রবিবার, ০১ মে, ২০১৬, ০২:৩৯:৪৯

দেড় হাজার মামলা, বিচারক একজন

দেড় হাজার মামলা, বিচারক একজন

গাজী ফিরোজ: চট্টগ্রামের দুটি শ্রম আদালতে বিচারাধীন রয়েছে প্রায় দেড় হাজার মামলা। দুটি পৃথক আদালতে দুজন বিচারক (চেয়ারম্যান) থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন একজন। পাঁচ মাস ধরে একটি আদালতে বিচারক নেই। ফলে একজন বিচারককে দিয়েই চলছে দুটি আদালতের কার্যক্রম। এ ছাড়া দুটি আদালতের দুজন রেজিস্ট্রারের পদও দুই বছর ধরে শূন্য রয়েছে।
আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা বলেন, বিচারকশূন্যতা, মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতি, সমন জারিতে বিলম্ব, জবাব দাখিলে আইনজীবীদের বারবার সময় নেওয়া, প্রতিনিধিদের মতামত প্রদানে বিলম্বের কারণে শ্রম আদালতে বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন মামলার বিচার ঝুলে আছে।
চাকরিতে পুনর্বহাল, পাওনা আদায়, মালিক-শ্রমিক চুক্তির লঙ্ঘন, বেতন-ভাতার দাবি, ক্ষতিপূরণ আদায় ও ট্রেড ইউনিয়ন-সংক্রান্ত মামলা শ্রম আদালতে করা হয়। জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার একজন বিচারক শ্রম আদালতের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। প্রতি দুই বছর পর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয় ছয়জন করে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়।
আদালত সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম প্রথম শ্রম আদালতে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে নিষ্পত্তি ৫২টি মামলা হয়েছে, দ্বিতীয় শ্রম আদালতে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩২টি মামলা। বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে প্রথম শ্রম আদালতে ৯২৪টি এবং দ্বিতীয় শ্রম আদালতে ৫২১টি মামলা।
চট্টগ্রাম জেলা ছাড়াও চট্টগ্রাম প্রথম শ্রম আদালতের আওতায় রয়েছে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও চাঁদপুর জেলা। দ্বিতীয় শ্রম আদালতের আওতায় রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট।
চট্টগ্রাম প্রথম শ্রম আদালতের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার তারিকুল ইসলাম বলেন, মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিসহ নানা কারণে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। হিসাবরক্ষক পদের পাশাপাশি তিনি রেজিস্ট্রারের দায়িত্বও পালন করছেন।
দ্বিতীয় শ্রম আদালতের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার টিনা চৌধুরী জানান, মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিরা নিয়মিত উপস্থিত না থাকায় মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হয়।
জানতে চাইলে দ্বিতীয় শ্রম আদালতের মালিক প্রতিনিধি মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ কারণে আদালতের কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেননি।
প্রথম শ্রম আদালতের শ্রমিক প্রতিনিধি আজহারুল ইসলাম জানান, তিনি এখন শ্রমিক থেকে কর্মকর্তা হয়ে গেছেন। তাই যেতে পারছেন না। বিষয়টি লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।
শ্রম আদালতে মামলা পরিচালনাকারী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুখময় চক্রবর্তী জানান, মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতির কারণে বছরের পর বছর মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না।
আইনজীবীরা জানান, শ্রম আদালতে মামলা করার ৬০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হলে কী হবে, সে বিষয়ে আইনে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই।
চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে ২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেন সাবেক মিটার পরিদর্শক রঞ্জন কান্তি পাল। বিবাদীপক্ষ বারবার সময় চাওয়ায় মামলাটির বিচার ঝুলে আছে। জানতে চাইলে ওয়াসার আইনজীবী ফজলুল হক বলেন, এই মামলার ফাইল না দেখে এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না।
সিলেটের রুপাইছড়া রাবার বাগানের টেপার (কষ আহরণকারী) সজল দাশ ২০০৭ সালের ৪ ডিসেম্বর চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য চট্টগ্রাম দ্বিতীয় শ্রম আদালতে মামলা করেন। মামলা করার পর বাদী গরহাজির থাকায় ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মামলাটি খারিজ করে দেন আদালত। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে বাদী আদেশটি পুনর্বিবেচনার জন্য একই বছরের ৯ অক্টোবর আবেদন করেন। আদালত তাঁর আবেদনটি আমলেও নেন। কিন্তু মালিকপক্ষের কোনো সাক্ষী হাজির না হওয়ায় দুই বছর ধরে মামলাটি ঝুলে আছে বলে জানান বাদীর আইনজীবী এ কে এম মহসিন আহমেদ চৌধুরী। এই আদালতে পাঁচ মাস ধরে বিচারকের পদ শূন্য রয়েছে।-প্রথম আলো

১ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সুবজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে