চট্টগ্রাম: পুলিশে সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হয়। বিষয়টা আমার স্বামী বুঝেন। ২৪ ঘণ্টা আমি মোবাইল রিসিভ করি।
অফিসারদের দিক-নির্দেশনা দেই। বিগত সময়ে বেশকিছু ক্লু-লেস মামলার রহস্য উদঘাটন করেছি। আর এখন তো দায়িত্ব আরো বেড়ে গেছে।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানাধীন শিকলবাহা গ্রামে ১৯৭৮ সালের ৩ নভেম্বর জন্ম নেন মোছাম্মত্ মর্জিনা আক্তার মর্জু। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। মায়ের নাম জয়নাব বেগম, পিতা মরহুম মোহাম্মদ রফিক। ২০০৮ সালে ব্যাংকার আরিফুল আজমের সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নাজিরহাট শাখায় ম্যানেজার (অপারেশন্স) হিসেবে কর্মরত আছেন আরিফুল আজম। তাদের দুই সন্তান নুজহাত মার্জিয়া আজমি (৬), আজলান মালিক আবির (৩)।
ওসি মর্জিনা ২০১৩ সালে সুদানের দারফুরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনে সফলতায় পেয়েছেন ‘শান্তি পদক’। মাঠ পর্যায়ে পুলিশি তদন্তে দক্ষতা এবং সাহসিকতার জন্য তাঁকে গত ৩১ মার্চ মেডেল অব কারেজ ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয় ‘উইমেন পুলিশ অ্যাওয়ার্ড’। গত ১৭ মে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস-এর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেটিভ ট্রেনিং অ্যাসিসটেন্ট প্রোগ্রামের সিনিয়র ল’ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডভাইজার উইলিয়াম স্কট কর্টিজি ওসি মর্জিনাকে শুভেচ্ছা স্মারক দিয়ে সংবর্ধিত করেন।
বর্তমানে দেশের তৃতীয় নারী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোছাম্মত্ মর্জিনা আক্তার মর্জু। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) এই কর্মকর্তা ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল সদরঘাট থানায় যোগ দেন পরিদর্শক (তদন্ত) পদে। মাদক ও জঙ্গিবিরোধী অসংখ্য অভিযান চালিয়ে পেয়েছেন সফলতা। ২০১৬ সালের ২৬ মার্চ পদোন্নতি পেয়ে একই থানায় হয়েছেন অফিসার ইনচার্জ (ওসি)। বর্তমানে বাংলাদেশের একমাত্র নারী ওসি মর্জিনা আক্তার।
গত বছরের ৯-১৩ অক্টোবর স্পেনের বার্সেলোনা শহরে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশের ৫৪তম বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ পান ডিআইজি মিলি বিশ্বাস, সদর দপ্তরের দুজন এআইজি, ডিএমপির একজন এডিসি ও সিএমপির মর্জিনা আক্তার। মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শকদের মধ্যে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তিনি এ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।
সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে ১৭ মে দেশের প্রথম নারী ওসি হিসেবে দায়িত্ব পান ঢাকা মহানগর পুলিশের ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি হোসনে আরা বেগম। এরপর একই বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতে দ্বিতীয় নারী ওসি হিসেবে সিএমপিতে চান্দগাঁও থানার ওসি হিসেবে যোগ দেন রওশন আরা। এরপর নারী ওসি হিসেবে যোগ দেন মর্জিনা আক্তার মর্জু।
সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যান। মিশনে যাওয়ার ১৫ দিনের মাথায় পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পান মর্জিনা আক্তার। ২০১২ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সুদানের দারফুরে ছিলেন তিনি। দায়িত্ব পালন করেন হিউম্যান রাইটস অফিসার, মুভকন অফিসার ও সর্বশেষ জেন্ডার অফিসার হিসেবে।
ওসি মোছাম্মত্ মর্জিনা আক্তার মর্জু ১৯৯৩ সালে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। পড়ালেখার পাশাপাশি স্কাউট আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। গার্লস ইন স্কাউটিং বিভাগের প্রথম ব্যাচের একজন ছিলেন মর্জিনা, ছিলেন লিডার ট্রেইনার। অর্জন করেন উডব্যাজ। ১৯৯৫ সালে দ্বিতীয় বিভাগে এইচএসসি এবং ১৯৯৮ সালে চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১০ম স্থান অর্জন করে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত টানা তিন বছর চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ ছাত্রী সংসদের নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন মর্জিনা। ২০০৩ সালে চট্টগ্রাম সরকারি বিএড কলেজ থেকে ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বিএড) ডিগ্রি নেয়ার পর ২০০৩ সালে সারদা পুলিশ একাডেমিতে এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ২০০৪ সালে মর্জিনা বাংলাদেশ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষানবিশ এসআই হিসেবে কক্সবাজার সদর ও রামু থানায় কাজ করেন। চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর তাকে পদায়ন করা হয় কক্সবাজার জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায়।
ওসি মর্জিনা বলেন, ‘পুলিশে সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হয়। বিষয়টা আমার স্বামী বুঝেন। ২৪ ঘন্টা আমি মোবাইল রিসিভ করি। অফিসারদের দিক-নির্দেশনা দেই। বিগত সময়ে বেশকিছু ক্লু-লেস মামলার রহস্য উদঘাটন করেছি। আর এখন তো দায়িত্ব আরো বেড়ে গেছে।’-ইত্তেফাক
এমটিনিউজ২৪/টিটি/পিএস