মহিউদ্দীন জুয়েল, গাজী যুবায়ের, রাউজান থ: দিনের পর দিন স্ত্রীর অগোচরে পরনারীর সঙ্গে দিনযাপন। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা। সব কিছু যখন ফাঁস হয়ে যায় তখন প্রতিবাদে ফেটে পড়েন স্ত্রী এ্যানি। আর তার মুখ চাপা দিতেই নির্যাতন শুরু করে বখাটে স্বামী নাছির। এই নিয়ে থানায় মামলা দায়ের করার ঠিক একদিন পরই পাওয়া গেলো এ্যানির লাশ। পরকীয়া কেড়ে নিলো আরো একটি জীবন। চট্টগ্রামের রাউজানের এই ঘটনা নিয়ে এখন চলছে তোলপাড়। বখাটে স্বামী নাছিরের শাস্তি দাবি করেছে নিহত স্ত্রী এ্যানির পরিবারের লোকজনেরা।
পারিবারিক সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার দুপুরে চান্দগাঁও থানার ধুপপুল গোলাপের দোকান এলাকায় বাপের বাড়িতে ওই গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় নিহতের পিতা মনসুর আলম বাদী হয়ে চান্দগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছেন। রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ছামিদর কোয়াং গ্রামের আজিম ফকিরের বাড়ির ওমান প্রবাসী বাদশা মিয়ার ২য় পুত্র মোহাম্মদ নাছিরের সঙ্গে গত দুই বছর আগে বিয়ে হয় এ্যানির। এ্যানি চান্দগাঁও থানাধীন ধুপপুল গোলাপের দোকান এলাকার নুর মোহাম্মদ সওদাগরের বাড়ির মনসুর আলমের কন্যা। বিয়ের পর থেকে যৌতুক লোভী ও পরকীয়ায় আসক্ত স্বামী নাছির নববধূ এ্যানি আকতার (১৮)কে নানা ভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিলো। এমনকি নাছির বাসর রাতেও এ্যানির সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, তাদের দুই বছরের ঘর সংসারে প্রায় সময় নাছির বাইরে রাতযাপন করে স্ত্রী এ্যানিকে মানসিক যন্ত্রণা দিতো। কারণ হিসেবে স্থানীয় লোকজন বলেছেন, নাছির বিয়ের আগে থেকেই পার্শ্ববর্তী এক প্রতিবেশী প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে আসক্ত ছিল। তার বাবা-মা বিষয়টি জেনে ঘরমুখো করতে নাছিরকে বিয়ে করান। কিন্তু বিয়ের পর নাছিরের বখাটেপনা আরো বেড়ে যায়। দিনের বেলায়ও একান্তে সময় কাটাতো ওই প্রবাসীর স্ত্রীর বাড়িতে। এতে নাছিরের স্ত্রী এক প্রকার মানসিক যন্ত্রণায় অসহায় হয়ে পড়ে। হাজার আকুতি-মিনতি, সেবা ও ধৈর্য ধারণ করেও নিজ স্বামীর মন জয় করতে পারেননি। দিনের পর দিন স্বামী ছাড়া নিজ ঘরে চাপা কষ্ট সহ্য করে শ্বশুর- শাশুড়ির মন জয় করে দিন কাটিয়ে দিতো সহজ সরল গৃহবধূ এ্যানি।
এদিকে গত দুই মাস আগে স্বামীর এ নির্যাতন আর সহ্য করতে না পেরে স্ত্রী এ্যানি বাপের বাড়িতে চলে যায়। স্ত্রী চলে যাওয়ার পর নাছিরের বাবা-মা ও ভাই নাছিরকে পূত্রবধূ এ্যানিকে ঘরে আনতে চাপ সৃষ্টি করলেও নাছির এতে অনীহা প্রকাশ করে। স্ত্রীর প্রতি অবহেলার কারণ ও প্রতিকার করতে গেলে নিজ মাতা-পিতা ও ভাইয়ের ওপরও নাছির ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের ঘর থেকে বের করে দেবে বলেও হুমকি দেয়। এতে অসহ্য হয়ে গত ৯ই মে হুমকি ও পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে মাতলামিসহ নানা অভিযোগ এনে রাউজান থানায় বাদী হয়ে অভিযোগ দায়ের করেন নাছিরের পিতা বাদশা মিয়া। এই অভিযোগ দায়েরের পরদিন গত ১০ই মে মঙ্গলবার সকালে নাছিরের স্ত্রী এ্যানি আকতার বাপের বাড়িতে রহস্যজনকভাবে মারা যায়।
গত ১২ই মে বুধবার সরজমিন পরিদর্শনে গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ি রাউজানের নোয়াপাড়া ছামিদর কোয়াং গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গৃহবধূ এ্যানির রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। সবাই বলছে নাছিরের পরকীয়া, অবহেলা আর নির্যাতনের কারণে শান্ত সহজ সরল একটি মেয়ে আজ অকালে ঝরে গেল। নাছিরের বাবা-মাও নিজ পুত্রবধূর গুণের কথা সবার কাছে তুলে ধরেন। তারা বলেন, তাদের ছেলে নাছির পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে ফুলের মতো একটি মেয়ের জীবনটা নষ্ট করে দিলো। তার শান্তি হোক সেটা তারাও চাই। নিহত এ্যানির পিতা মনসুর আলী বলেন, আমার মেয়েকে নাছির বিয়ের পর থেকে যৌতুকসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রায়ই শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। এসব বিষয় আত্মসম্মানের কথা ভেবে মেয়ে আমাদের কাছে কম প্রকাশ করতো। তারপরও আমরা খবর পেয়ে অনেক বার সালিশ বৈঠক করে সমাধান করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। বখে যাওয়া মেয়ে জামাই নাছিরকে ঠিক করতে পারিনি।
তিনি বলেন, এক পর্যায়ে আমরা মেয়েকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসি। এমতাবস্থায় গত ১০ই মে সকালে আমি ও আমার স্ত্রী বেড়াতে গেলে নাছির আমাদের বাসায় এসে মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করে। এ বিষয়ে চান্দগাঁও থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মেয়েটা খুবই সহজ সরল স্বামীভক্ত ছিল। কিন্তু আজ আমার মেয়ের জামাইয়ের জন্য মেয়েকে হারালাম। আমি এর বিচার চাই। আপনারা এর বিচার করুন। এদিকে ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে নিহত এ্যানির স্বামী নাছির।-এমজমিন
১৫ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ