মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম থেকে : কওমি মতাদর্শী ইসলামী দলগুলোর কাঁধে ভর করে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে দেশের আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে আলাদা একটি ইসলামী জোট গঠনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
নির্বাচনে এই ইসলামিক জোটের প্রার্থীদের সমর্থন দেবে আলোচিত এ সংগঠনটি। হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা অবশ্য শুরু থেকে সরাসরি রাজনীতি কিংবা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কথা অস্বীকার করে আসছেন। তবে বিগত উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হেফাজতে ইসলামের সমর্থন নিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করেন কিছু প্রার্থী।
তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট এবং যশোর থেকে হেফাজতে ইসলাম সমর্থিত তিনজন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিতও হয়েছেন। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, হেফাজতের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। হেফাজতে ইসলাম ইমানি আত্মশুদ্ধিমূলক সংগঠন।
হেফাজতের বিভিন্ন নেতারা যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে আছেন তাদের পৃথক একটি জোট করার সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, যারা ইসলামী রাজনীতি করেন তারা নিজস্ব ভাবনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন। হাক্কানি দলগুলো একটি প্লাটফর্মে আসতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সফলতা দেখতে পারবে। রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।
তিনি বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম একটি আধ্যাত্মিক সংগঠন। তাই রাজনীতিতে তাদের সম্পৃক্ততা কিংবা কোনো জোটকে সমর্থন দেওয়ার সম্ভাবনা নেই।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত কেউ কেউ রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। তবে হেফাজতের সঙ্গে জড়িত কেউ নির্বাচন করলে তাকে কখনো সমর্থন দেবে না হেফাজতে ইসলাম।’
তিনি বলেন, ‘হেফাজতের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কেউ কেউ নির্বাচিত হয়েছেন।’ হেফাজতে ইসলামের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে পরিচিত ও জনপ্রিয় হওয়া হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশকে রাজনীতির বাইরে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে কওমি শীর্ষ আলেমদের একটি অংশের।
তবে হেফাজতে ইসলামকে রাজনীতির বাইরে রাখলেও সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সিংহভাগ নেতা-কর্মীই কওমি মতাদর্শী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। এ নেতারাই চাইছেন কওমি মতাদর্শীদের একটি পৃথক জোট গঠন করে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে। যাতে সমর্থন থাকবে হেফাজতে ইসলামের। এ জোট গঠন করতে এক বছর আগেই প্রক্রিয়া শুরু করেন কয়েকজন শীর্ষ নেতা। এরই মধ্যে জোট গঠনের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে।
জোট গঠন প্রক্রিয়ায় রয়েছেন এমন একজন নেতা বলেন, কওমি মতাদর্শী দলগুলো নিয়ে একটি জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ, খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলনসহ ইসলামী ভাবধারার কমপক্ষে ১০টি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই জোটে থাকার সম্মতি দিয়েছে।
দেশে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হলেই এ জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এরই মধ্যে কওমি মতাদর্শী দলগুলোর অনেক নেতা বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত উঠান বৈঠক, কর্মী সমাবেশ করছেন। নির্বাচনী মাঠ তৈরি করছেন।
আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য কাজ করছেন এমন নেতাদের মধ্যে রয়েছেন— হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মুফতি এজাহারুল ইসলাম চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আলতাফ উদ্দিন, ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক ও ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা হাসনাত আমিনী এবং হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক মুফতি মোহাম্মদ তৈয়ব, মুফতি আজহার উদ্দিনসহ কমপক্ষে ২০ নেতা।
মুফতি এজাহারুল ইসলামের ছেলে ও হেফাজতে ইসলামের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক মুফতি হারুন চৌধুরী বলেন, ‘বাঁশখালী থেকে আমার বাবা আগেও নির্বাচন করেছেন। এবারও নির্বাচন করতে পারেন। সেটা স্বতন্ত্র কিংবা কোনো জোটের অধীনে হবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তিনি (মুফতি এজাহারুল) কওমি এবং হেফাজতে ইসলামের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাই তিনি নির্বাচন করলে হেফাজতে ইসলাম তাকে সমর্থন দেবে এটাই স্বাভাবিক।’ -বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসবি