মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম থেকে : স্বামী, নিকটাত্মীয় এবং শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে নারীরা জড়িয়ে পড়ছে জঙ্গিবাদে। বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হওয়া নারী জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সাম্প্রতিক সময়েও বেশ কয়েক নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া পুলিশি অভিযানে আত্মঘাতী হামলায় আহত কিংবা নিহত হয়েছে কেউ কেউ।
নারীদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়াকে দেশের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। নারীরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়াকে মারাত্মক হুমকি ও অশনি সংকেত মনে করেন সামরিক বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একটা সময় জঙ্গি বলতে শুধু পুরুষ বোঝাত। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ফোকাস ছিল পুরুষ। এখন জঙ্গিরা সন্দেহ এড়াতে এবং চলাচল নির্বিঘ্ন করতে নারীদের জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত করছে। এটাই তাদের একটি কৌশল।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কেস স্টাডি করে দেখা যায়-বেশির ভাগ নারীই নিকটাত্মীয়দের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হচ্ছে।’ পুলিশের বিশেষায়িত বিভাগ কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, ‘নারীরা আত্মীয়, বন্ধু এবং শিক্ষকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। শতকরা ৮০ শতাংশ নারী জঙ্গিই স্বামী কিংবা নিকটাত্মীয়দের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের নারীদের বেশির ভাগই ধর্মভীরু এবং স্বামী-ভক্ত। স্বামীরা ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দিয়ে যা-ই বলে সহজে বিশ্বাস করে নেয় তাদের স্ত্রীরা। এ দুই কারণেই জঙ্গি স্বামীরা সহজেই স্ত্রীদের প্রলুব্ধ করে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত করে। বিগত কিছুদিন ধরে সারা দেশে কয়েকটি জঙ্গি দম্পতি গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’
জঙ্গিবাদ গবেষক এবং জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব হাসান রফিক বলেন, ‘নারীরা তিনভাবে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হচ্ছে। তা হলো জঙ্গি পরিবারের নারী সদস্য জঙ্গিতে সম্পৃক্ত হয়, অনেকে স্বামীর মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনে সম্পৃক্ত হয় এবং অনেকে জঙ্গি পরিবারের ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার পর জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হচ্ছে।’ নারীকে জঙ্গিতে সম্পৃক্ত করার কৌশল জানতে কথা হয় বিগত সময়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও জিজ্ঞাসাবাদে ছিলেন এমন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে।
তারা জানান, কোনো নারীকে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার আগে কিছুদিন তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এরপর কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করে নারীকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়। জঙ্গি সংগঠনের ‘মগজ ধোলাইকারীরা’ প্রথম টার্গেট থাকে নামাজ, রোজা এবং দীনি কথায় নারীকে আকৃষ্ট করার। এরপর ধীরে ধীরে মগজ ধোলাই করে জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয় নারীদের। একজন বিবাহিত ব্যক্তি জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর সে স্ত্রীকে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। স্ত্রী যদি উদ্বুদ্ধ হয় তখন তাকে নিয়ে ‘হিজরত’ করে।
অবিবাহিত নারীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়। পরে তাদের বিয়ে করে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। চট্টগ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আহলে হাদিসের অনুসারী নারীদের বেশির ভাগই জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে। আহলে হাদিসের বাইরে অন্য কোনো মতাদর্শের নারীদের জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততা করা কঠিন।’ বিডি প্রতিদিন
২০ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি