শুক্রবার, ২৭ মে, ২০১৬, ১২:৪৮:০৭

হেলপার থেকে দুর্ধর্ষ প্রতারক, অবশেষে যা হলো

হেলপার থেকে দুর্ধর্ষ প্রতারক, অবশেষে যা হলো

মহিউদ্দীন জুয়েল: ছিল গাড়ির হেলপার। সেখান থেকে দুর্ধর্ষ প্রতারক। কখনো ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা থানার বড় ওসি। ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে যাতায়াতকারী বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করতো বাবু। তারপর সেই ঠিকানার মানুষদের নাম ব্যবহার করে গত কয়েক মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করেছে এই প্রতারক। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ধরা পড়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে। ব্যবসায়ী সেজে বাবুকে টাকা দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে, বাসে চলাচলকারী সরকারি কর্মকর্তাদের সেবা করে সে কৌশলে ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করতো। কখনো গাড়ি বুকিংয়ের জন্য দেয়া মোবাইল নম্বর আর নামটি জেনে নিতো। ব্যস্‌! এরপর অসহায় মানুষদের মোবাইল করে কিংবা মামলা দায়েরের পর তা নিষ্পত্তির কথা বলে আদায় করতো লাখ লাখ টাকা।

দুর্ধর্ষ এই প্রতারক বাবুকে গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানা থেকে কৌশলে আটক করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোকতার হোসেনের কাছে প্রতারক বাবুর খবর আসে। এরপর তিনি সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডিবি) জাহাঙ্গীর আলম ও  পুলিশ পরিদর্শক শাহাদাত হোসেন খানকে তার অবস্থান জানার জন্য বলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা নিশ্চিত হন বাবু পতেঙ্গা এলাকায় এক লোকের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিকাল সোয়া ৩ টায় সাগর পাড়ের পতেঙ্গা বেড়িবাঁধ এলাকার জনৈক ইসমাইল মিয়ার ভাড়াঘরে হানা দেয়। সেখান থেকে ধরা পড়ে বাবু। তবে তার আসল নাম মোস্তাফিজুর রহমান নীরব।

সে নওগাঁর নেয়ামতপুর থানার চৌড়াপাড়া এলাকার সিরাজুল ইসলামের পুত্র। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, পতেঙ্গা এলাকার ইসমাইলের ভাড়াঘরেই সে বসবাস করে আসছে। আটকের সময় তার কাছ থেকে পাওয়া গেছে ২টি মোবাইল ও ৬টি সিম। যেগুলো ব্যবহার করে সে নানা অপকর্ম করে আসছিল। কিভাবে অপরাধ করতো প্রতারক বাবু? জানতে চাইলে সে বলে, কয়েক বছর ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী ঈগল পরিবহনের বাসের হেলপার হিসেবে কাজ করতো। বাসের হেলপার হিসেবে কাজ করার সুবাদে সে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম পরিচিতি ইত্যাদি ব্যবহার করার বিষয়টি রপ্ত করে। এরপর উদ্ধার হওয়া মোবাইল ও সিম ব্যবহার করে নিজেকে বিভিন্ন সময়ে ম্যাজিস্ট্রেট, অ্যাডভোকেট, দুদক কর্মকর্তা, ডিজিএফআই কর্মকর্তা, এনএসআই কর্মকর্তা, সিআইডি কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী ব্যক্তি পরিচয় দিয়ে টাকা আদায় করে। তার কাছে এইরকম অন্তত ৫০০ থেকে ১০০০ জনের মোবাইল নম্বর ও পদবি লেখা রয়েছে। জব্দ হওয়া ৪টি সিমের মাধ্যমে পৃথক বিকাশের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেয়ার কথা বলতো।

কেবল তাই নয়, বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপন, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি ইত্যাদি থেকে সংশ্লিষ্ট অফিস বা কর্মকর্তার নাম, পদবি, আইডি নম্বর, ঠিকানা ইত্যাদি সংগ্রহ করে নিজের উক্ত পরিচয় দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে আসছিল। এই বিষয়ে বাবু আরো বলেন, আমি কৌশলে ভিআইপি নম্বর ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা সেবা প্রত্যাশী ব্যক্তির কাছে বলতাম জনাব আমি অমুক বিচারক। আপনাকে নারী শিশু মামলায় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই সমঝোতা করতে চাইলে ০১৬৩০-৮১৮২৭৮, ০১৬৩০-৯৫৬৫৯৮, ০১৭৫৯-৭১০০০০ ও ০১৮৬৪-০৯৭৬৩১ নম্বরে যোগাযোগ করুন। যারা যোগাযোগ করতো তাদের কাছ থেকে সে বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদায় করতো। জিজ্ঞাসাবাদে বাবু ইতিমধ্যে জানিয়েছে, চট্টগ্রাম শহরের অন্তত ৩০/৪০ ব্যক্তিকে এমন ফাঁদে ফেলে সে গত ৩ মাসে কয়েক লাখ টাকা আদায় করেছে। এসব ব্যক্তি নগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে পুলিশ কৌশলে গতকাল এক ব্যবসায়ী সেজে টাকা দেওয়ার কথা বলে আটক করে প্রতারক বাবুকে।-এমজমিন

২৭ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে