মুহাম্মদ সেলিম : দেশে আঘাত হানার অপেক্ষায় ৮ রিখটার স্কেল মাত্রার ছয়টি ভূমিকম্প। সাম্প্রতিক সময়ের মৃদু, হালকা, মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পগুলো তীব্র ভূমিকম্পের ইঙ্গিত বহন করছে। এমন অভিমত ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে, একটি তীব্র ভূমিকম্পই ধ্বংসস্তূপে পরিণত করবে বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগকে। যার মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে প্রায় দেড় লাখ ভবন। হতাহত হবে কয়েক লাখ মানুষ।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) পরিচালিত ‘আর্থকোয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিং রিচার্স সেন্টারের (ইইআরসি) গবেষণা তত্ত্বাবধানকারী অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেশের ভূমিকম্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিন বছর গবেষণা করে ইইআরসি।
গবেষণায় দেখা যায়, এ অঞ্চলে আঘাত হানার অপেক্ষায় রয়েছে ৮ রিখটার স্কেলের ছয়টি ভূমিকম্প। হিমালয় বেল্টে অবস্থান হওয়ায় চট্টগ্রাম সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এসব ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল বলেন, ‘ঘন ঘন ভূমিকম্প তীব্র ভূমিকম্পের ইঙ্গিত বহন করে। তাই ভূমিকম্প-পরবর্তী সময়ে দুর্যোগ এড়াতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।’ ইইআরসির গবেষণায় বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্বপাশ দিয়ে মিয়ানমার সীমান্ত হয়ে দক্ষিণে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ ও উত্তরে ভারতের আসাম-মেঘালয় হয়ে হিমালয় অঞ্চল পর্যন্ত একটি ফল্ট লাইন রয়েছে। ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়ায় ওই ফল্ট লাইন অধিক সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাশ দিয়ে ওই ফল্ট লাইনটি যাওয়ার কারণে তীব্র ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে এ অঞ্চলে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার দুই কোটি মানুষ। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘ইন্দো-বার্মা-হিমালয়ান, ইউরেশীয় অঞ্চলে একাধিক ফল্ট লাইনের বিস্তার ও অব্যাহত সঞ্চালনের কারণে বাংলাদেশ এবং আশপাশ অঞ্চলটি বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় ভূকম্পন বলয় হিসেবে চিহ্নিত।
এ ছাড়া ভূ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য, ভূ-গঠন অনুসারে এ অঞ্চলের অবস্থান পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় ভূকম্পন বলয়ে। বিশ্বে সাধারণত ভূ-কম্পনপ্রবণ এলাকায় ৫০, ৭০, ১০০, ১৫০ বছর পরপর প্রবল বা শক্তিশালী মাত্রায় ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তি ঘটে। সাম্প্রতিক সময়ে মৃদু, হালকা, মাঝারি মাত্রার ভূকম্পনের কারণে এ অঞ্চলের ফল্ট লাইনগুলো নাজুক হয়ে পড়ছে। যা অদূর ভবিষ্যতে আরও প্রবল মাত্রায় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত বহন করছে।
১৯৭৯ সালে জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ সিসমিক জোনিং ম্যাপে চট্টগ্রামকে সবচেয়ে বিপদসংকুল অঞ্চলে বিবেচনা করে। অস্ট্রেলিয়ার ভূ-তত্ত্ব বিজ্ঞানী বলেন ‘মারাত্মক ভূমিকম্প ও সুনামির ঝুঁকিতে রয়েছে চট্টগ্রাম।’ আর ইইআরসি বলেছে, ভূমিকম্পের চরম ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম নগরীর ১ লাখ ৮২ হাজার ভবনের মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার ভবন।-বিডি-প্রতদিনি
১৬ এপ্রিল,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এএম