাকেন ঘরের বারান্দায়।
চোখের সামনে ছেলে শাহিন আঠারো বছর ধরে মায়ের সঙ্গে থেকেও মাতব্বরদের কারণে বাবার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারছে না।
সোফিয়া ও তার ছেলে শাহিনের দাবি, স্ত্রী-সন্তানের ভরণপোষণ চালাতে না পারাতেই এমন রায় দিয়েছেন মাতব্বররা। ১৮ বছর ধরে মাতব্বরদের রায় ভাঙতে না পেরে পাগলপ্রায় সেন্টু।
সোফিয়ার দাবি, মাতব্বরদের রায়ের কারণেই আজ আমার ও স্বামীর এমন দশা। সেন্টুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছোটবেলায় বাবা মকবুল মারা যান। তার পর থেকে অন্যের বাড়িতে কামলা খেটে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
গ্রামের একটি খাস জমিতে মাটির আঁচড়া ঘর করে করতেন বসবাস। ২০০০ সালের দিকে একই গ্রামের বিত্তশালী ইলিয়াস আলী মেম্বারের মেয়ে সোফিয়া খাতুনের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক হয়। সেই টানে পিতার ধনসম্পদ ত্যাগ করে স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে তার জীর্ণ কুটিরে এসে এক রাতে এসে অনশন শুরু করে সোফিয়া। কিছুতেই বাপের বাড়ি ফেরাতে না পেরে নিরুপায় হয়ে ওই রাতেই নওগাঁ আদালতে গিয়ে সোফিয়াকে বিয়ে করেন সেন্টু।
বিত্তশালী ইলিয়াস মেম্বার এ বিয়ে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি। ফলে অপহরণের অভিযোগে সেন্টুর বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। এতেও ক্ষান্ত হননি। কয়েক দফায় তাকে মারপিটও করেন। এতো কিছুর পরও সোফিয়া বাবা বাড়ি ফিরতে রাজি হননি।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সামান্য কথা কাটাকাটির ঘটনার জেরে গ্রাম্য সালিশ বসান ইলিয়াস। এতে অংশ নেন গ্রামের আলহাজ হারেজ উদ্দীন, নওশাদ, আব্দুস সাত্তার, তৎকালীন ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান প্রমুখ। তারা সোফিয়ার কথিত ভরণপোষণ না দেওয়া ও স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়ার কারণে এই মর্মে রায় দেন যে, সোফিয়া সেন্টুর ঘরেই থাকবে, কিন্তু সেন্টু কোনো দিন স্ত্রীর ওপর অধিকার খাটাতে পারবে না। এ রায় না মানা হলে সেন্টুকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে সোফিয়া বেগম বলেন, আমাদের মধ্যে তালাকের কোনো ব্যাপার ঘটেনি। আমার ভরণপোষণ না চালানোর জন্য সালিশদারেরা এমন অমানবিক সাজা দিয়ে রেখেছেন। সালিশদার হারেজ উদ্দিন জানান, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে তালাক হয়নি। স্ত্রীকে মারপিট ও ভরণপোষণ চালাতে না পারার কারণে ওই রায় দেওয়া হয়েছিল। ভেবেছিলাম পরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিল-মহব্বত হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে সোফিয়ার বাবা ইলিয়াস আলী বলেন, বিয়ের পর উভয় পরিবারের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। মামলায় আমার পরাজয়ও ঘটেছে। কিন্তু জামাতা সেন্টু গাঁজা সেবনকারী বিধায় তার সঙ্গে আমি এবং আমার পরিবার কোনোভাবেই চলাফেরা করি না। জামাই ও মেয়ে এক ছাদের নিচে বসবাস করেও পরবাসী জীবন কেন? জবাবে ইলিয়াস আলী বলেন, এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।
সাবেক মেম্বার হাফিজুর রহমান ও বর্তমান নাচোল ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম জানান, মরহুম বেলাল উদ্দিন চেয়ারম্যান তখন স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ নিষ্পত্তির ভার দিয়েছিলেন আমাদের ওপর। বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটি কার্যকর হয়নি।